
চট্টগ্রামে জাল সনদ দিয়ে মাদক মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ আলীকে বিদ্যালয়ের সভাপতি নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, যে বিষয়ে তিনি সনদ জমা দিয়েছেন তখন সে নামে কোনো বিভাগই চালু ছিল না। তাই সনদটি জাল।
ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার উত্তর গোমদন্ডী উচ্চ বিদ্যালয়ে। জাল সনদের বিষয়টি জানার পর নড়েচড়ে বসেছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটি নিয়ে এখন বিব্রত দায়িত্বশীলরা। এ ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়ার পর এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করছেন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা।
বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইলিয়াস উদ্দিন আহাম্মদ গতকাল রোববার সমকালকে জানান, অভিযুক্তকে সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দিতে শিগগির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলী নিজেকে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে পরিচয় দেন। ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বোর্ডের সাবেক বিদ্যালয় পরিদর্শক গত ২৪ মার্চ ড. বিপ্লব গাঙ্গুলীর সই করা এক চিঠিতে বোয়ালখালীর উত্তর গোমদন্ডী উচ্চ বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটি গঠন করার বিষয়টি জানানো হয়। এজন্য বোর্ডে বেশকিছু ডকুমেন্ট জমা দেন মোহাম্মদ আলী। সেখানে দেখা যায়, তিনি মাদ্রাসা বোর্ড থেকে ১৯৯৭ সালে সেকেন্ড ডিভিশনে দাখিল ও ১৯৯৯ সালে থার্ড ডিভিশনে আলিম পাস করেন। এরপর তিনি ২০০৩ সালে চট্টগ্রামের সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকে উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে একটি সনদ জমা দেন। সেখানে বিষয় উল্লেখ করেছেন, তিনি ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার। অথচ সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ সমকালকে জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার নামে কোনো বিভাগই ছিল না। ২০১০ সালে ইসলামিক স্টাডিজ নামে একটি বিভাগ চালু করা হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইলিয়াস উদ্দিন আহাম্মদ সমকালকে বলেন, ‘জাল সনদে বিদ্যালয়ের সভাপতি হওয়ার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। তাছাড়া তিনি নাকি অনেক মামলার আসামিও। এ সংক্রান্ত বেশকিছু অভিযোগও পেয়েছি আমরা। বিষয়টি উদ্বেগের। এ সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এত অভিযোগের পরও তিনি কিভাবে সভাপতি মনোনীত হয়েছেন সেসব বিষয়ও তদারকি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কারও গাফিলতি, অবহেলা আছে কিনা সেটিও দেখছি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছি আমরা। সভাপতি পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দিতে শিগগির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে বোর্ড।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর আমাদের চোখ কপালে উঠে। কারণ যখন ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার বিভাগ থেকে স্নাতকে উত্তীর্ণ হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নামে কোনো বিভাগই চালু ছিল না। বিভাগ চালু না থাকাকালীন সময়ে বিভাগ থেকে পাস দেখানো জাল সনদ ছাড়া আর কিছুই নয়। বিষয়টি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, জাল সনদটি বাদ দিলে এখন মোহাম্মদ আলীর শিক্ষাগত যোগ্যতা দাঁড়ায় আলিম পাস। অথচ সবশেষ নীতিমালা অনুযায়ী বিদ্যালয়ের সভাপতি হতে কমপক্ষে স্নাতক পাস হতে হবে। তাছাড়া মাদকের মতো গুরুতর মামলার চার্জশিটভুক্ত হলে এসব পদে থাকার তো কোনো সুযোগই নেই। এই অবস্থায় বিদ্যালয়ের সভাপতির পদটি ভাগিয়ে নিতেই, দলীয় পদ ব্যবহার করে মোহাম্মদ আলী জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন বলে মনে করছেন বোর্ড কর্মকর্তারা।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর বোয়ালখালীতে এক হাজার লিটার চোলাই মদ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বোয়ালখালী থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুমন কান্তি দে বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে এসআই রহমত উল্লাহ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালত অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন। পরোয়ানামূলে ২০২২ সালের ২২ জুলাই মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তিনি জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন। বর্তমানে মাদক মামলাটি বিচারাধীন।
অভিযোগের বিষয়ে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে মাদকের মামলাটি করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা আছে। ভিন্ন সমস্যাকে কেন্দ্র করে মাদক মামলাটি সম্প্রতি সামনে আনা হয়েছে।’