Image description
 

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের সিদ্ধেশ্বরপুর গ্রামে শনিবার (৯ আগস্ট) নিজ ঘর থেকে রাফি আহমেদ (২৮) নামে এক সাবেক ছাত্রদল নেতার গলাকাটা লাশ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।  এ ঘটনায় তার ছোট ভাইকে (১৬) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ৫০০ টাকা না দেয়ায় ক্ষোভের কারণে নিজের ছোট ভাই ঘুমের মধ্যে তাকে কুপিয়ে খুন করেছে।  সোমবার (১১ আগস্ট) মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

নিহত রাফি আহমেদ ছিলেন রহিমপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি। তিনি মুন্সীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জব্বারের ভাতিজা ও ছত্তার মিয়ার ছেলে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ৯ আগস্ট সকালে নিজ ঘরে রাফির গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়।  ঘটনার পরপরই পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং প্রাথমিকভাবে হত্যার কারণ ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে তদন্ত শুরু করে। 

পুলিশ জানিয়েছে, গোপন সোর্স, তথ্য প্রযুক্তি, এলাকাবাসীর বক্তব্য এবং আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় নিহতের ছোট ভাইকে (বয়স ১৬) সেদিনই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। পরবর্তীতে নিহতের স্ত্রী এবং আশেপাশের মানুষের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।  জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রোববার (১০ আগস্ট) সে তার ভাইকে ঘুমের মধ্যে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে। 

হত্যার কারণঃ 

 

জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ গত ৮ আগষ্ট রাত ৮টার দিকে রাফির কাছে সে ৫০০ টাকা চায়।  রাফি ছোট ভাইকে টাকা না দিয়ে গালিগালাজ এবং দুর্ব্যবহার করে।  এই ঘটনায় বড় ভাইয়ের উপর ক্ষিপ্ত হয়।  পরের দিন শনিবার (৯ আগস্ট) সকাল ৭ টার দিকে ঘুম থেকে উঠে ঘাতক ছোট ভাই দেখে তার মা বাড়িতে নেই।  বাড়িতে স্ত্রী না থাকায় সেদিন রাফির ঘরের সব দরজাও খোলা ছিল।  বাড়িতে কেউ নেই আর রাফি ঘুমিয়ে ছিল- এই সুযোগে আগের রাতের ঘটনায় ভাইয়ের উপর রাগের বশবর্তী হয়ে খাটের নিচে থাকা ধারালো দা দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় রাফির ঘাড়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করে।  পরবর্তীতে ঘাতক ছোট ভাই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা বেসিনে ধুয়ে পরিস্কার করে পুনরায় খাটের নিচে রেখে দেয় এবং তার পরনে থাকা রক্তমাখা লুঙ্গিও খাটের নিচে রেখে দেয়।  ঘটনার পর সে বাড়ি থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে থাকে।

পুলিশ জানিয়েছে, তবে শুধু এটাই হত্যাকাণ্ডের পেছনে একমাত্র কারণ নয়।  রাফির বাবার স্বপ্ন ছিল ছোট ছেলে মাদরাসায় পড়াশোনা করবে, আলেম হবে।  কিন্তু ছোট ছেলে পড়াশোনার প্রতি উদাসীনতা ছিল।  রাফিদের বাবা মারা যাওয়ার পর বড় ভাই হিসেবে রাফিই ছিল ছোট ভাইয়ের অভিভাবক। রাফি চাইতো তার ছোট ভাই বাড়িতে না থেকে মাদরাসায় থেকে পড়াশোনা করবে। কিন্তু তার ভাই মাদরাসায় না গিয়ে বাড়িতেই বেশি থাকত। এসব কারণে অভিভাবক হিসেবে বড় ভাই রাফি প্রায়ই তার ছোট ভাইকে শাসন করত। কিন্তু বড় ভাইয়ের শাসন সে মেনে নিতে পারেনি। 

আবার, নিহত বড় ভাই রাফি পরিবারের অমতে প্রেম করে বিয়ে করে। এই বিয়েতে রাফির পরিবার বা আত্মীয় স্বজন কারোরই মত ছিল না। বিয়ের পর থেকে এই বিষয়কে কেন্দ্র করে রাফির স্ত্রীর সঙ্গে মা ও ভাইয়ের কিছু টানাপোড়নের তথ্যও পাওয়া যায়। বিয়ের এতদিনেও যেটা স্বাভাবিক হয়ে উঠেনি। প্রায়ই দেবর-ভাবি এবং ভাইয়ের সঙ্গে পারিবারিক অশান্তির তথ্য পাওয়া যায়।  সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়গুলো নিয়ে বড় ভাইয়ের উপর ক্ষোভ বাড়তে থাকে।  যেটা শেষ পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডে গড়ায়।