Image description

প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়সহ সরকারি অনেক দপ্তর ও সংস্থায় এখনো রাজত্ব করছেন পতিত শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর শীর্ষ পদগুলোতে পরিবর্তন হয়েছে সামান্যই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে হাসিনার নিয়োগকৃত অধিকাংশ কর্মকর্তাই রয়ে গেছেন। তারা জোটবদ্ধ এবং নিজেদের মধ্যে কিছুদিন পরপর গোপন বৈঠকও করেন, যেন তারা সুযোগের অপেক্ষায় আছেন। এ অবস্থায় সচিবালয়ে শেখ হাসিনার পক্ষে সহসাই ‘আমলা বিদ্রোহ’ এবং নির্বাচন বানচালের আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অনুসারী আমলারা ‘জনতার মঞ্চ’ নাম দিয়ে আন্দোলন করেন এবং একপর্যায়ে সচিবালয়ে ‘আমলা বিদ্রোহ’ হয়। তারই পুনরাবৃত্তির আলামত দেখা যাচ্ছে পতিত সরকারের সুবিধাভোগীদের মধ্যে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিভিল প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বর্তমানে এমন ৪৬ জন সচিব ও অতিরিক্ত সচিব রয়েছেন, যারা ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের কট্টর সমর্থক। এদের কেউ কেউ আওয়ামী পরিবারের সন্তান, জামাতা কিংবা আত্মীয়স্বজন। একই সঙ্গে এরা দুর্নীতিগ্রস্ত কিংবা পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ফ্যাসিস্ট সরকারের সমর্থক ও চরম সুবিধাভোগী এমন ১১ জন সচিব আছেন, যারা ওএসডি হিসেবে চাকরিতে বহাল আছেন। দুর্নীতিগ্রস্ত এসব সচিব বিপুল অর্থবিত্তের মালিক। এরা অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন দায়িত্বে ফিরে আসার চেষ্টা-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের অনেকেই ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করতেন।

প্রশাসনে তাদের অতীত কর্মকাণ্ড দলদাস প্রকৃতির। আওয়ামী লীগের এজেন্ডার বাইরে কিছুই তারা বুঝতেন না। এদের অবিলম্বে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো না হলে এরা রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বশীভূত করে চোরাই পথে আবার ফিরে আসতে পারে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ভোটের কারিগর আমলাদের অবসরে পাঠানো হয়েছে কিন্তু ২০২৪-এর ভোটের দায়িত্বে যারা ছিলেন, তারা এখনো বহাল আছেন। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে ২০২৬-এর নির্বাচন পরিচালনা করা সহজ হবে না। কারণ তারা সচিবালয়সহ অন্যান্য সরকারি দপ্তরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন। তার কিছু কিছু আলামত দৃশ্যমান হচ্ছে।

গণঅভ্যুত্থানের পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট-পরবর্তী এক বছরে উচ্চপদে নিয়োগ ও পদোন্নতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পদলেহী ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তারাই সচিব পদে বেশি পদোন্নতি পেয়েছেন। হাসিনা সমর্থক সচিবদের অপসারণের জন্য ‘জুলাই ঐক্য’, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এবং ‘বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা ঐক্য’সহ বিভিন্ন সংগঠন দাবি জানালেও এরা বহালতবিয়তে দায়িত্বে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। সরকারের অন্তত চারজন উপদেষ্টা আছেন, যারা তাদের প্রটেকশন দিয়ে যাচ্ছেন।

সচিবালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে শেখ হাসিনা থাকাকালে যেসব কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত সচিব হন, বর্তমান সরকারের আমলে তাদেরই পদোন্নতি দিয়ে সচিব করা হয়েছে। এরা ফ্যাসিস্টদের সহযোগী ছিলেন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিরোধিতা করেছেন। অন্যদিকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে যারা অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন এবং ১৭ বছর বঞ্চিত এবং নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের পরবর্তী পদোন্নতি অর্থাৎ সচিব পদে পদায়ন কিংবা পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে না। অজুহাত দেখানো হচ্ছে, এদের অভিজ্ঞতা কম। এদের মধ্যে অতি সামান্যসংখ্যক কর্মকর্তাকে সচিব পদে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে। অথচ এরা পেশাদার কর্মকর্তা হিসেবে সচিবালয়ে পরিচিত।

অবসরপ্রাপ্ত সচিব, অফিসার্স ক্লাবের সেক্রেটারি ও বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি এবিএম আবদুস সাত্তার শুক্রবার বিয়াম মিলনায়তনে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত একটি সেমিনারে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিবের উপস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার ব্যাচমেট ও বন্ধু মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব ও জনপ্রশাসন সচিব ফোন করলে ফোন ধরেন না। তারা ফ্যাসিস্ট আমলের অপকর্মের হোতা আমলাদের অপসারণে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। বিগত ১৭ বছরের বঞ্চিত ও নির্যাতিত কর্মকর্তাদের যথোপযুক্ত পদায়ন এবং পদোন্নতির উদ্যোগ নিচ্ছেন না। এটা দুঃখজনক। তিনি অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আটজন উপদেষ্টার দুনীতির প্রমাণ তার কাছে রয়েছে। এই উপদেষ্টাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ হয় না, বদলিও হয় না।

সাবেক সচিব এএফএম সোলাইমান চৌধুরী বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট অনুসারী আমলারা খুবই ভয়ংকর। এরা এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে আছেন। এদের চরিত্র ও অভ্যাস পাল্টায়নি। এরা দুর্নীতিপরায়ণ এবং সুযোগ বুঝে এখনো দুর্নীতি করছেন। এরা কোন সময় যে কী করে বসেন, তা বলা মুশকিল। তাই চিহ্নিত এ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অবসরপ্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন সচিব দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এইচটি ইমাম ও মহীউদ্দীন খান আলমগীর প্রশাসন আওয়ামীকরণের যে সংস্কৃতি তৈরি করে গেছেন, বিগত শেখ হাসিনার আমলে তা আরো ব্যাপকতা লাভ করে। সচিবালয় যে দেশের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র, সে বিষয়টিই মানুষ ভুলে যায়। সচিবালয় অনেকটা দলীয় কার্যালয়ের মতো হয়ে পড়েছিল।

১৫ বছরের সেই প্রশাসন

বিগত আমলের প্রশাসন সম্পর্কে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তখন সচিবালয় পরিণত হয়েছিল আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আগ পর্যন্ত প্রশাসনে এমন একটি রেওয়াজ তৈরি হয়, যার ফলে ক্যাডার সার্ভিস দীর্ঘদিনের পেশাদারিত্ব হারায়। ওই সময় দেখা গেছে পদোন্নতির পর দলবেঁধে ৩২ নম্বরে এবং টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে কর্মকর্তারা শেখ মুজিবের কবরে ফুল দিয়েছেন। শুধু এখানেই শেষ নয়, তারা সোশ্যাল মিডিয়া, টিভি কিংবা প্রিন্ট মিডিয়ায় এসব খবরও প্রকাশ করেছেন। মন্ত্রণালয়, বিভাগ, করপোরেশন কিংবা সংস্থার ওয়েবসাইটেও তা প্রচার করা হয়েছে। তখন এমন একটি ধারণার সৃষ্টি করা হয় যে, পদোন্নতি যেন শেখ হাসিনার দান এবং তার বন্দনা করে অনেকে তখন ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিতেন। অর্থাৎ প্রশাসনের সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা তখন সরকারের দলদাসে পরিণত হন। অন্যদিকে প্রশাসনের পেশাদার কর্মকর্তারা বঞ্চনা, লাঞ্ছনা, ওএসডি এবং উপহাসের পাত্রে পরিণত হন।

অনেক কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত হন, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার শিকার হন এবং কারাগারে বন্দিও হন। বিসিএস সপ্তম ব্যাচের (১৯৮৪) কর্মকর্তা ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া ও ১৫ ব্যাচের কর্মকর্তা (১৯৯৫) সাইদুর রহমান (কবি রহমান হেনরী) সরকারকে প্রতীকী সমালোচনা করে প্রবন্ধ ও কবিতা লেখার কারণে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার শিকার হয়ে কারাগারে যান। তেমনি অনেক কর্মকর্তাকে নিবর্তনমূলক বদলি, উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে বাধা, জুনিয়র ব্যাচের কর্মকর্তার অধীন চাকরি করতে বাধ্য করা, বিভাগীয় মামলা দেওয়া, বিদেশে প্রশিক্ষণে বিরত রাখা, সরকারি বৃত্তি প্রদানে বিরত রাখা, ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত যেমন গাড়ি ঋণ, ভাতা প্রদান না করা কিংবা গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান না করা ইত্যাদি আচরণ করা হয়েছে।

এসব কর্মকর্তাকে রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী আখ্যায়িত করে প্রাপ্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেনÑজাকির হোসেন কামাল, মঞ্জুর মোর্শেদ চৌধুরী মিঠু, একেএম ইহসানুল হক, ড. ফরিদুল ইসলাম, ড. সুরাতুজ্জামান, রকিবুল হাসান, ইউনূস আলী, আফজালুর রহমান, মাহফুজুল ইসলাম, শামসুল আলম, শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, শেখাবুর রহমান, ফজলুর রহমান, আলিম আখতার খান, ড. নাজমুল আমিন মজুমদার, ড. আবু বকর সিদ্দিক, মাহফুজুর রহমান প্রমুখ। আলিম আখতার খানের সঙ্গে কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেতা ও এমপি বাহার দুর্ব্যবহার করেন। তার প্রতিবাদ জানালে তাকে ১৫ বছর কোনো প্রমোশন দেওয়া হয়নি। হাইকোর্টে মামলা করে রায় পেলেও তা কার্যকর করা হয়নি।

আওয়ামী কর্মকর্তারা সচিবালয়ে যেভাবে প্রটেকশন পাচ্ছেন

সচিবালয় সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের চারজন উপদেষ্টা তাদের মন্ত্রণালয়গুলোতে আওয়ামী সচিব এবং অতিরিক্ত সচিবদের প্রটেকশন দিচ্ছেন। তারা মৌখিক আদেশ দিয়েছেন যে, সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টার সম্মতি ছাড়া কোনো কর্মকর্তাকে পদায়ন কিংবা প্রত্যাহার করা যাবে না। এ ধরনের নির্দেশনার ফলে ফ্যাসিস্ট আমলের অনেক সুবিধাভোগী কর্মকর্তা আগের মতোই বেপরোয়াভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ ছাত্রলীগ করতেন। তার কিছুই হয়নি। স্বপদেই রয়েছেন। সাতক্ষীরা হত্যাযজ্ঞের নির্দেশদাতা হিসেবে চিহ্নিত সচিব নাজমুল আহসানকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়েছে। অর্থ সচিব ড. খায়রুজ্জামান সালমান এফ রহমান এবং পলাতক গভর্নর রউফের লোক হিসেবে পরিচিত। ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর ইসমত আরা সাদিকের পিএস ছিলেন। নাজমা মোবারক এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান ও পলাতক গভর্নর রউফ এবং পতিত সরকারের অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকার বন্ধু। তারাও আছেন বহালতবিয়তে এবং পদোন্নতি পাচ্ছেন।

হাসিনার দোসর হিসেবে চিহ্নিত অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সিরাজুন নূর চৌধুরী (৬৩৬২) ও ইআরডি অতিরিক্ত সচিব একেএম শাহাবউদ্দিনকে (৬৩৫৯) ইতোমধ্যে সচিব করা হয়েছে। তেমনি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির জন্য অন্যতম অভিযুক্ত মেজবাহ উল হকের স্ত্রী তসলিমা কানিজ নাহিদকেও (৬৩৪০) সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অথচ পদোন্নতি ও পদায়নের জন্য গঠিত কমিটি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট-পরবর্তীকালে পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিবদের সচিব পদে পদোন্নতি দিতে অনীহা দেখাচ্ছেন।

৫ আগস্ট-পরবর্তী সরকারের আদেশগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, জুলাই আন্দোলনের সমর্থকদের প্রতি অবহেলা করা হচ্ছে। অন্যদিকে হাসিনার অনুগত যারা টুঙ্গিপাড়া কিংবা ৩২ নম্বরে গিয়ে ফুল দিয়েছেন, তাদের পদায়ন কিংবা পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে।

জামাই আদরে থাকা ১৬ জন আওয়ামী সচিবের আমলনামা

পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তা ব্যতীত বিদেশে মিশনে কর্মরত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট কর্মকর্তা যারা কমার্শিয়াল কাউন্সিলর, শ্রম কাউন্সিলর, ইকোনমিক কাউন্সিলর এবং মিনিস্টার পদে কর্মরত আছেন, তারা সেসব পদে এখনো রয়ে গেছেন। এদের দেশে ফেরত আনা হয়নি। অথচ এরা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করে চলেছেন। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী ৫ আগস্টের পর সারা দেশের সব প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্যাসিস্ট উচ্ছেদ কার্যক্রম চললেও সচিবালয়ে ফ্যাসিস্ট সমর্থক সচিব, অতিরিক্ত সচিব জামাই আদরে অবস্থান করছেন।

শেখ হাসিনার সুবিধাভোগী যে ১৫ জন সচিব রাজত্ব করছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন-(১) মো. মোকাব্বির হোসেন (৫৫৪৮) বর্তমানে সিনিয়র সচিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে নিয়োজিত আছেন। তিনি ইতঃপূর্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। একজন ফ্যাসিস্ট সমর্থক হিসেবে তিনি এখনো কীভাবে পদে বহাল আছেন, সে প্রশ্ন অনেকেরই। ইতঃপূর্বে তিনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দুর্নীতিবাজ কারাবন্দি সচিব ও প্রশাসন ধ্বংসের নায়ক মহিবুল হকের অনুসারী। (২) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বর্তমানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন। তিনি কারাবন্দি সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসেরের সব অপকর্মের সহযোগী এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন। তাকে প্রটেকশন দিচ্ছেন একজন উপদেষ্টা। (৩) ড. ফারহিনা আহমেদ ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার কর্তৃক নিযুক্ত পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব। এখনো পদে বহাল আছেন। তিনি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং অপসারণকৃত বিচারক খিজির হায়াত লিজুর বান্ধবী হিসেবে সচিবালয়ে পরিচিত। তিনি পলাতক সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফের অনুগ্রহভাজন ছিলেন।

(৪) নাজমুল আহসান পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে আছেন। তিনি সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক থাকাকালে বিএনপি, জামায়াত ও বিরোধী দলের ওপর হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের নায়ক। তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনার অতি প্রিয়ভাজন ছিলেন। তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় ফৌজদারি মামলা হওয়া সত্ত্বেও তিনি সচিব পদে বহাল আছেন। (৫) ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার অর্থ সচিব পদে কর্মরত। তিনি দরবেশখ্যাত সালমান এফ রহমান ও পলাতক গভর্নর আব্দুর রউফের সমর্থক এবং তাদের পক্ষে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। (৬) নাজমা মোবারক, তিনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব হিসেবে কর্মরত। তিনি দরবেশখ্যাত সালমান এফ রহমান এবং পলাতক গভর্নর আব্দুর রউফের সমর্থক ও তাদের পক্ষে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন।

তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনা কর্তৃক মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নিযুক্ত হন। তিনি গণভবনে মহিলা সমাবেশের নামে মহিলা লীগের কর্মসূচি পরিচালনা করেন। (৭) মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে সচিব হিসেবে কর্মরত। তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনা কর্তৃক কুয়েতে কাউন্সিলর নিয়োজিত ছিলেন দীর্ঘ ছয় বছর। তিনি সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেকের একান্ত সচিব নিযুক্ত ছিলেন।

কিন্তু তিনি আগস্ট বিপ্লবের পরও সচিব পদে বহাল আছেন। (৮) আবদুর রহমান খান অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সচিব পদে কর্মরত। তিনি দরবেশখ্যাত সালমান এফ রহমান এবং পলাতক গভর্নর আব্দুর রউফের সমর্থক এবং তাদের পক্ষে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনা কর্তৃক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নিযুক্ত হন। কিন্তু তিনি আগস্ট বিপ্লবের পরও সচিব পদে বহাল আছেন। তাকে নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। উপরন্তু তিনি এনবিআর চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হন। (৯) এএইচএম সফিকুজ্জামান বর্তমানে শ্রম সচিব হিসেবে নিয়োজিত। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা, আগস্ট বিপ্লবপরবর্তী সময়ে বিস্ময়করভাবে সচিব পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

তিনি We are in Prime Minister Man-এর প্রোফাইল উন্মোচন করেন। একই ভাবে তার স্ত্রী জাহেদা পারভীন সচিব পদে পদোন্নতি পান। (১০) নাসরীন জাহান, তিনি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে কর্মরত। ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর হিসেবে সাত বছর দুবাইয়ে শ্রম কাউন্সিলর ছিলেন এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ-সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতির কারণে যুগ্ম সচিবের পর তিনি আর পদোন্নতি পাননি। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

ফ্যাসিস্ট হাসিনার সুবিধাভোগী সত্ত্বেও ব্যাপক আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সচিব পদে পদোন্নতি লাভ করেন, যা অবিশ্বাস্য ও অবাক করার বিষয়। (১১) মো. সাইদুর রহমান, চুক্তিতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে নিয়োজিত। তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিশেষ সমর্থক। তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের অধীন দীর্ঘদিন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে যুগ্মসচিব/অতিরিক্ত সচিব পদে কর্মরত ছিলেন। (১২) মো. নিজাম উদ্দিন, তিনি একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে বহুল পরিচিত। বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মকালীন তিনি নসরুল হামিদ বিপুর কালেক্টর হিসেবে সচিবালয়ে বহুল পরিচিত ছিলেন। বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করা যায় যে, তিনি কোনো এক জাদুবলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব পদ লাভ করেন। কিন্তু দুই মাসের মাথায় দুর্নীতির দায়ে প্রত্যাহার করা হয়। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা ও চাকরিচ্যুত করা উচিত ছিল বলে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের মত।

কিন্তু তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন। (১৩) মাহবুবুর রহমান, তিনি বর্তমানে বাণিজ্য সচিবের দায়িত্বে আছেন। তিনি মূলত কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং অভিযোগ রয়েছে, তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের অধীন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার পদে কর্মকালীন দুই হাজার কোটি টাকা শুল্ক লুটপাট করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। একজন ফ্যাসিস্ট সমর্থক কীভাবে বাণিজ্য সচিব পদে নিয়োগ পেলেন, তা সহজেই অনুমেয়।

সচিবালয়ে ব্যাপক কানাঘুষা আছে যে, ১০০ কোটি টাকার বিনিময়ে তিনি বাণিজ্য সচিব পদে পদোন্নতি লাভ করেন। (১৪) মফিদুর রহমান, সচিব হিসেবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। তিনি দরবেশখ্যাত সালমান এফ রহমান এবং পলাতক গভর্নর আব্দুর রউফের সমর্থক এবং তাদের পক্ষে ফ্যাসিস্ট সরকার হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। তিনি দীর্ঘদিন অর্থ বিভাগে কর্মরত ছিলেন। বর্তমান সংস্কৃতি উপদেষ্টার বিশেষ অনুগ্রহে সচিব পদে নিয়োগ লাভ করেন। তার নিয়োগের বিরুদ্ধে সচিবালয়ে আন্দোলন হয়েছে। তাতেও কোনো ফল হয়নি। (১৫) ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে নিয়োজিত। তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর।

হাসিনা সরকারের সমর্থক ওএসডি হওয়া ১১ জন সচিব বর্তমানে চাকরিতে বহাল আছেন

এরা হলেন-মো. মশিউর রহমান, সিনিয়র সচিব ৫৫৬৮। মো. মনজুর হোসেন, সিনিয়র সচিব ৫৪৯০। মো. সামসুল আরেফিন, সিনিয়র সচিব ৫৭৭৩। মো. আজিজুর রহমান, সচিব ৫৯২৯। মো. নুরুল আলম, সচিব ৫৯৯৪। মো. খায়রুল আলম শেখ, সচিব ৫৯৯৬ (তিনি এস আলমকে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব ত্যাগ করে বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণে সহায়তা করেন। এ-সংক্রান্ত নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিরাগমন শাখায় আছে)। ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, সচিব ৬০৬৫। শফিউল আজিম, সচিব ৬৩৬৫। মো. নিজাম উদ্দিন, সচিব ৫৭০৩। মো. মিজানুর রহমান, সচিব ৫৯২৪। ড. একেএম মতিউর রহমান, সচিব ৭৬৩১। এদের অবিলম্বে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো উচিত বলে সচিবালয়ের অভিজ্ঞদের মত।

শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থক হিসেবে পরিচিত ৪৬ কর্মকর্তা

সচিবালয়ে ১৫ বছর ধরে যারা সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, দলদাস ছিলেন, মুজিববর্ষ পালনের অগ্র সেনানী ছিলেন এবং যেসব পেশাদার কর্মকর্তা ১৫ আগস্ট কালো ব্যাজ ধারণ করেননি তাদের চিহ্নিত করে মামলা দিয়েছেন, টুঙ্গিপাড়া ও ৩২ নম্বরে না যাওয়ার অপরাধে শোকজ করেছেন, তারা এখনো প্রশাসনে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। এই ৪৬ কর্মকর্তা হলেনÑ(১) ড. শরিফা খান (৪১৭৭), সচিব (বিশ্বব্যাংক আমেরিকা)। (২) মো. আমিনুল আহসান (৫৯৬৫), সচিব (চেয়ারম্যান বিপিসি)। (৩) মো. আবদুর রউফ (৫৭১০), সচিব বস্ত্র ও পাট। (৪) মো. আশরাফ উদ্দিন (৫৯৪১), সচিব প্রতিরক্ষা। (৫) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান (৫৮৯২), সচিব। (৬) ড. মো. ওমর ফারুক (৫৯৪৮), সচিব (রেক্টর প্রশাসন একাডেমি) (৭) সাইদ মাহবুব খান (৬০২৭), সচিব (রেক্টর পিএটিসি)।

(৮) মো. মোস্তাফিজুর রহমান (৬০৩৭), সচিব দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। (৯) শশাঙ্ক শেখর ভৌমিক (৫৮০৮), অতিরিক্ত সচিব। (১০) প্রদীপ কুমার দাস (৫৮৪৩), অতিরিক্ত সচিব। (১১) মো. জাকির হোসেন (২০১৮৩), অতিরিক্ত সচিব। (১২) একেএম টিপু সুলতান (৫৯৯৯), অতিরিক্ত সচিব ওএসডি। (১৩) রবীন্দ্র শ্রী বড়ুয়া (৬০২০), অতিরিক্ত সচিব ওএসডি। (১৪) দিলীপ কুমার বণিক (৬০৯৭), অতিরিক্ত সচিব ওএসডি। (১৫) সৈয়দ নাসির এরশাদ (৬২৫৩), অতিরিক্ত সচিব। তিনি আওয়ামী ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের কট্টর সমর্থক ও বঙ্গবন্ধু জন্ম শতবার্ষিকী কমিটির সদস্য। কামাল আবদুল নাসের-এর অনুসারী। দুই দফায় জাপান ও কোরিয়ায় ৮ বছর কাউন্সিলর/মিনিস্টার পদে আছেন। এখন জাপানে আছেন।

(১৬) মো. হাবিবুর রহমান (৬২৫৭), অতিরিক্ত সচিব ওএসডি। তিনি এইচটি ইমামের বিশেষ অনুগ্রহভাজন অনুসারী। (১৭) কেএম আবদুল ওয়াদুদ (৬২৬০), অতিরিক্ত সচিব, ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘদিন ধরে লুটপাটে যুক্ত থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক। চরম দুর্নীতিবাজ এবং সাবেক মন্ত্রী ডা. এনামের লুটপাটের সহযোগী। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়। (১৮) মো. নাভিদ শফিউল্লাহ (৬২৬৯), অতিরিক্ত সচিব পরিবেশ মন্ত্রণালয়। সাবেক মন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) ডা. মজিবুর রহমানের জামাতা। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়। স্পেনে কাউন্সিলর ছিলেন। (১৯) মো. যাহিদ হোসেন (৬২৭৬), অতিরিক্ত সচিব। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সমর্থক, আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়। (২০) মো. মাহবুব আলম তালুকদার (৬২৮৪), অতিরিক্ত সচিব। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সমর্থক, আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়। ৫ আগস্টের পর ওএসডি করা হয়। চরম দুর্নীতিবাজ অতিরিক্ত সচিব তিনি।

ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময়ে ঝিনাইদহ ও নোয়াখালীর জেলাপ্রশাসক ছিলেন। প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক। (২১) ড. মো. আমিনুর রহমান (৬৩০১), অতিরিক্ত সচিব ওএসডি। তিনি গোপালগঞ্জের ক্ষমতায় জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনারসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিশ্বস্ত সহযোগী এবং চরম দুর্নীতিবাজ ও প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক। তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়। (২২) মো. তোফাজ্জেল হোসেন (৬৩০৫), অতিরিক্ত সচিব মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বর্তমানে সচিবের রুটিন দায়িত্বে আছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিশ্বস্ত সহযোগী এবং চরম দুর্নীতিবাজ ও প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়। তাকে অবিলম্বে অপসারণ করা প্রয়োজন বলে সচিবালয় সংশ্লিষ্টরা জানান।

(২৩) মো. মাহমুদুল হাসান (৬৩৩০), অতিরিক্ত সচিব স্থানীয় সরকার বিভাগ। তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিশ্বস্ত সহযোগী এবং চরম দুর্নীতিবাজ ও প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়। তিনি সচিব সাজ্জাদুল হাসান (শেখ হাসিনার পিএস) ও প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের ঘনিষ্ঠজন। তাদের ক্ষমতায় নিউ ইয়র্কে ইকোনমিক মিনিস্টার হিসেবে চার বছর ছিলেন। সেখানে সেকেন্ড হোম করেছেন। ছেলেমেয়ে নিউইয়র্কে থাকেন। (২৪) মো. হেলাল মাহমুদ শরিফ (৬৩৩৬), ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিশ্বস্ত সহযোগী এবং চরম দুর্নীতিবাজ ও প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়। (২৫) এ এইচ এম লোকমান (৬৩৩৭), অতিরিক্ত সচিব ওএসডি। ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিশ্বস্ত সহযোগী এবং চরম দুর্নীতিবাজ ও প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়। হাসিনা ও শেখ মুজিবের গুনগান করে অনেক কবিতা লিখেছেন।

(২৬) মো. আখতারুজ্জান (৬৩৫১) অতিরিক্ত সচিব। ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিশ্বস্ত সহযোগী। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়। পলাতক হুইপ ইকবালুর রহিমের বিশ্বস্ত। (২৭) মো. মানজারুল মান্নান (৬৩৫৬), অতিরিক্ত সচিব। শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুনের ভাতিজা পরিচয়ে গত ১৫ বছর সুবিধা নিয়েছেন। এখন সরদার শাখাওয়াত বকুলের ভাগিনা পরিচয়ে এগিয়ে চলেছেন। চরম সুবিধাবাদী, তার ভাই আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিনা ভোটে। (২৮) নাজনীন কাওসার চৌধুরী (৬৩৫৭), অতিরিক্ত সচিব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চরম সুবিধাবাদী চরিত্রের। সচিব আবদুল করিম গত ১৫ বছর আওয়ামী সুবিধাভোগী, ব্রাসেলস-এ ৫ বছর কাউন্সিলর ছিলেন। তার ভাই নোবেল চট্টগ্রাম যুবলীগের নেতা। (২৯) সিরাজুন নূর চৌধুরী (৬৩৬২), অতিরিক্ত সচিব অর্থ বিভাগ। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে অর্থ বিভাগে কাজ করছেন। ড. আবদুর রউফ গভর্নরের আস্থাভাজন হিসেবে এখনো ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়।

(৩০) মো. সাবিরুল ইসলাম (৬৩৬৩), অতিরিক্ত সচিব। তিনি রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন চুপ্পুর ভাতিজা এই পরিচয়ে (৫ আগস্টের পর ওএসডি হওয়া সত্ত্বেও) ভূমি আপিল বোর্ডে কর্মরত আছেন। তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়। সুনামগঞ্জের জেলাপ্রশাসক এবং রংপুর ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার পদে কর্মরত ছিলেন। তার পিতা বাকশাল পাবনার সম্পাদক ছিলেন। (৩১) সৈয়দ সালমা জাফরীন (৬৩৭৪), অতিরিক্ত সচিব ওএসডি। তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়। তিনি তথ্য জালিয়াতি করে চাকরিতে যোগদান করেন। এ বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ সরকারের কাছে আছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেত্রী ছিলেন।

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ড. আলাউদ্দিনের পিএস ছিলেন। চরম বামপন্থি স্বামী শাওন চৌধুরী (হিন্দু) কর ক্যাডারে কর্মরত। (৩২) এস এম রেজাউল মোস্তফা কামাল (৭৭২৪), অতিরিক্ত সচিব, পরিকল্পনা বিভাগ স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের পুলিশ উইং-এর অতিরিক্ত সচিব ছিলেন দীর্ঘ ৩ বছর। আসাদুজ্জামান কামালের অপকর্মের সহযোগী। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সমর্থক। বুয়েট ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন। দ্রুত চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া উচিত। আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। (৩৩) অজয় কুমার চক্রবর্তী (৭৬২৫), অতিরিক্ত সচিব (ওএসডি)। ‘র-এর এজেন্ট। পল্লী বিদ্যুতের চেয়ারম্যান ছিলেন। বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির শিরোমণি! ফ্যাসিস্ট হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়। অবিলম্বে চাকরি থেকে অপসারণ করা প্রয়োজন।

(৩৪). আহমেদ ফয়সাল ইমাম (৬৪০৩), অতিরিক্ত সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়। সাবেক আইনমন্ত্রী কামরুলের নিকট আত্মীয়। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সমর্থক (ছাত্রলীগ ছিলেন) দ্রুত আইনের আওতায় এনে চাকরি থেকে অপসারণ করা প্রয়োজন। (৩৫) মো. মাছুমুর রহমান (৬৪১৭), অতিরিক্ত সচিব ওএসডি। ব্যাপক দুর্নীতিবাজ। বগুড়া গাবতলী বাড়ি। কিন্তু ফ্যাসিস্ট হাসিনার সমর্থক। পটুয়াখালীর ডিসি ছিলেন, ৫ আগস্ট রাতে গ্রামের লোকজন তার বাড়ি (গাবতলী)তে আগুন দেয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিলের কারিগর। সচিব মালেকের অনুসারী। (৩৬) আবু হেনা মোস্তফা জামান (৬৪৫০), অতিরিক্ত সচিব। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সীমান্ত/কারা উইং-এ কাজ করেছেন দীর্ঘ ৮ বছর। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের ক্যাশিয়ার, ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। দুর্নীতিবাজ, সুবিধাভোগী। ফ্যাসিস্ট হাসিনার কট্টর সমর্থক। (৩৭) শেখ মোমেনা মনি (৬৪৬১), অতিরিক্ত সচিব স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা।

ফ্যাসিস্ট হাসিনা সমর্থক ও তার এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়। সচিব আকমল হোসেন আজাদ তাকে নিরাপদ আশ্রয়ে রেখেছেন। মনিরুলের স্ত্রী শায়লা ফারহানা (চাকরিচ্যুত)-এর ঘনিষ্ঠ সহযোগী (সব অপকর্মের)। তাকে অবিলম্বে বাধ্যতামূলক অবসরে দেওয়ার দাবি সচিবালয় পেশাদার কর্মকর্তাদের। (৩৮) তানিয়া খান অতিরিক্ত সচিব (২০৩০০), ওএসডি। চরম বামপন্থি ধর্মবিদ্বেষী ফ্যাসিস্টের সমর্থক। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়। দ্রুত অপসারণ করতে হবে। (৩৯) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকী (৬৫১৩), ফ্যাসিস্ট হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক।

জুলাই বিপ্লবের পর ‘প্রশাসন’-এর কর্মকর্তাদের পদোন্নতি পদায়নে ব্যাপক হস্তক্ষেপ করেছেন। ৪০) সুরাইয়া পারভীন শেলী (৬৫২১), অতিরিক্ত সচিব নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। চরম ফ্যাসিস্ট সমর্থক। গত ১৫ বছর ব্যাপক দলবাজি/স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে সচিবালয়ে নিরীহ জাতীয়তাবাদী/ডানপন্থি কর্মকর্তাগণকে হয়রানি করেছেন। (৪১) নুরুন আখতার (৬৫৩৮), অতিরিক্ত সচিব ওএসডি। ফ্যাসিস্ট সমর্থক, সব অপকর্মের সাক্ষী। (৪২) ড. জিয়াউল আবেদীন (৬৫৪১), অতিরিক্ত সচিব, অর্থ বিভাগ। চরম আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা। আওয়ামী আমলে সব পদোন্নতিপ্রাপ্ত। শেখ মুজিবুরের মাজার জিয়ারতকারী ও নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তা। স্বৈরাচারী আমলে ভালো ভালো পদে চাকরি করেছেন এবং অত্যন্ত প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর ছিলেন এই কর্মকর্তা। ছাত্র জীবনে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দীর্ঘদিন বিদেশে পোস্টিংয়ে ছিলেন। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের একজন পুরোধা ও অর্গানাইজার ছিলেন। (৪৩) শেখ আখতার হোসেন (৬৫৬৩), অতিরিক্ত সচিব ওএসডি। ফ্যাসিস্ট হাসিনার প্রটোকল অফিসার। ব্যাপক দুর্নীতিবাজ বলে সচিবালয় সংশ্লিষ্টরা জানান।

(৪৪) এ এইচ এম কামরুজ্জামান (২০৩৪০), অতিরিক্ত সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সমর্থক। সাবেক মন্ত্রী পলাতক তাজুল ইসলামের সহযোগী। দীর্ঘ ১২ বছর একই মন্ত্রণালয়ে পোস্টিং। শত কোটি টাকার মালিক। এখন নারায়ণগঞ্জ সিটির প্রশাসকের অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়।

(৪৫) ড. নাহিদ হোসেন (৭৭৪৭), অতিরিক্ত সচিব ওএসডি। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণ। ব্যাপক দুর্নীতিবাজ। শেয়ার কেলেঙ্কারীর মাধ্যমে হাজার কোটির মালিক। বিএসইসি শিবলী রুবাইয়াতের দোসর। অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। ফ্যাসিস্ট হাসিনা গভর্নর রউফের অনুসারী। (৪৬) কাজী গোলাম তৌসিফ (৭৬৪৯), অতিরিক্ত সচিব; মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়, চরম দুর্নীতিবাজ। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সমর্থক ছাত্রলীগ। টিসিবিতে ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন, ৭ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করে ব্যাংকে জমা দেননি। তদন্তে প্রমাণিত, ফ্যাসিস্ট হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়।

ফ্যাসিস্টদের দোসর পলাতক ও গ্রেপ্তার ২৬ সচিব

দেশের প্রশাসনকে চরমভাবে যারা বিতর্কিত করেছে এবং সচিবালয়কে আওয়ামী লীগের অফিসের কাতারে নিয়েছে এমন ২৬ জন সচিব এখন পলাতক কিংবা কারাগারে। এদের সহযোগিতায় শেখ হাসিনা আওয়ামী ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। এরা হলেন-

(১) আবুল কালাম আজাদ, মুখ্যসচিব, (এমপি), (বর্তমানে কারাগারে)। (২) নজিবুর রহমান, মুখ্যসচিব, (বর্তমানে কারাগারে)। (৩) কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, মুখ্যসচিব, (বর্তমানে কারাগারে)। (৪) কায়কাউস রানা, মুখ্যসচিব, (বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে)। (৫) তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, মুখ্যসচিব, (বর্তমানে পলাতক)। (৬) সাজ্জাদুল হাসান, সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের ভাই), (বর্তমানে পলাতক)। (৭) মো. সোহরাব হোসাইন, সচিব, পিএসসি চেয়ারম্যান, (বর্তমানে পলাতক)। (৮) হেলাল উদ্দিন আহমেদ, সচিব, (বর্তমানে কারাগারে)। (৯) খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, (বর্তমানে পলাতক)। (১০) ইকবাল মাহমুদ, সচিব/দুদক চেয়ারম্যান, (বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া পলাতক)।

(১১) কাজী আমিনুর রহমান, সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, (বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া পলাতক)। (১২) কবির বিন আনোয়ার অপু, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, (বর্তমানে পলাতক)। (১৩) জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাচন কমিশনার সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, (বর্তমানে পলাতক)। (১৪) জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্যসেবা সচিব, (বর্তমানে কারাগারে)। (১৫) মেজবাহউদ্দিন, সচিব, সেক্রেটারি অফিসার্স ক্লাব, (বর্তমানে কারাগারে)। (১৬) মোহাম্মদ সাদিক এমপি/সচিব/পিএসসি চেয়ারম্যান, (বর্তমানে পলাতক)। (১৭) সালাহউদ্দিন, সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, চাকরিচ্যুত, (বর্তমানে পলাতক)। (১৮) খাইরুল ইসলাম মান্না, সচিব/সদস্য (চুক্তি) বিআইডিএ, (বর্তমানে পলাতক)। (১৯) জুয়েনা আজিজ, সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, (বর্তমানে পলাতক)। (২০) এমএএন সিদ্দিক, সচিব ও পিডি মেট্রোরেল, (২১) খলিলুর রহমান, সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, সদস্য পিএসসি, (২২) খন্দকার শওকত হোসেন, সচিব, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, (শেখ কবির হোসেনের বেয়াই), (২৩) মোস্তফা কামাল, সচিব, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় (বর্তমানে পলাতক), ওএসডি ও সভাপতি বিএএসএ, (২৪) এম আলম, অতিরিক্ত সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয় ও মহাসচিব বিএএসএ, (বর্তমানে পলাতক)। (২৫) হারুন অর রশিদ বিশ্বাস, অতিরিক্ত সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, (বর্তমানে পলাতক), দুদক মামলা করেছে। (২৬) আবু হেনা মোরশেদ জামান (৫৬৩৯), সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ, (বাধ্যতামূলক অবসরে)।

অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের (১৫-১৮ ব্যাচ) পেশাদার এমন স্মার্ট কিছু কর্মকর্তা আছেন, যারা সচিব হবার যোগ্য। তাদের দ্রুত পদোন্নতি দিয়ে সচিব করা হলে অথবা গ্রেড-১ পদে পদায়ন করা হলে প্রশাসনে কিছুটা হলেও ভারসাম্য সৃষ্টি হতে পারে বলে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের অভিমত। বর্তমানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সমর্থক সচিব ও অতিরিক্ত সচিবরা দায়িত্বে থাকলে নির্বাচনের সময় তাদের আসল চেহারা প্রকাশ করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।