Image description

সিলেটের ভোলাগঞ্জে শত কোটি টাকার পাথর লুটের ঘটনা দেশব্যাপী আলোড়ন তুললেও জড়িতদের শনাক্ত বা আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনিক উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। বিষয়টি নিয়ে এখনও ‘ভাবনা’ পর্যায়ে আটকে আছে প্রশাসন। নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি তুলেছেন পরিবেশকর্মীরা। রাজনৈতিক দলগুলো ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা অস্বীকার করলেও স্থানীয় পর্যায়ে প্রভাবশালী মহলের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে।

গত কয়েকদিনে সিলেটের সাদা পাথর এলাকায় লুট হয়েছে শত কোটি টাকার খনিজ সম্পদ। তবে এটি প্রথম ঘটনা নয়—এর আগেও জাফলং, বিছানাকান্দি, লুভাছড়াসহ বিভিন্ন পাথর কোয়ারি ও পর্যটন এলাকায় ঘটেছে লুটের ঘটনা। প্রতিবারই এসব ঘটনায় অভিযোগ ওঠে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে।

সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনায় চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও দলের নীতি-পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সভাপতি সাহাব উদ্দিন এবং সিলেট জেলার সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহ পরানকে সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে বিএনপি। ২০২৪ সালের ১৪ অক্টোবর সরকারি পাথর ও বালু লুটের অভিযোগের প্রেক্ষিতেও রফিকুলের পদ স্থগিত করা হয়। পাথর লুটের পেছনে রাজনৈতিক শীর্ষ নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি প্রভাবশালী কিছু মহলের সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত মিললেও স্থানীয় রাজনীতিবিদরা বলছেন, এতে দলীয় কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সিলেট মহানগর আমীর মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দলীয় লোকজন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। যদি দলের নাম ভাঙিয়ে এ কাজ করে, তাহলে প্রশাসন যেন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়। এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনকে সহায়তা করবো।’

সিলেট মহানগর বিএনপি সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, ‘আমাদের দেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জড়িতদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’

প্রশাসনের নীরবতা ঘিরে পরিবেশকর্মীদের ক্ষোভ তীব্র হয়েছে। তাদের অভিযোগ, এত বড় ঘটনার পরও কোনো তদন্ত কমিটি গঠন না হওয়া প্রশাসনের ব্যর্থতার প্রমাণ।

পরিবেশ সংগঠক আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘এখানে শত কোটি টাকার লুট হয়েছে। সেই টাকা বিভিন্ন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। স্থানীয় সরকার এর ভাগ পেয়েছে, নয়তো কেন প্রশাসন দায়িত্ব পালন করেনি?’

সিলেট টুরিস্ট ক্লাব সভাপতি মকসুদুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করলে বেড়িয়ে আসবে কারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত।’

অভিযোগের জবাবে সিলেট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নতুন কিছু করার আছে কিনা, তা নির্ধারণ করবো। এজন্য আগামীকাল সভা ডাকা হয়েছে। নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে এ কার্যক্রম বন্ধ করা সম্ভব হবে।’

এদিকে পর্যটকরা জানিয়েছেন, সাদা পাথর আগের মতো আর দেখা যায় না। দেশের সম্পদ লুট হয়ে যাচ্ছে, অথচ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাদের প্রশ্ন—পাথর লুটে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে এখনও কেন নীরব প্রশাসন?