
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। আজ শুক্রবার (৮ আগষ্ট) দুপুর দুইটায় উপজেলার শ্যামারচর বাজারের মরা সুরমা নদীতে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আপিল বিভাগের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরের ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয়। এ নৌকা বাইচে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ১২টি নৌকা এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
বিশাল এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় সুনামগঞ্জ ছাড়াও, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা জেলা, আজমিরীগঞ্জ ও খালিয়াজুড়ি উপজেলা থেকেও লক্ষাধিক দর্শক উপস্থিত ছিলেন। নৌকা বাইচের মতো এরকম একটি সামাজিক আয়োজনে এলাকায় পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আসা সহ সমাজের মানুষের ভ্রাতৃত্ববোধ বেড়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। আত্মীয়স্বজন, নারীপুরুষ ও ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে অনেককেই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে দেখা গেছে।
এতে স্থানীয় লোকজন ও আগত দর্শকদের মধ্যে এক আনন্দঘন পরিবেশ দেখা গেছে।
দর্শনার্থী শাল্লা উপজেলার বাদল মিয়া বলেন, নৌকা বাইচ গ্রাম বাংলার হারাতে বসা ঐতিহ্য। একসময় গ্রামের মানুষের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিলো নৌকা বাইচ। শ্যামারচরের মরা সুরমা নদীতে নৌকা বাইচের খবর শুনে এসেছি। প্রতিযোগীতা দেখে খুব আনন্দ পেয়েছি। আমার অসাধারণ একটি সময় কেটেছে।
শ্যামারচর গ্রামের আনোয়ার হোসেন জানান, ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে বাড়ি বাড়ি যেমন মেহমান আসে ঠিক তেমনি নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন এসেছে। সবাই মিলে নৌকা বাইচ দেখে মজা পেয়েছি।
আয়োজক কমিটির পক্ষে আশরাফ মনির বলেন, হারিয়ে যাওয়া এই ঐতিহ্য মানুষকে সুস্থ বিনোদন দেয়। আয়োজন ঘিরে এলাকায় বইছে উৎসবের আমেজ। নতুন প্রজন্ম হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য দেখতে পেয়ে আনন্দিত। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আগামীতেও এমন আয়োজন অব্যাহত থাকবে।
নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, স্থানীয়দের বিনোদন দেওয়ার লক্ষ্যে ও সমাজে যুবকদের মাদকাসক্তি থেকে দূরে রাখতেই আজকের এই আয়োজন। এধরনের আয়োজন করলে যুবকরা নেশাগ্রস্থ হওয়ার আর সময় পাবে না। ইতিমধ্যেই আয়োজক কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা এবছরই ছায়ার হাওর ও দিরাইয়ের কালনী নদীতে আবারো নৌকা বাইচের আয়োজন করবো। আমরা চাই না এই সমাজে হানাহানি ও মারামারি হউক। এই সমাজ সৌন্দর্য ও ভালোবাসার সমাজ। এখানে যে বা যারাই বসবাস করে আসছে সবাইকে সম্মিলিতভাবে বসবাস করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গ্রামে গ্রামেই হউক আর ইউনিয়ন ভিত্তিক হউক পরবর্তীতে আমরা লাঠি ও হাডুডু খেলার আয়োজন করবো। আমাদের মধ্যে মতামতের পার্থক্য থাকবে কিন্তু হানাহানি থাকবে না। এই কারণেই কষ্ট করে টাকাপয়সা খরচ করে এই আয়োজন করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি আপনারা সবাই উপভোগ করবেন এবং এটা সবদিকে ছড়িয়ে যাবে। এ যুগের তরুণরা পুরাতন স্টাইল আর চায় না। তারা নতুনত্ব চায়। নতুন স্টাইল দিয়ে তরুণদেরকে বদলিয়ে দিতে হবে।
শিশির মনির বলেন, তরুণরা মারপ্যাঁচ বুঝে না। তারা হানাহানি দেখতে চায় না। তারা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছ থেকে উল্টাপাল্টা কথাবার্তা শুনতে চায় না। তবেই সমাজের ভাল পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব।
গাজীপুরে সাংবাদিককে নৃশংসভাবে হত্যার বিষয়ে শিশির মনির বলেন, আমি মনে করি এদেশে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্রের চতুর্থ পিলারটির নাম সাংবাদিকতা। সাংবাদিকদের স্বাধীনতা না থাকলে গণতন্ত্র পরিপূর্ণ হবে না। সাংবাদিকতা ন্যায়ের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। গাজীপুরে যা হয়েছে সেটা কোনভাবেই কাম্য নয়। আমি ঢাকায় গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে যতটুকু সম্ভব আমি ভিকটিমকে সহযোগিতা করবো।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ৪ নং চরনাচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পরিতুষ রায়, ১নং আটগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আন নোমান,৩নং বাহাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু, ৪নং শাল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুস সাত্তার, শাল্লা উপজেলা জামায়াত ইসলামের আমীর মাওলানা নূরে আলম সিদ্দিকী, দিরাই উপজেলা জামায়াতের আমীর মো: আব্দুল কদ্দুস দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, শাল্লা থানার অফিসার ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক বৃন্দ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বর্গ।
প্রতিযোগিতা শেষে প্রথম পুরুস্কার একটি স্বর্ণের হরিণ, দ্বিতীয় পুরস্কার ১টি স্বর্ণের প্রজাপতি ও তৃতীয় পুরস্কার ১টি মোটরসাইকেল বিজয়ীদের হাতে তুলে দেন প্রধান অতিথি।