Image description

ওমান থেকে ফেরা প্রবাসী ছেলে বাহার উদ্দিনকে বিমানবন্দর থেকে আনতে গিয়েছিলেন মা মোরশেদা বেগম (৫০)। কিন্তু সেই যাত্রায় আর ঘরে ফেরা হলো না। পথে মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের খালে পড়ে একসঙ্গে প্রাণ গেল সাতজনের। পরিবার হারাল সাত সদস্যকে।

নিহতদের মধ্যে আছেন মোরশেদা বেগম, তার তিন নাতনি—মীম আক্তার (২), রেশমা আক্তার (৯), লামিয়া ইসলাম (৮) এবং দুই পুত্রবধূ—কবিতা আক্তার (২৪) ও লাবনী আক্তার (২৫)। দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন মোরশেদার মা ফয়জুন নেছা (৭০)–ও।

মোরশেদা ও তার নাতনি এবং দুই পুত্রবধূকে পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের চৌপল্লী এলাকার কাশারি বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে। আর মা ফয়জুন নেছাকে দাফন করা হয়েছে তার পিত্রালয় হাজিরপাড়া গ্রামে।

চৌপল্লী গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া। কবরস্থানের পাশে দাঁড়িয়ে কিছু মানুষ অশ্রু ঝরাচ্ছেন। কারও মুখে কোনো শব্দ নেই, শুধু ভারী নিঃশ্বাস আর নিঃশব্দ কান্না।

সবার চোখে মুখে হারানোর বেদনা। নিহত কবিতা আক্তারের বড় বোন লিপি আক্তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বারবার ডাকছিলেন তার ছোট বোনকে, আর বলছিলেন, “আমার মীমরে ফেরত দাও, আমার বোনকে একটু আদর করতে দাও।” তার এই আর্তি শুনে অনেকেই চোখের পানি আটকে রাখতে পারেননি।

এদিকে বুধবার ভোরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়ারপুর ইউনিয়নের চন্দ্রগঞ্জ পূর্ব বাজারের অদূরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইক্রোবাস সড়কের পাশে খালে ফেলে পালিয়ে যায় চালক। তবে গাড়ির মালিক রাসেল এসে ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনিও চালকের সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো কিছুই বলেননি বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার। 

জানা গেছে, অভিযুক্ত চালকের নাম আকবর হোসেন (২৪)। তিনি সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়নের হাসানপুর গ্রামের মৃত ফয়েজ আহমেদের ছেলে।

গৃহকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, চালকের ঘুমের কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। তার কারণেই একসঙ্গে পরিবারের ৭ জনকে হারাতে হয়েছে। একদিন পার হয়ে গেল এখনো পর্যন্ত পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আমরা তাকে ছেড়ে দেব না। তার বিরুদ্ধে মামলা করব। আমার দুই ছেলে রুবেল ও রনি আজ (বুধবার) বিদেশ থেকে আসবে। তারা আসলেই মামলা করা হবে।

চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোবারক হোসেন বলেন, ‘চালক আকবর ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন। তাকে আটকের জন্য চেষ্টা চলছে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে। পরিবার মামলা না করলে আমরা মামলা করব।’