
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ২ সাংবাদিককে পেটানোর হুমকি দিয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম হৃদয়।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স কক্ষে আলোচনা সভা চলাকালীন হুমকির শিকার হন সময়ের আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আশরাফুল আলম ও এনটিভির বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রোহান চিশতী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের সম্মাননা স্মারক প্রদানের ছবি ও ভিডিও ধারণের সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সামনে থেকে সরে যেতে বলেন শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম হৃদয়। এসময় সময়ের আলোর প্রতিনিধি আশরাফুল আলম পেশাগত কাজে চিত্রধারণ করার কথা জানালে তাকে 'বেয়াদব' বলে সম্বোধন করে থাপড়ানোর হুমকি দেন ছাত্রদলের এই নেতা। এসময় কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, সিন্ডিকেট সদস্য মাহবুবুর রহমান লিটনসহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিককে মারার হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এনটিভির প্রতিনিধি রোহান চিশতীকে একাধিকবার মারতে উদ্যত হন হৃদয়। এসময় প্রক্টর, অন্যান্য শিক্ষক এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হৃদয়কে সরিয়ে নেন।
সময়ের আলোর প্রতিনিধি আশরাফুল আলম বলেন, ছবি তোলার সময় উচ্চস্বরে আমাকে সরে যেতে বললে আমি সাংবাদিক পরিচয় জানিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনের কথা বলি। এরপর তিনি আরও উত্তেজিত হয়ে বলে 'তুই বেয়াদবি করতেছোস, তোরে এখন থাপড়াবো'।
ঘটনার বিষয়ে এনটিভির বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রোহান চিশতী বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাঁধা দিয়ে সময়ের আলোর প্রতিনিধিকে মারার হুমকি দেওয়ায় অনুষ্ঠান শেষে তার কাছে ঘটনার কারণ জানতে চাই। এসময় তিনি বলেন আমি আমার ছোট ভাইকে থাপড়ানোর কথা বলছি। পরে আমি ঘটনার কারণ জানতে চাইলে তিনি আমাকে মারতে উদ্যত হন ও বলতে থাকেন "তুই কি আরও বুঝতে চাইতেছোস?" এসময় একাধিকবার আমাকে 'সাংঘাতিক' বলে সম্বোধন করেন তিনি।
এর আগেও অনুষ্ঠানে একাধিক সাংবাদিকের সাথে উগ্র আচরণ করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার বার্তার প্রতিনিধি মো. মুমিন ইসলাম সবুজ বলেন, রেজিস্ট্রার স্যারের বক্তব্য চলাকালীন সময়ে আমি ভিডিও নেওয়ার জন্য দাঁড়ালে তিনি আমাকে কর্কশভাবে সরে যেতে বলেন। এরপর আরেকজন সামনে দাঁড়ালে একই ব্যবহার করে। পরবর্তীতে জানতে পারি আমাদের একজন সহকর্মীকেও তিনি বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাহিদুল ইসলাম হৃদয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতক ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক পরিচয়ের সুবিধা নিয়ে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে আবারও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে বিশেষ বিবেচনায় ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়েছেন বলে জানান সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন বখতিয়ার উদ্দিন। একাধিক সূত্র মতে, হৃদয় বর্তমান শাখা ছাত্রদলের আরেক যুগ্ম-আহ্বায়ক ও সভাপতি পদপ্রার্থী ইমরান আহমেদ ফরাজির অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
সাংবাদিকদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমরান হোসেন প্রধান। তিনি বলেন, আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম, সে যেই আচরণ করেছে এটা কখনোই কাম্য নয়। আমরা আমাদের সাংগঠনিক জায়গা থেকে ব্যবস্থা নেবো, পরবর্তীতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে। আমরা আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করবো। তবে এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার জাহিদুল ইসলাম হৃদয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির। এর আগে গতবছরের ৮ নভেম্বর ছাত্রদলের পরিচয়ে হলের রুম দখল, সিট ছাড়তে চাপ প্রয়োগ এবং সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়ায় আহ্বায়ক কমিটির আরেক সদস্যকে সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।