Image description

রাজিব আহম্মদ  (Rajib Ahamod)

অনলাইনে দেখলাম, প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান, বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, শিবির নেতা নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলছেন, অভ্যুত্থানের সময়ে কালের কণ্ঠ ছাত্র জনতার পাশে ছিল। স্বচ্ছ ভূমিকা পালন করেছে। কালেরকণ্ঠকে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জামায়াত নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ইসলামী আন্দোলন নেতারা। এতগুলো মানুষ যখন বলেছে, তাহলে তো আংশিক না পুরোপুরি সত্য হওয়ার কথা।
যাই হোক, ১৭ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কালের কণ্ঠ খুটিয়ে পড়ে সত‌্যতা পেলাম। ১৬ জুলাই প্রথম আলো, সমকালসহ অন্যান্য কিছু পত্রিকার লিড ছিল, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা'। কালের কণ্ঠ অত্যন্ত দায়িত্বপূর্ণ শিরোনাম করে, 'দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ'।
১৭ জুলাই তিন চারটি পত্রিকার শিরোনামে ছিলেন রংপুরের আবু সাঈদ। সেদিন কালের কণ্ঠ একটি সত্য তুলে ধরে ছিল, তাহলো চট্টগ্রামের ছাত্রলীগের ওপর নারকীয় হামলা করেছে শিবির ও ছাত্রদল। ১৫ জনকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে। এ খবর অন্য কাগজে সেভাবে ছিল না। ১৯ জুলাই অন্য পত্রিকার শিরোনামে ছিল, পুলিশের গুলিতে নিহতের সংখ্যা ৩৯ থেকে ৪৪। কালের কণ্ঠ জানিয়েছিল নিহত ২৬। তবে কেউ যে গুলিতে মারা গেছেন, তা তদন্ত ছাড়াই না জানিয়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়। প্রধান ছবি ছিল, আন্দোলনকারীরা গাড়ি টাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খবর ছিল সহিংসতা করছে স্বাধীনতা বিরোধীরা। এটাও একটি ব্যতিক্রমি খবর ছিল।
১৯ জুলাই ইতিহাসের রক্তাক্ততম দিন।২০ জুলাই অন্য কয়েকটি পত্রিকা নিহতের সংখ্যা ৭০ অধিক লিখলেও, কালের কণ্ঠ দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ছোট করে লিডের নীচে জানায় নিহত ৩৯। সেদিন তাদের অনলাইনে জেনেছিলাম, টঙ্গীতে তনয় চন্দ্র নিহত হয়েছে ছাত্রদল শিবিরের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময়ে। এটাও ছিল অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম তথ্য।
২১ জুলাই কালের কণ্ঠ জানিয়েছিল, কারফিউয়ের কারণে দুর্বৃত্তরা (আন্দোলনকারী) মূল সড়ক ছেড়ে অলিগলিতে চলে গেছে। ২৩ জুলাই আরো একটি ভালো খবর দিয়েছিল। সেদিন পড়েছিলাম, বসুন্ধরা মালিক প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, 'আমাদের সামনে উন্নয়ন আর উন্নয়ন।' তা রক্ষায় আন্দোলননকারী দমনে কঠোর হতে বলেছিলেন।
পরের দিনগুলোতে বিচ্ছিন্ন ভাবে দুই চারটি পত্রিকা গণগ্রেপ্তার, হাসপাতালে হাজারো গুলিবিদ্ধকে চিকিৎসা না দেওয়া, শত মরদেহ ময়না তদন্ত ছাড়া পরিবারকে দেওয়া, মানবাধিকার লঙ্ঘন, রিমান্ডের নামে নির্যাতন, আন্দোলনের নেতাদের গুম, শিশুদের নির্বিচার হত্যার মতো বোরিং খবর দিলেও, কালের কণ্ঠ বিশেষ কিছু সাড়াজাগা‌নো ব‌্যতিক্রমী খবর দিয়েছিল। যেমন মুগ্ধ খুন হন ছাত্রদল ও শিবির নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ায়, চট্টগ্রামের হৃদয় চন্দ্র তারুয়া পুলিশের গুলিতে নয় অন্যভাবে নিহত, আন্দোলনকারীরা নির্দলীয় নয়, তারা ছাত্রশক্তির নেতা ইত্যাদি ইত‌্যা‌দি।
তবে আওয়ামী লীগ এবং মোহাম্মদ এ আরাফাতের পেইজ থেকেও এগুলো খবর প্রকাশের একদিন আগেআ জানানো হচ্ছিল। কিছু পত্রিকা তা মিস করলেও, কালের কণ্ঠ কৃ‌তি‌ত্বের স‌ঙ্গে ধর‌তে পে‌রে‌ছিল। একটা ব্রেকিং খবর ছিল রেমিট্যান্স বন্ধের ষড়যন্ত্র চলছে। ৪ আগস্ট কালের কণ্ঠই আমাদের জানায়, ছাত্ররা সরকার পতনের এক দফা নয় অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। তার আগের তিনদিন কালের কণ্ঠ জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ হচ্ছে, হবে এবং হয়েছে; এ সংক্রান্ত ২২টি খবর প্রকাশ করে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে। সে সময়ে অন্য কয়েকটি পত্রিকা জামায়াত শিবির নিষিদ্ধকে গুরুত্ব না দিয়ে মৃত্যু, আন্দোলন, বর্বরতা, এগুলো নিয়ে ঘ্যানঘ্যানে খবর দিচ্ছিল। ভালো কথা ২৭ জুলাই অনুসন্ধানের কালের কণ্ঠই জানিয়েছিল 'সহিংসতার নেপথ্যে বিএনপি জামায়াতের ৫০ শীর্ষ নেতা'। অন্যরা এমন ব্রেকিং খবর দিতে ব্যর্থ হয়।
৪ আগস্ট ছিল সবচেয়ে রক্তাক্ত। ৫ আগস্ট প্রথম আলো, সমকাল, ডেইলি স্টার, নিউজ এজসহ কিছু কাগজে সেদিন পাতাজুড়ে অস্ত্রধারী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ছবি ছিল। আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ছবি ছিল। কালের কণ্ঠ সেদিন নিগূঢ় খবর তুলে ধরে ব্যাকপেইজে লিড ছবি দেয়, তাতে দেখা যায় আন্দোলনকারীদের হামলায় আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হয়েছে, সাংবাদিকদের পেটাচ্ছে আন্দোলনকারীরা। প্রথম পাতাতেও আন্দোলনের নামের সহিংসতার খবর ছবি দেয়। সেদিন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা হুঁশিয়ারিও গুরত্ব দিয়ে প্রকাশ করে। অন্যরা ছোট্ট করে দিয়েছিল অবশ্য।
৬ আগস্ট কালের কণ্ঠও অন্যদের মতো গতানুগতিক প‌ত্রিকা হয়ে যায়। একপাতা ছবি দিয়ে জানায়, অভ্যুত্থান হয়েছে। ছবির মাঝে বিজয় ‌চিহ্ন দেখানো নাহিদ। আর দ্বিতীয় পাতায় শহীদ আবু সাঈদ। সাংবা‌দিকতার মু‌ন্সিয়ানা এখা‌নেই। কা‌লের কণ্ঠ সেদিনই বুঝ‌তে ‌পে‌রে‌ছিল, এই দুই ব‌্যক্তি নিকট ভ‌বিষ‌্যতে গুরত্বপূর্ণ হ‌বেন।
কালের কণ্ঠ অবশ্য আগের দিনই ' তারেক জিয়া : দেশদ্রোহিতার নজির' টাইপের একটি কালজয়ী লেখা তুলে নেয়। তারেক রহমান যে দেশ থেকে টাকা তুলে বিদেশে আয়েশি জীবন কাটাচ্ছেন, এ অনুসন্ধানী খবর তুলে নিয়েছে। তবে শিবির যে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী সংগঠন এ অনুসন্ধানী খবরটি এখনো অবশ্য আছে।
যাই হোক এসব খবর বা জুলাই অভ্যুত্থানের সময়কার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগু‌লোর কৃতিত্ব বা দায় কালের কণ্ঠের সাংবাদিক, কর্মীদের নয়। যারা তখন কর্তাব্যক্তি ছিলেন, সব কৃতিত্ব তাঁদের। তাঁদের একজন এখ‌নো কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছেন। আর সবাই‌কে রাজাকার, ঘাপ‌টি মে‌রে থাকা বিএন‌পি জামায়া‌ত ম‌নে করা সিন‌ড্রো‌মে ভোগা ভাই‌টি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থে‌কে এখন ইসলামী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী হ‌য়ে‌ছেন। ফ্যাসিবাদের দোসর চিহ্নিত কর‌ছেন। তাঁকে শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা।
সংযু‌ক্তি : সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় নী‌তি ও মতপ্রকাশ স্বাধীন থাকুক। মানু‌ষের প‌ক্ষে থাকুক। শত সহকর্মী সাংবা‌দি‌কের কর্মস্থল, রু‌টিরু‌জির উৎস হি‌সে‌বে কা‌লেরকণ্ঠ এ‌গি‌য়ে যাক, পু‌রোপু‌রি স‌ত্যে বিক‌শিত হোক, শতবর্ষী হোক। প্রতিষ্ঠাবা‌র্ষিকীর শু‌ভেচ্ছ।