
হাসপাতালের পার্কিংয়ের একটি প্রাইভেট কার থেকে যে দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁরা নোয়াখালীর চাটখিল থেকে হাসপাতালটিতে গিয়েছিলেন চিকিৎসাধীন এক শিশুকে আনতে। নোয়াখালী থেকে গাড়িতে করে রওনা দেওয়ার সময় তাঁদের সঙ্গে গাড়িটির মালিকও ছিলেন। তবে তিনি পরে বাসে করে নোয়াখালীতে ফেরেন।
রাজধানীর মৌচাকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পার্কিংয়ের একটি প্রাইভেট কার থেকে যে দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁরা নোয়াখালীর চাটখিল থেকে হাসপাতালটিতে গিয়েছিলেন চিকিৎসাধীন এক শিশুকে আনতে। নোয়াখালী থেকে গাড়িতে করে রওনা দেওয়ার সময় তাঁদের সঙ্গে গাড়িটির মালিকও ছিলেন। তবে তিনি পরে বাসে করে নোয়াখালীতে ফেরেন। গাড়িটির মালিক জোবায়ের আল মাহমুদ প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
নিহত দুজন হলেন নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার রামনারায়ণপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আবদুল হাকিমের ছেলে মোহাম্মদ মিজান ও একই উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নের লটকরিয়া গ্রামের খামারবাড়ির আবু তাহেরের ছেলে জাকির হোসেন। এর মধ্যে জাকির হোসেন প্রাইভেট কারটির চালক।
যতবারই ট্র্যাক করছি, গাড়ি দেখি হাসপাতালের পার্কিংয়ে। উপায় না দেখে পরদিন জাকিরের নম্বর সংগ্রহ করে তাঁকে ফোন দিই। তিনিও ফোন ধরেননি। এরপর যাঁদের রোগী আনতে গেছেন, তাঁরাও বেশ কয়েকবার ফোন দেন। কিন্তু মিজান-জাকিরের সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ করা যায়নি।
জাকির ও মিজান বন্ধু বলে জানান প্রাইভেট কারটির মালিক জোবায়ের আল মাহমুদ। মুঠোফোনে জোবায়ের জানান, তিনি তাঁর স্ত্রীর বড় ভাইকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে শনিবার রাতে ঢাকা যান। এ সময় গাড়িতে জাকিরের সঙ্গে তাঁর বন্ধু মিজানও উঠেন। মিজান প্রতিবেশী এক শিশুকে হাসপাতালটি থেকে নিয়ে আসতে গিয়েছিলেন। স্ত্রীর বড় ভাইকে বিমানবন্দরে নামিয়ে দেওয়ার পর রোববার ভোরে বিমানবন্দর থেকে তাঁরা গাড়ি নিয়ে মালিবাগ এলাকায় পৌঁছান। এরপর জাকির তাঁকে মালিবাগ থেকে নোয়াখালীর একটি বাসে তুলে দেন।
জোবায়ের আল মাহমুদ বলেন, ‘বিদায় দেওয়ার সময় জাকির বলেছেন, বেলা ১১টার দিকে রোগীকে ছাড়পত্র দেবে, ততক্ষণ তাঁরা দুজন গাড়িতেই ঘুমাবেন। আমি পৌনে ১১টার দিকে জাকিরকে ফোন দিয়েও পাইনি। পরে রাত আটটা পর্যন্ত আরও কয়েকবার ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেছি, তিনি আর ফোন ধরেননি।’

ফোন না ধরায় জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে গাড়িটির অবস্থান দেখেন জানিয়ে জোবায়ের বলেন, ‘যতবারই ট্র্যাক করছি, গাড়ি দেখি হাসপাতালের পার্কিংয়ে। উপায় না দেখে পরদিন জাকিরের নম্বর সংগ্রহ করে তাঁকে ফোন দিই। তিনিও ফোন ধরেননি। এরপর যাঁদের রোগী আনতে গেছেন, তাঁরাও বেশ কয়েকবার ফোন দেন। কিন্তু মিজান-জাকিরের সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ করা যায়নি।’
এর মধ্যেই গতকাল সোমবার বেলা দুইটায় রমনা থানা থেকে পুলিশ তাঁকে ফোন দেয় বলে জানান জোবায়ের আল মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘পুলিশ জানায় গাড়িতে দুজনের লাশ পড়ে আছে, দ্রুত ঢাকায় যেতে। আমি দুজনের পরিবারকে বিষয়টি জানিয়ে তাঁদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিই।’
তিন মাস ধরে জাকির তাঁর গাড়িটি চালাচ্ছেন জানিয়ে জোবায়ের আল মাহমুদ আজ সকাল সাড়ে আটটায় প্রথম আলোকে বলেন, তিনি রমনা থানায় রয়েছেন। দুজনের লাশ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে। বেলা ১১টার দিকে লাশ দুটি তাঁদের হস্তান্তর করার কথা রয়েছে।
নিহত মিজানের প্রতিবেশী ও চাটখিলের রামনারায়ণপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোবারক উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে মিজান ছিলেন সবার বড়। ড্রেজার (খননযন্ত্র) চালিয়ে ও মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন মিজান। তিনি অবিবাহিত।