Image description

কয়েকদিন আগেই বিভাগের ব্যাচের মেসেঞ্জার গ্রুপে সবার সামনে সগৌরবে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন। সবাই মিলে ১৭ আগস্ট ক্লাস করবে, কত আনন্দ ছিল মনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাস, নতুন বন্ধু, নতুন পরিবেশ- সব কিছুর জন্যই মুখিয়ে ছিলেন মেয়েটি। কিন্তু সব প্রস্তুতি, অপেক্ষা আর স্বপ্ন থমকে দাঁড়াল একটি দুঃসংবাদের ভারে। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সদ্য ভর্তি হওয়া মেধাবী শিক্ষার্থী রাফিয়া সুলতানা কুইনের পথচলা অ্যাজমাতেই থেমে গেল চিরতরে। বুধবার (৬ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবাগত শিক্ষার্থী ছিলেন। 

কুইনের বাবা আব্দুল খালেক আহমেদ একজন শিক্ষক, কর্মরত আছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। জানা গেছে, কয়েকদিন আগে শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিছু সময়ের জন্য অজ্ঞান হয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করেন। 

চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (৬ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে কুইন মারা যান। রাফিয়া ভোলাহাট সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। অসাধারণ ফলাফল এবং মেধার ভিত্তিতে তিনি দেশের ২৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯টি ইউনিটে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন।

কুইন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ইউনিটে ৪৫২তম, ‘বি’ ইউনিটে ৪৭তম এবং ‘সি’ ইউনিটে ৪৩তম হয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৬তম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮৩৯তম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটে ২২০তম এবং ‘ডি’ ইউনিটে ২৫৬তম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬২৯তম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০তম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৮তম হয়ে উত্তীর্ণ হন। 

গুচ্ছভুক্ত ১৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫৮তম অবস্থানে ছিলেন এ মেধাবী শিক্ষার্থী। সবশেষে নিজের পছন্দের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে ভর্তি হয়েছিলেন কুইন। তবে ক্লাস শুরুর আগেই চিরবিদায় নিতে হলো তাকে।

ভোলাহাটে বাসা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. রেজাউল করিম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘একটা মৃত্যুর সংবাদ শুনে আমি ট্রমার মধ্যে চলে গেছি। এটা থেকে কিছুতেই বের হতে পারছি না। আহ্ জীবনের পথ কত ছোট, মৃত্যু কত নিকটে!’ 

তিনি বলেন, ‘রাফিয়া সুলতানা কুইন এই বছর ২০২৪-২৫ সেশনে রাবিতে আইবিএ নিয়ে ভর্তি হয়েছিল। অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়ে গতকাল (৫ আগস্ট) থেকে আইসিইউতে ভর্তি ছিল। আর আজ (৬ আগস্ট) আনুমানিক ৯টার সময় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়েছে।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘জীবন কত নিষ্ঠুর, ফুল ফোটার আগেই ঝরিয়ে দেয়। কত স্বপ্ন, কত উদ্দীপনা নিয়ে ক্যাম্পাস আসার কথা ছিল তার। অথচ আজ সে আর নেই। কোথাও নেই। তার স্বপ্নে নেই, বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণে নেই, বাস্তবেও আর নেই।’