
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দেয়ালে টাঙিয়ে রেখে আলোচনায় আসা পিরোজপুরের নেছারাবাদ রমেশচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামিমা ইয়াছমিনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে দেয়ালে ছবি টাঙানোর জন্য নয়, অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার কারণে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) পিরোজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল কালবেলাকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
এরআগে, বিদ্যালয়ের দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর ছবি টাঙানো নিয়ে নিউজ প্রকাশিত হয়। তার একদিন পরে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে ওই শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকার মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দেয়ালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ছবি টাঙানোর ঘটনায় তাকে বরখাস্ত করা হয়নি। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
বরখাস্ত হওয়া ওই প্রধান শিক্ষিকা শামিমা ইয়াছমিন বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর ছবি উঠেছে। ছবি নামানোর জন্য নতুন কোনো প্রজ্ঞাপনের কপি বা উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি বলে ছবি সরাইনি। পরে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার ফোন পেয়ে ওই ছবি নামিয়ে ফেলেছি।’
তিনি বলেন, ‘বুধবার দুপুরে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে আমাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের চিঠি হাতে দেওয়া হয়েছে। বরখাস্তের চিঠিতে অপরাধের কি কারণ লেখা আছে জানতে চাইলে ওই শিক্ষিকা বলেন, ‘চাকরিবিধি না মেনে অসধা আচরণের কারণে চাকরি থেকে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ আছে।’
ওই বরখাস্তের চিঠি দেখতে চাইলে বরখাস্ত হওয়া শিক্ষিকার স্বামী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা লোকাল প্রশাসন ক্ষেপাতে চাই না। দেখি ভালোয় ভালোয় সমাধানে আসতে পারি কি না। যদি না পারি তাহলে সাংবাদিকদের বিষয়টা জানাব।’
এ বিষয়ে নেছারাবাদ উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গিয়াস উদ্দীন বলেন, ‘বিদ্যালয় থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামানোর জন্য চিঠি আকারে কোন নির্দেশনা দেয়নি। তবে ভিতরে ভিতরে আমাদের ছবি নামানোর জন্য একটা নির্দেশনা ছিল। আমি আমার ক্লাস্টারের সবাইকে ছবি নামাতে বলেছিলাম। ওই শিক্ষিকা কেন নামায়নি আমি বুঝি না।’
তাহলে ছবি না সরানোর অপরাধেই কি ওই প্রধান শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে; এমন প্রশ্ন করে পুনরায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চিঠিতে কি লেখা আছে আমি জানি না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেছারাবাদ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খন্দোকার জসিম আহমেদকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
পিরোজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোহাম্মাদ মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ছবি টাঙানোর জন্য নয়; বিদ্যালয়ের অভিভাবক এবং এলাকার মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার কারণে ওই শিক্ষিকাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মোটকথা সবার সঙ্গে অসধা আচরণের কারণে তাকে ওই সাজা দেওয়া হয়েছে। এখন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করার জন্য তদন্ত চলছে।’
তাহলে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙিয়ে গণমাধ্যমে আলোচনা আসার পরেই কেন তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা এমন প্রশ্ন করে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রধান শিক্ষিকা শামিমা ইয়াছমিনের বিরুদ্ধে পূর্ব থেকেই অনেক অভিযোগ শুনছি। বুঝেছিলাম সে নিজে থেকে শুধরে যাবে কিন্তু শুধরাইনি।’