
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরকেন্দ্রীক এমন কিছু অনিয়ম-অপকর্ম হচ্ছে যার নজির অতীতের ফ্যাসিস্ট, লুটেরা সরকারের আমলেও নেই। আওয়ামী আমলের দুই মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এবং সাধন চন্দ্র মজুমদার দুর্নীতি-লুটপাটের জন্য বহুল আলোচিত। এবং ওই দুই মন্ত্রীই গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন বর্তমানে। কয়েক দফায় রিমান্ডেও ছিলেন। কিন্তু সেই আওয়ামী লুটেরা মন্ত্রীদেরও অনেকটা ছাড়িয়ে গেছেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলের খাদ্য উপদেষ্টা এবং সচিব। সাপ্তাহিক শীর্ষকাগজে ইতিপূর্বে এ বিষয়ে গুরুতর নজির উপস্থাপনসহ ধারাবাহিক কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ইতিমধ্যে। বিগত দুটি সংখ্যার প্রতিবেদনে ধান-চাল ক্রয় নিয়ে নজিরবিহীন অনিয়মের তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। যদিও ধান-চাল ক্রয় সংক্রান্ত ওই দুটি প্রতিবেদনে সচিবের কথা উল্লেখ করা হয়নি, কিন্তু পরবর্তীতে অনুসন্ধানে দেখা গেছে উপদেষ্টা এবং সচিব উভয়েই ধান-চাল ক্রয় দুর্নীতিতে সরাসরি জড়িত। মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পদের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই দুই ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। বিগত মাসগুলোতে এরা বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ধান-চাল ক্রয়ে অনিয়ম, বদলি-পদায়নে অনিয়মসহ নানাভাবে এরা নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছেন। খাদ্য সচিব মাসুদুল হাসানের চাকরির বয়স আছে চলতি বছরের এই কয়েক মাস। ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে তিনি অবসরে যাবেন। এদিকে উপদেষ্টা পদে আলী ইমাম মজুমদারের মেয়াদ তারও আগে শেষ হয়ে যেতে পারে, যদি নির্বাচনের আগে নতুন সরকার গঠিত হয়। আর এ কারণেই উভয়ে আখের গোছানোর কাজে বেপরোয়াভাবে নেমে পড়েছেন, বলছেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা।
শীর্ষকাগজের ইতিপূর্বের একাধিক প্রতিবেদনে বদলি-পদায়ন সংক্রান্ত গুরুতর অনিয়মের সুনির্দিষ্ট কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে, যেসব অনিয়মের সঙ্গে উপদেষ্টা আলী ইমাম এবং তাঁর ছেলে টিপু সরাসরি জড়িত। আলী ইমাম মজুমদার এ মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন গত ১০ নভেম্বর, মো. মাসুদুল হাসান সচিব পদে যোগ দেন এর এক মাস আগে ২ অক্টোবর, ২০২৪। উভয়ে এ মন্ত্রণালয়ে যোগ দিয়েই শুরুতে লাগামহীন বদলি বাণিজ্যে নেমে পড়েন। সাপ্তাহিক শীর্ষকাগজে ইতিপূর্বে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে তথ্যপ্রমাণও তুলে ধরা হয়েছে। শীর্ষকাগজে ২৫ নভেম্বর, ২০২৪ প্রকাশিত “সচিবের নির্দেশে খাদ্য অধিদপ্তরে বহুল আলোচিত এক অবৈধ পদায়ন নিয়ে তোলপাড়” শীর্ষক প্রতিবেদনে সচিবের গুরুতর দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরা হয়। গত ১২ মে প্রকাশিত “অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাও আওয়ামী লুটেরা ফ্যাসিস্ট মন্ত্রী সাধন-কামরুলের পথ ধরেছেন” শীর্ষক প্রতিবেদনে বদলি-পদায়ন সংক্রান্ত একাধিক গুরুতর অনিয়মের ঘটনা তথ্য-প্রমাণসহ উপস্থাপন করা হয়। তারমধ্যে একটি ছিল গত নভেম্বরের। আলী ইমাম মজুমদার উপদেষ্টা পদের দায়িত্ব নিয়েই যে, আখের গোছানোর কাজে নেমে পড়েন এর জাজ্বল্য প্রমাণ হিসেবে ঘটনাটি তুলে ধরা হয়। এছাড়া সম্প্রতি যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তাতে বদলি, পদোন্নতি, পদায়ন সংক্রান্ত আরো বেশ কিছু গুরুতর অনিয়মের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।
চলতি সংখ্যার প্রতিবেদনে তুলে ধরা হচ্ছে আরো ভয়াবহ রকমের অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য। খাদ্য অধিদপ্তরের একজন শীর্ষ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে অবৈধ সুবিধা দিতে গিয়ে অধিদপ্তরের পরিচালক (৩য় গ্রেড) পদে পদোন্নতির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদিত এসএসবির সুপারিশ দীর্ঘদিন ধরে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন খাদ্য উপদেষ্টা এবং সচিব। যদিও নিয়ম অনুযায়ী এসএসবির সুপারিশকৃত এবং প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদিত এ ধরনের পদোন্নতির নথি আটকে রাখার মোটেই সুযোগ নেই। সঙ্গে সঙ্গেই প্রজ্ঞাপন জারি অর্থাৎ পদোন্নতি কার্যকর করার নিয়ম রয়েছে। এবং এটা অতীতে খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও দপ্তর-অধিদপ্তরে সর্বত্র হয়েও আসছে।
প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদিত এসএসবির সুপারিশের
১৮ মে’র চিঠি এখনো ধামাচাপা খাদ্য মন্ত্রণালয়ে
মো. তাজল ইসলাম, বর্তমানে যিনি চলতি দায়িত্বে খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিদর্শন, উন্নয়ন ও কারিগরি সেবা বিভাগ) এর দায়িত্বে আছেন- একজন শীর্ষ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে চিহ্নিত। নারায়ণগঞ্জসহ ইতিপূর্বে যেসব কর্মস্থলে পদায়নে ছিলেন প্রত্যেকটি কর্মস্থলেই দুর্নীতির কারণে সমালোচিত হয়েছেন। অনেক অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে তাকে নিয়ে, যার নজির গোটা খাদ্য বিভাগে আর নেই। এই শীর্ষ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে অবৈধভাবে চলতি দায়িত্বে অধিদপ্তরের পরিচালক পদে রাখার বিশেষ সুবিধা দিতে গিয়েই প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদিত এসএসবির সুপারিশের ১৮ মে’র চিঠির কার্যকারিতা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করেনি খাদ্য মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন নিয়োগ-১ শাখার উপসচিব মো. তৌহিদ বিন হাসান স্বাক্ষরিত “বিসিএস (খাদ্য) ক্যাডারের খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (গ্রেড-৩) পদে পদোন্নতি” বিষয়ের গত ১৮ মে’র উক্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, “উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রোক্ত স্মারকের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের ৮ মে, ২০২৫ তারিখে ২০২৫ সালের ১৫তম সভার নিম্নবর্ণিত সুপারিশ মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ১৭ মে ২০২৫ তারিখে সদয় অনুমোদন করেছেন:
সিদ্ধান্ত : সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড বিসিএস (খাদ্য) ক্যাডারের খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (গ্রেড-৩) পদে নিম্নোক্ত দুই (০২) জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করে:”
চিঠিতে যে দু’জনের নাম উল্লেখ করা হয় (অর্থাৎ প্রধান উপদেষ্টা যাদের পদোন্নতি অনুমোদন করেছেন) তারা হলেন বিসিএস (খাদ্য) সাধারণ এর মো. আব্দুস সালাম (০২১৫২), পরিচালক (চ.দা.) সরবরাহ, বণ্টন ও বিপণন বিভাগ, মূল পদ: অতিরিক্ত পরিচালক, খাদ্য অধিদপ্তর, ঢাকা। এবং বিসিএস (খাদ্য) কারিগরি এর মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ খান শিবলী (০৩০৪৩), সাইলো অধীক্ষক, ময়মনসিংহ স্টিল সাইলো, ময়মনসিংহ। এই দ’ুজন কর্মকর্তাকে পরিচালক (গ্রেড-৩) পদে পদোন্নতি দিতে বলা হয় চিঠিতে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এই চিঠির শেষে বলা হয়, “০২। বণিতাবস্থায়, সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের সুপারিশের আলোকে উপরিউল্লিখিত কর্মকর্তাগণের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।” জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এই চিঠির স্মারক নম্বর- তারিখের ০৫.০০.০০০০.০০০.১৩৩. ১২.১০৩.২৪-১৬২। চিঠির ওপরে লেখা ছিল- “গোপনীয়” “অতি জরুরি”।
দেখা যাচ্ছে যে, এর দু’দিন পরে ২১ মে খাদ্য মন্ত্রণালয় শুধুমাত্র মো. আব্দুস সালামের পরিচালক পদে পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপন জারির পর ওই দিনই মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোডও করা হয়েছে। কিন্তু একই চিঠির অন্য আরেকজন কর্মকর্তা, মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ খান শিবলীর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন ইতিমধ্যে আড়াই মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত জারি করা হয়নি। যদিও একই সঙ্গে দু’জনেরই পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি করাটা অপরিহার্য ছিল।
প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদিত এসএসবির সুপারিশ অনুযায়ী পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি না করে এভাবে কারো পদোন্নতি আটকে রাখার ক্ষমতা উপদেষ্টা বা সচিবের- এই দু’জনের কারোরই নেই। এটা তারা নিজেরাই জানেন। উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার ইতিপূর্বে একই সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব (এসএসবির সভাপতি) এবং মুখ্যসচিবের দায়িত্বও পালন করেছেন। সচিব মাসুদুল হাসান প্রশাসন ক্যাডারেরই কর্মকর্তা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েও অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। বস্তুত, এরা দু’জন দুর্নীতি ও আখের গোছানোর কাজে এতটা বেপরোয়া যে, সবকিছু জানা সত্ত্বেও নিয়ম-নীতির মোটেই তোয়াক্কা করছেন না। বস্তুত, পরিচালক (পরিদর্শন, উন্নয়ন ও কারিগরি সেবা বিভাগ) পদে চলতি দায়িত্বে তাজল ইসলামকে অবৈধভাবে বহাল রাখার জন্যই উপদেষ্টা ও সচিব এ রকমের বেপরোয়া দুর্নীতি-অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
শীর্ষ দুর্নীতিবাজ এই তাজল ইসলাম ইতিপূর্বে ২০২৩ সালেও শীর্ষকাগজের খবরের শিরোনাম হয়েছেন। তিনি তখন দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারকে বড় অংকের ঘুষ দিয়ে দুই ব্যাচ সিনিয়র কর্মকর্তাদের ডিঙিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এই পরিচালক (পরিদর্শন, উন্নয়ন ও কারিগরি সেবা বিভাগ) পদ বাগিয়ে নিয়েছিলেন। সাপ্তাহিক শীর্ষকাগজে তখন এ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। শীর্ষকাগজে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০ মার্চ, ২০২৩ তারিখের সংখ্যায়।
শীর্ষকাগজের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, “মাত্র দু’সপ্তাহ আগে খাদ্য অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক মো. আনিসুজ্জামানকে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্তি দেয়া হয়। খাদ্য ক্যাডারের সদস্যদের মধ্যে তিনি অত্যন্ত সৎ এবং উত্তম আচরণের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। কোনো কারণ ছাড়াই তাকে এই শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। তিনি বিসিএস ১০ম ব্যাচের অর্থাৎ মন্ত্রণালয়ের সচিবেরও সিনিয়র। আনিসুজ্জামানকে বদলির পর এই পদে তখন নতুন কাউকে দেয়া হয়নি। অর্থাৎ পদটি শূন্য রাখা হয়। কিন্তু তখন পর্যন্ত কেউ বুঝতে পারছিলেন না, কেন পদটি শূন্য রাখা হয়েছে। দু’সপ্তাহ পর গত ২ মার্চের ঘটনায় সবার চোখ খুলে গেছে, শুধু তাজল ইসলামকে পদোন্নতি এবং আকর্ষণীয় পদে পদায়নের জন্যই আগে থেকে এ পদটি শূন্য করা হয়েছিল। পরিচালক, প্রশিক্ষণ আকর্ষণীয় কোনো পদ নয় এবং তাকে এই পদে দেয়াও হয়নি। পরিচালক পর্যায়ের আকর্ষণীয় পদ হলো পরিদর্শন, উন্নয়ন ও কারিগরি সেবা বিভাগের পরিচালক পদ। এই পদে পদায়নে ছিলেন টেকনিক্যাল ক্যাডারের সিনিয়র কর্মকর্তা এফ এম মিজানুর রহমান। গত ২ মার্চের আদেশে তাকে এখান থেকে সরিয়ে প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক পদে ডাম্পিং পদায়ন করা হয়। অন্যদিকে টেকনিক্যাল ক্যাডারের কর্মকর্তা, অতিরিক্ত পরিচালক মো. তাজল ইসলামকে করা হয় পরিদর্শন, উন্নয়ন ও কারিগরি সেবা বিভাগের পরিচালক। খাদ্য অধিদপ্তরে মোট পরিচালক পদ ৭টি। কোটা অনুযায়ী টেকনিক্যাল ক্যাডার পাবে মোট পদের শতকরা ১৭ ভাগ। সেই হিসেবে ৭টি পদের একটি পাবে টেকনিক্যাল ক্যাডার। অতীতে এই নিয়মেই পদোন্নতি পদায়ন হয়েছে। অথচ এখন ৭টি পদের মধ্যে দুটিই দখল করেছে টেকনিক্যাল ক্যাডার, যার নজির অতীতে নেই। মো. তাজল ইসলাম খাদ্য বিভাগে একজন শীর্ষ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবেই পরিচিত। চাকরিজীবনের শুরু থেকে যখন যেখানে কর্মরত ছিলেন দুর্নীতি বিতর্কে জড়িয়েছেন। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জে সাইলোতে কর্মরত থাকাকালে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হন। পরবর্তীতে তাকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করে আনতে হয়েছে। অবৈধভাবে পরিচালক পদে পদোন্নতি এবং পছন্দের পদায়নে তিনি পাঁচ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন বলে চাউর আছে।”
সাপ্তাহিক শীর্ষকাগজে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর ওই সময় এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। যেহেতু সাধন চন্দ্র মজুমদার নিজেই অগ্রিম ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন তাই নতুন করে আর কোনো কিছু করা তার পক্ষে সম্ভবও ছিল না। তবে এ ঘটনাটি খাদ্য অধিদপ্তরে ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়েছিল। এর জের হিসেবে পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে সাধন চন্দ্র মানসিক চাপে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তখনই।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে তদন্তে তাজল ইসলামের দুর্নীতি ও অর্থ প্রদানের মাধ্যমে পদোন্নতি নেয়ার ঘটনা প্রমাণিত হয়। এর ফলে তাকে পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) এর পদ বাতিলপূর্বক পূর্বের অতিরিক্ত পরিচালক পদে পদায়ন করা হয়। ২৮ অক্টোবর, ২০২৪ নিচের পদে পদায়নের এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু এর পরের মাসেই খাদ্য উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান দুর্নীতিবাজ আলী ইমাম মজুমদার। আর এ থেকেই তাজল ইসলামের ভাগ্য খুলে যায়। আলী ইমাম মজুমদারকে ম্যানেজ করে আবারো একইভাবে অবৈধ পদায়ন বাগিয়ে নেয়ার ফন্দি আঁটতে থাকেন তিনি। এবং এক পর্যায়ে সফলও হন। ১৬ এপ্রিল, ২০২৫ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংস্থা প্রশাসন-১ শাখার উপসচিব জয়নাল মোল্লার স্বাক্ষরে মো. তাজল ইসলামকে পুনরায় চলতি দায়িত্বে পরিচালক (পরিদর্শন, উন্নয়ন ও কারিগরি সেবা বিভাগ) পদে পদায়ন করা হয়। এখনো তিনি সেই পদেই বহাল আছেন। প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদিত এসএসবির সুপারিশ অনুযায়ী পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি করা হলে তাজল ইসলাম আর এই পদে থাকতে পারবেন না। নিয়ম অনুযায়ী মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ খান শিবলী এই পদে পদায়ন পাবেন। বস্তুত, এ কারণেই এসএসবির সুপারিশের জরুরি চিঠিটি আটকে রাখা হয়েছে দীর্ঘ আড়াই মাস যাবৎ। এ বাবদ তাজল ইসলাম বড় অংকের অর্থ খরচ করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে। উল্লেখ্য, এসএসবির সুপারিশ অনুযায়ী পরিচালক পদে পদোন্নতিরপ্রাপ্ত মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ খান শিবলী বর্তমানে পোস্তগোলা সরকারি আধুনিক ময়দার মিল এ প্রধান মিলার হিসেবে কর্মরত আছেন।
শীর্ষনিউজ