
জাতীয়করণের দাবিতে আবারও রাজপথে নামছেন দেশের বেসরকারি শিক্ষকরা। আগামী বুধবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীতে বড় ধরনের গণসমাবেশের ডাক দিয়েছেন তারা। আয়োজকরা বলছেন, এবার আন্দোলন হবে সংগঠিত, সুপরিকল্পিত ও শিক্ষকদের প্রত্যাশা পূরণে ঐতিহাসিক। সমাবেশ সফল করতে দেশের প্রতিটি জেলা থেকে অন্তত একটি বাস রিজার্ভ করে শিক্ষকদের ঢাকায় আনার প্রস্তুতি চলছে। যদিও অনেক উপজেলা থেকেই ৯ থেকে ১০টি করে বাস আসবে। সমাবেশে উপস্থিত শিক্ষকের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন শিক্ষক নেতারা।
জানা গেছে, জাতীয়করণের দাবি আদায়ের সমাবেশ সফল করতে প্রতিটি বিভাগে আটজন করে সমন্বয়ককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় সমন্বয়করা জেলা এবং জেলার সমন্বয়করা উপজেলা পর্যায়ে সমন্বয়ক ঠিক করে দিচ্ছেন। সমাবেশে শিক্ষকদের নির্বিঘ্নে আসা এবং বাড়ি ফেরা নিশ্চিত করতে আগেভাগেই বাস রিজার্ভ করে রাখা হচ্ছে। কোনো কোনো উপজেলা থেকে একাধিক বাস রিজার্ভ করে রাখা হচ্ছে। সমাবেশে আসা শিক্ষকদের নিরাপত্তা এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ৩০০ সেচ্ছাসেবী দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানা গেছে।
সমাবেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী ঐক্য জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘প্রস্তুতি জোরেশোরে চলছে। শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। ১৩ আগস্টের সমাবেশ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। অতীতে অনেকে শিক্ষকদের ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাছিল করতেন। তবে আমরা শিক্ষকদের জন্য কাজ করছি। শিক্ষকদের আস্থা রয়েছে আমাদের প্রতি। এজন্য এবার সারাদেশ থেকে শিক্ষকরা সমাবেশে আসবেন।’
জানা গেছে, ২০১৮ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে টানা ২০ দিন অবস্থান ও অনশন কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের জন্য ৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ও ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়। সে সময় সরকার শিক্ষা জাতীয়করণের প্রতিশ্রুতিও দেয়, কিন্তু পরবর্তীকালে তা বাস্তবায়ন হয়নি। সরকার পতনের পর অন্তবর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈষম্য নিরসনের বিষয়ে আলোচনা হয় এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উৎসব ভাতা ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি ও পরবর্তী বাজেটে বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধিসহ শ্রান্তি বিনোদন ভাতা কার্যকরের ঘোষণা দেন তিনি। তবে শিক্ষা উপদেষ্টার সুস্পস্ট ঘোষণা সত্ত্বেও ২০২৫-২৬ অর্থ বছর শুরু হলেও সরকারি নিয়মে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, শতভাগ উৎসব ভাতা ও শ্রান্তি বিনোদন ভাতার প্রজ্ঞাপন এখনও জারি করা হয়নি।
এ অবস্থায় দাবি আদায়ে আবারও রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। ১৩ আগস্ট সরকারের পক্ষ থেকে দাবি আদায়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা না দিলে পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হবে সমাবেশ থেকে।
এ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চনার শিকার। কোনো সরকারই শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে না। আমরা কঠোর কোনো আন্দোলনে যেতে চাই না। তবে সরকার যদি আমাদের দাবি মেনে না নেয়, তাহলে ক্লাস বর্জনসহ লাগাতার কর্মসূচি পালন করা হবে।’