Image description

গাজায় কর্মরত সাংবাদিকরা সরাসরি টার্গেটের শিকার হচ্ছেন, এমনকি তাদের নাম ইসরায়েলি বাহিনীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে যাতে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা যায়—গাজা যুদ্ধ কভার করা এক সাংবাদিক এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর মেহের নিউজের।

গাজার পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাওয়ায় স্থানীয় সাংবাদিকরা অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে খবর সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৭০ জন সাংবাদিক ও মিডিয়া কর্মীকে হত্যা করেছে।

রবিবার ইসরায়েলি বাহিনী আল-জাজিরার পাঁচজন কর্মীকে হত্যা করেছে, যাদের মধ্যে ছিলেন আল-জাজিরা প্রতিবেদক আনাস আল-শরীফ ও মোহাম্মদ কারাকা, ফটোগ্রাফার ইব্রাহিম জাহের ও মোহাম্মদ নোফাল। এই হামলাটি গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের বাইরে তাদের মিডিয়া টেন্টে সরাসরি চালানো হয়েছিল। এই মর্মান্তিক ঘটনা প্রমাণ করে সাংবাদিকদের ওপর বাড়তে থাকা প্রাণঘাতী হুমকিকে, যারা চলমান সংকট কভার করার চেষ্টা করছেন।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতির বাস্তবতা বোঝাতে গাজায় কর্মরত একজন স্থানীয় সাংবাদিকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।

গাজার যুদ্ধ নথিবদ্ধ করা ফটোসাংবাদিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মোহাম্মদ আসাদ মেহের নিউজ এজেন্সিকে বলেন, দুই বছর আগে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই সাংবাদিকরা এমন সব প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন যা বিশ্বের কোনো যুদ্ধ ফটোগ্রাফার আগে কখনো দেখেননি। 

তিনি বলেন, আমাদের কাছে চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত যানবাহন ও জ্বালানি নেই, নিরাপত্তা সরঞ্জাম নেই—যেসব বুলেটপ্রুফ ভেস্ট আমরা ব্যবহার করি, সেগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ। আমাদের সরাসরি টার্গেট করা হয়, সাংবাদিকদের নাম সেনাবাহিনীর তালিকায় রাখা হয় পরিকল্পিত হত্যার জন্য। কেউ কেউ ‘রেড জোন’-এ টার্গেট হয়েছেন, আবার কেউ রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময় গুলিতে নিহত হয়েছেন।

আসাদ আরো জানান, তাদের বাড়ি ও অফিস ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, ক্যামেরা ও অন্যান্য সরঞ্জাম নষ্ট হয়েছে। সীমান্ত বন্ধ থাকার কারণে ক্ষতিপূরণের কোনো সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের পাশাপাশি, কখনো কখনো যে মোবাইল ফোন দিয়ে খবর পাঠানোর চেষ্টা করি, তার ব্যাটারি শেষ হয়ে আসে, সবসময় চার্জ দেওয়ার প্রয়োজন হয়। আমরা যতটুকু সম্ভব কাজ করার চেষ্টা করি, কিন্তু অনেক ঘটনায় পৌঁছানো সম্ভব হয় না। অসংখ্য হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে যা আমরা নথিভুক্ত করতে পারি না, কারণ তীব্র গুলিবর্ষণ ও দখলদার বাহিনীর আরোপিত সম্পূর্ণ অবরোধে ক্যামেরা দিয়ে সেগুলো ধারণ করাই সম্ভব হয় না।

সবশেষে তিনি বলেন, গাজায় যুদ্ধ থামাতে ও সাংবাদিকদের সাহায্য করতে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের অবশ্যই গাজায় আসতে হবে। দূর থেকে আমাদের দিকে তাকিয়ে সংহতি জানানো যথেষ্ট নয়, এটা এখানে পরিস্থিতি বদলাতে পারে না। দখলদার বাহিনী পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ চালানোর ও গাজা উপত্যকার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। তাই আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের গাজায় আসা প্রয়োজন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এখানকার সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।