Image description

‘রিয়াজ যে আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা নিয়ে গেছেন, শহীদ হয়েছেন, এই আশা আকাঙ্ক্ষা এখনও পূরণ হয়নি। মানুষের শান্তির প্রতিষ্ঠায় দেশের জন্য যুদ্ধ করেছে, কিন্তু শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এখনও মানুষের মধ্যে হানাহানি বন্ধ হয়নি, বৈষম্য দূর হয়নি। এখনও মানুষ আতঙ্কে দিন পার করছে।’

মঙ্গলবার সকালে ঢাকা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষ সমকালের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন শহীদ রিয়াজের মা শেফালী বেগম।

তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। সরকারি উচিত দেশের শান্তি নিশ্চিত করা মানুষ কীভাবে শান্তিতে বসবাস করতে পারে তার ব্যবস্থা করা। সরকারের দায়িত্ব এটা নিশ্চিত করা।’

শেফালী বেগম বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পরে মানুষ দলে দলে বিভক্ত হয়েছে। যে জুলাই ঐক্য নিয়ে স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। সেই ঐকে আবার ফাটল ধরেছেন। আমাদের চাওয়া আবার ঐক্য ফিরে আসুক। মানুষের মধ্যে মানুষের ভালোবাসা জাগুক।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে আমাদের একটি প্রত্যাশা যে, স্বৈরাচার হাসিনার কারণে এত মানুষের জীবন দিতে হয়েছে, এই স্বৈরাচারের দোসরদের বিচার চাই আর কিছুই চাওয়ার নাই। এই সরকারের কাছে প্রত্যাশা- গণহত্যার সঙ্গে জড়িত সবার বিচার নিশ্চিত করুক। বিচারের আগে নির্বাচন নয়। আমরা কোনো নির্বাচন চাই না।’

ছেলে হারানোর দিনের কথা মনে করে শেফালী বেগম বলেন, ‘১৯ জুলাই বিকেলে কেরানীগঞ্জের বাসা থেকে বের হয় রিয়াজ হোসেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দিতে অন্যান্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে সে বসিলা ব্রিজ পেরিয়ে মোহাম্মদপুরে অবস্থান নেয়। মোহাম্মদপুর এলাকায় মাথায় গুলি লেগে নিহত হন রিয়াজ। তার লাশ পড়ে ছিল সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে। অনেক জায়গায় খোঁজার পর ২০ জুলাই বিকেলে রিয়াজের লাশের সন্ধান পায়। ছেলে ইস্পাহানি ডিগ্রি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষ পড়তো। আমাকে বলতো- সবাই যদি ঘরে থাকে তাহলে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি কখনও পূরণ হবে না।’

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার তারানগর ইউনিয়নের ছোট ভাওয়াল গ্রামের বাসিন্দা আসাব উদ্দিনের তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিল রিয়াজ।

রিয়াজের মা বলেন, ‘বাবা ও দুই ভাই কৃষিকাজ করে কোনো রকম সংসার চালায়। সবার ছোট রিয়াজকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। ওর ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি করবে। ও বলতো, এই আন্দোলন না করলে মেধাবীদের অনেকেই নাকি চাকরি পাবে না। আমার কলিজার টুকরা সন্তানকে যারা মেরেছে আল্লাহপাক তাদের উপযুক্ত বিচার করবেন।’

জানা যায়, বাবার সঙ্গে কৃষিকাজের পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিলেন রিয়াজ। বাড়তি উপার্জনের আশায় কিছুদিন ধরে একটি কুরিয়ার সার্ভিসে ডেলিভারিম্যানের চাকরি নেন। ইচ্ছে ছিল সরকারি চাকরি করার।