
রাজধানীর ভাটারা থানার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গোপন বৈঠকের ঘটনায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনের করা মামলায় মেজর সাদেকুলের স্ত্রী ও অপারেশন ঢাকা ব্লকেডের সক্রিয় এডমিন সদস্য সুমাইয়া তাহমিদ জাফরিন ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ও অপারেশন ঢাকা ব্লকেডের ম্যানেজমেন্ট সদস্য আদনান বিন আব্দুল্লাহ চৌধুরীর বিভিন্ন মেয়াদের রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। রিমান্ড শুনানিতে সুমাইয়া জাফরিন বলেন, দায়া করে আমাকে রিমান্ডে দিয়েনা, কোন কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞাসা করেন।
বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টা দিকে আসামিদের আদালতে হাজির করে সুমাইয়াকে ৭ দিন ও আদনানকে ১০ দিন রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির গুলশান বিভাগের পরিদর্শক মো. জেহাদ হোসেন।
রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আজিজুল হক দিদার, মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল কাইয়ুম নয়ন আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানিতে তারা বলেন, আসামিরা রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার কে বি কনভেনশন হলে সরকারি বিরোধী ষড়যন্ত্রমূলক মিটিং করেছেন। এই আসামিরা অপারেশন ঢাকা ব্লকেডের নামে শাহবাগ দখলের চেষ্টা করেছেন। তারা সরকারকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করছেন। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৩/৪ শ মানুষের সাথে আসামি সুমাইয়া এএসপি পরিচয় দিয়ে মিটিং করেছেন। সুমাইয়া ও তার স্বামী মিলে এই চক্রান্ত করছেন। তারা শেখ হাসিনা খুশি করার জন্য এসব কাজ করেছেন। কেন তারা এতো লোক নিয়ে সমাবেশ করলেন? কেন নিজেকে মিথ্যা পরিচয় দিলেন তা রাষ্ট্রের জানা দরকার। এজন্য আসামির সর্বোচ্চ রিমান্ডের প্রার্থনা করছি।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, সরকার এতোটা ঠুনকো না, যে একটা বৈঠক সরকারের পতন হবে। এতো দুর্বল সরকার নয়। আসামি সুমাইয়াকে সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে এই মামলায় সন্দিহানভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার এজাহারে সুমাইয়ার নাম উল্লেখ নেই। রিমান্ড বিষয়ে মহিলা, শিশুর, অসুস্থ রোগীর শিথিলতা আইনে শিথিলতা রয়েছে। কি কারণে আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাও জানেন আসামিরা। প্রয়োজনে তাদের জেলগেট জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। আসামির রিমান্ড বাতিলপূর্বক জামিনের প্রার্থনা করছি।
এরপর আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন সুমাইয়া তাহমিদ জাফরিন। তিনি বলেন, বসুন্ধরার কে বি কনভেনশন হলে এএসপি পরিচয় অন্য কেউ ঢুকেছে। কিন্তু আমার নামে দোষ চাপানো হচ্ছে। কে বি কনভেনশন হলে আগে থেকে সব কিছু এরেঞ্জ করা ছিলো। আমি আমার স্বামীর সাথে ওখানে গিয়েছিলাম। ওখানে কি ধরনের কাজ হচ্ছি তা সম্পর্কে আমার জানা ছিলো না। আমাকে রিমান্ড দিয়েন না স্যার (বিচারক)। আমি কোনো অন্যায় কাজ করেনি। কোন কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞাসা করেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহ'র আদালত সুমাইয়ার পাঁচ দিন ও আদনানের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ৬ আগস্ট চট্রগ্রামের নিজ বাসা থেকে আদনানকে ও মিরপুরের ডিওএইচএসের বাসা থেকে সুমাইয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলায় অভিযোগ, গত ৮ জুলাই বসুন্ধরাসংলগ্ন কে বি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ একটি গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা মিলে ৩/৪ শ জন অংশ নেন। তারা সেখানে সরকার বিরোধী স্লোগান দেন। বৈঠকে পরিকল্পনা করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়ার পর সারা দেশ থেকে লোকজন এসে ঢাকায় সমবেত হবেন। তারা ঢাকার শাহবাগ মোড় দখল করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করবেন।
ওই ঘটনায় গত ১৩ জুলাই রাজধানীর ভাটারা থানার উপপরিদর্শক জ্যোতির্ময় মন্ডল সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা করে।
পরের দিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা আহাদুজ্জামান মোল্লার স্ত্রী শামীমা নাসরিন শম্পা ও বরগুনার সোহেল রানার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।