Image description
বাঁ থেকে- যুবলীগ ক্যাডার জাফর ও ভিডিও থেকে নেওয়া ফুটেজ। ছবি : সংগৃহীত

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে শহীদুল ইসলামের এক দোকান কর্মচারীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় অভিযোগপত্রে (চার্জশিট) আসামির নাম নিয়ে হেরফেরের অভিযোগ উঠেছে।

উক্ত মামলা হওয়ার প্রায় এক বছর পর গত ২৪ জুলাই চট্টগ্রাম আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার উপপরিদর্শক মো. ফয়সাল।

অভিযোগ, গুলিবর্ষণের ঘটনায় গণমাধ্যমে যুবলীগ ক্যাডার জাফরের নাম এলেও অভিযোগপত্রে নাম নেই। পুলিশ চার্জশিটে হেরফের করেছে। তবে পুলিশের দাবি, জাফরের নাম থাকলেও পিতা এবং ঠিকানা অজ্ঞাত। এখানে নাম বাদ দেওয়া বা হেরফের করার সুযোগ নেই। জাফরের পুরো ঠিকানা পেলে তদন্ত করা হবে।

গত বছরের জুলাই আন্দোলনের একাধিক ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবর্ষণের ঘটনায় নেতৃত্ব দেন যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর। বাবরের নেতৃত্বে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দেখা গেছে তার অনুসারী যুবলীগ ক্যাডার জাফরকে। সংঘর্ষে যেসব অস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়েছে, সেগুলো একটি প্রাইভেটকারে করে সরবরাহ করা হয়েছে।

নিবন্ধিত এই প্রাইভেটকারটির মালিক যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের ঘনিষ্ঠ জাফর। প্রাইভেটকারটি থেকে একটি ব্যাগ নামানো হয়। ওই ব্যাগে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় চট্টগ্রামে হওয়া ১৫১টি মামলার মধ্যে এটিই প্রথম চার্জশিট। মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ১২৮ জনকে।

চার্জশিটে জাফরের নাম অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসআই মো. ফয়সাল কালবেলাকে বলেন, মামলার এজাহারে শুধু জাফরের নাম ছিল। পিতার নাম এবং ঠিকানা অজ্ঞাত ছিল। সে কারণে তদন্তে অভিযুক্ত জাফরের খোঁজ মিলেনি। যেকোনো মামলায় অভিযুক্ত আসামির পিতার নাম-ঠিকানা থাকলে তদন্ত করতে সুবিধা হয়। তার পুরো ঠিকানা পেলে তদন্তপূর্বক তাকে চার্জশিটে অর্ন্তভুক্ত করা হবে।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ঘটনার দিন পিস্তল হাতে ছিলেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক উপ-অর্থ সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী। তিনি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। কাটা বন্দুক হাতে ছিলেন যুবলীগের নেতা পরিচয় দেওয়া তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী মো. ফিরোজ। তিনি নিজেকে আ জ ম নাছিরের অনুসারী পরিচয় দেন। তবে তিনি কোনো পদে নেই।

শটগান হাতে ছিলেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সংগঠক মো. দেলোয়ার। তিনি হেলাল আকবরের অনুসারী। পিস্তল হাতে ছিলেন যুবলীগের কর্মী এনএইচ মিঠু ও ঋভু মজুমদার। তারা দুজন নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। নুরুল আজিম শিক্ষামন্ত্রীর অনুসারী।

পিস্তল হাতে চান্দগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিন ফরহাদ, যুবলীগের কর্মী মো. জালাল ওরফে ড্রিল জালাল ও মো. মিজানকেও দেখা গেছে। শটগান হাতে ছিলেন যুবলীগের কর্মী মো. তৌহিদ। তারা সবাই আওয়ামী লীগের সাবেক কাউন্সিলর মো. এসরালের অনুসারী। এসরাল আ জ ম নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অস্ত্র হাতে থাকা ফিরোজ, জালাল, তৌহিদ ও ঋভু মজুমদার এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

চার্জশিটে অভিযুক্ত যুবলীগ ক্যাডার জাফরের নাম না থাকার কারণ জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আফতাব উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, জাফর নামের ব্যক্তি তো একজন না। হাজার হাজার জাফর আছে। তবে যে ক্যাডার জাফরের কথা বলা হচ্ছে তার পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা পেলে তদন্ত সাপেক্ষে উক্ত মামলায় চার্জশিটে নথিভুক্ত করা হবে। অপরাধীদের নাম বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ বা এখতিয়ার নেই। তাছাড়া আমাদেরও কোনো সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য, অভিযোগপত্রে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় হত্যার অভিযোগে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ছাড়াও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও রেজাউল করিম চৌধুরী; সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নদভী, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, এমএ লতিফ, এসএম আল মামুন, মহিউদ্দিন বাচ্চু, আবদুচ সালাম, দিদারুল আলম, নোমান আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর এসরারুল হক, শৈবাল দাশ, জহুরুল আলম প্রমুখ। তাদের মধ্যে আবু রেজা মুহাম্মদ নদভী, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এবং এমএ লতিফ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।