Image description

নির্বাচনী দিকনির্দেশনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার চিঠির অপেক্ষায় থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ভোটের তারিখের দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন কমিশনকে ভোটের প্রস্তুতি নিতে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়ার ঘোষণা দেন। সে মোতাবেক বুধবার (৬ আগস্ট) হঠাৎ সংবাদ সম্মেলন ডাকেন সিইসি।

নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের কাছে ভোটের প্রস্তুতি তুলে ধরে সিইসি বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ আগামী কয়েক মাসে আরও উন্নত হবে। এখন কোনো সমস্যা দেখছি না। ফেব্রুয়ারিতে ভোট হলে এ সময়ের মধ্যে জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা, দলগুলোর আস্থা অর্জন, ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণই চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, এখন তো সেই অবস্থা নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ইমপ্রুভ করে গেছে। ভোট তো আরও কয়েক মাস আছে। এর মধ্যে দেখবেন যে ইনশল্লাহ এভ্রিথিং ইন প্লেস এবং আমার বিশ্বাস আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিটা কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না।

তিনি বলেন, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা গতকাল তো একটা ঘোষণা দিয়েছেন। উনি বলেছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে রমজানের আগে ইলেকশন করার জন্য আমাদের একটা চিঠি দেবেন। আমি প্রত্যাশা করছি দ্রুত চিঠিটা পেয়ে যাব। কারণ উনার কথার মধ্যে আমরা তো বুঝতে পারি যে খুব দ্রুতই চিঠিটা আমরা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। চিঠি এখনই না এলেও ঘোষিত সময়সীমা ধরে প্রস্তুতি চলমান থাকবে।

সিইসি আরও বলেন, চিঠি না পেলেও বেশ কয়েক দিন ধরে আলোচনা ছিল ইলেকশনের তারিখ নিয়ে। আমাদের প্রস্তুতি আমরা অনেক আগের থেকে নিচ্ছি। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার জন্য বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও আমরা প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছি ইনশআল্লাহ। আমাদের প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি হবে না।

তফসিল কবে দেবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ভোটের তারিখের দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। যেদিন পোলিং ডেট হবে, তার দুই মাস আগে তফসিল হবে। আগে চিঠিটা পেয়ে নিই। চিঠিটা পেলে আমরা আলোচনা করে, আমরা চিন্তা করব যে অমুক দিন ভোট হবে, তার থেকে মাস দুই আগে আমরা শিডিউল ঘোষণা করব।

সব দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে সিইসি বলেন, যেনতেন একটা নির্বাচন করে আপনারা জেতার চেষ্টা করবেন না। আল্লাহর দোহাই, আমাকে সাহায্য করুন। আমি একটা সুন্দর ক্রেডিবল, একটা ট্রান্সপারেন্ট ইলেকশন দিতে চাই। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া পারব না। প্লেয়াররা যদি সবাই ফাউল করার নিয়তে মাঠে নামে, যে আমরা ফাউলই করব, এখন রেফারির পক্ষে সে ম্যাচ পণ্ড হওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব না। লাল কার্ড কজনকে দেখাবেন আপনি? সুতরাং যারা খেলবেন তাদের তো দায়িত্ব আছে বিশাল।

দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি এই মেসেজটা রাজনীতির দলগুলোকে দিতে চাই। দলগুলো একটা মেজর স্টেক হোল্ডার। আমাদের দায়িত্ব হবে খেলার মাঠটা তাদের জন্য সমান করে দেওয়া। তারা সুন্দর একই অপরচুনিটি পায় সেই চেষ্টাটা আমরা করছি এবং করব।

প্রধান কাজগুলোর মধ্যে নিখুঁত ভোটার তালিকা হালনাগাদ খসড়া প্রকাশ এবং ৩১ অগাস্টের মধ্যে চূড়ান্ত হবে জানিয়ে প্রধান কমিশনার বলেন, ভোটারযোগ্য তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করতে তফসিলের মাসখানেক আগে একটা সময় নির্ধারণ করে সম্পূরক তালিকা করা হবে। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর আলোচনা শেষ হলে নির্বাচন কমিশনও অংশীজনের সংলাপে বসবে। আলোচনা করার জন্য এক মাসের একটা প্ল্যান করেছি।

তিনি আরও বলেন, একটা ইলেকশন ইলেকশনের স্বচ্ছতার জন্য যা যা দরকার, তার মধ্যে রুল অব মিডিয়া ইজ নাম্বার ওয়ান। আমরা কিন্তু ইলেকশনটাকে এজ ট্রান্সপারেন্ট এজ পসিবল করতে চাই। আয়নার মতো পরিষ্কার করতে চাই। মানুষ ও বিশ্ববাসী দেখুক যে আমাদের আন্তরিকতার আমাদের চেষ্টার কোনো ঘাটতি আছে কি না। এটা দেখুক আমরা সেটা চাই। লুকিয়ে কোনো কাজ কাজ করতে চাই না।

সিইসি বলেন, ভোটার লিস্টটা হয়ে যাচ্ছে। প্রকিউরমেন্ট টার্গেট ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ করে ফেলতে পারব। টেন্ডার হয়ে গেছে। তারপরে ডিলিমিটেশন (সীমানা নির্ধারণ) স্বচ্ছভাবে হয়েছে। শুনানি করে শেষ করা হভে। একটা বড় কাজ হয়ে গেছে, পার্টি রেজিস্ট্রেশন। ইতোমধ্যে যাচাই-বাছাই চলছে। যারা শর্ত পূরণ করতে পারবে, তাদের বিষয়ে তদন্ত হবে, এরপর কারও আপত্তি আছে কি না, ১৫ দিনের বিজ্ঞপ্তি হবে। এসব বড় কাজ বাই সেপ্টেম্বর, ইনশাআল্লাহ উই ওয়ান্ট টু কমপ্লিট অল দিস বিগ টাস্ক।

তিনি বলেন, ভোটের কাজে সম্পৃক্ত ৮ থেকে ৯ লাখ লোকবলের প্রশিক্ষণের কাজও শুরু হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার পোস্টাল ব্যালটে ভোটের প্রস্তুতির বিষয়ও রয়েছে। আমরা এবার প্রায় ১০ লাখ লোকবলকে পোস্টাল ব্যালটের আওতায় নিয়ে আসর চেষ্টা করব। সাংবাদিকদের বিষয়টি জানা ছিল না; এটাও নোট রাখলাম।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, আমি যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার কথা বলছি, এটার বাস্তবায়ন আপনাদের ওপর নির্ভর করছে। আপনারা যদি এই কাজে যদি আমাকে সহযোগিতা না করেন, আমি তো এটা কাজটা করতে পারব না। আমাদের মূল মেসেজটা হচ্ছে, আমরা এবার এই ইলেকশনটাকে পার্টিসিপেটরি করতে চাই। ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ আমরা চাই।

তিনি আরও বলেন, মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন নাম্বার ওয়ান চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। আসলে মানুষের তো দোষ দিয়ে লাভ নেই, ভোটারদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। ভোটাররা নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা হারিয়েছে। নির্বাচনব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা যে বলেছেন উৎসবমুখ পরিবেশে ঈদের দিনের মতো একটা ইলেকশন দেখতে চান, আমরা সেইটা সামনে রেখেই আমরা কাজ করছি।

এআই নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, কমিশন এআইয়ের অপব্যবহার রোধে কাজ করে যাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি যে আমাদের কর্মকাণ্ড যতই তারা আরও দেখবে ভবিষ্যতে দেখবেন আমাদের ওপর আস্থা সৃষ্টি হবে। কারণ আমরা যখন প্রফেশনালি নিউট্রালি কাজ করছি, তখন অটোমেটিক্যালি আস্থা আসবে, ফিরে আসবে। আমরা কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না। রাজনৈতিক নেতারা অনেক কথা বলতে পারেন, উনাদের ইচ্ছা বললে কোনো অসুবিধা নেই।