বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে এক অভিনব প্রতারক চক্রের সন্ধান মিলেছে। চক্রটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার ভুয়া চিঠি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
সম্প্রতি এমন একটি চক্রকে ধরেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ। সেই চক্রের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পিয়নের সম্পৃক্ততা মিলেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্বস্ত সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, ডিসেম্বর মাসের ২৬ তারিখ কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ থেকে ১২টি কারিগরি ও মাদ্রাসাকে নতুন এমপিওভুক্ত করে একটি ভুয়া চিঠি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। চিঠিটি এমন একদিন প্রকাশ করা হয়, যার আগের দিন সচিবালয়ে আগুন লাগে এবং ওই দিন বিদ্যুৎ ছিল না। এমনকি ওই দিন বেশিরভাগ কর্মকর্তা নিরাপত্তার কারণে সচিবালয়ে আসেননি। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চক্রটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ভুয়া চিঠি আপলোড করে।
বিষয়টি জানাজানির পর মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে চিহ্নিত করেছে।
প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার জন্য ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা করে চুক্তি হয়েছিল। এর মধ্যে চিঠি আপলোডের সময় অর্ধেক, বাকি টাকা এমপিও হওয়ার পর নেওয়ার চুক্তি ছিল। এই প্রজেক্ট সফল হলে আরও ১২টি মাদ্রাসার চিঠি প্রস্তুত ছিল
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি ভুয়া চিঠি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়ার মতো দুঃসাহস এর আগে কেউ দেখায়নি। নজিরবিহীন এ জালিয়াতির ঘটনায় তোলপাড় চলছে মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরে। এর সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি কলেজের প্রিন্সিপাল পরিচয় দেওয়া রবিউল নামে একজনের সম্পৃক্ততা মিলেছে।
অভিযোগ উঠেছে, প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার জন্য ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা করে চুক্তি হয়েছিল। এর মধ্যে চিঠি আপলোডের সময় অর্ধেক, বাকি টাকা এমপিও হওয়ার পর নেওয়ার চুক্তি ছিল। এই প্রজেক্ট সফল হলে আরও ১২টি মাদ্রাসার চিঠি প্রস্তুত ছিল।
তাছাড়া একইভাবে স্কুল-কলেজ শাখায় ভুয়া চিঠিতে এমপিওভুক্ত করার চেষ্টা ভেস্তে যায় গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে।
জানতে চাইলে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি জানার পরপরই তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। প্রকৃত ঘটনা কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর বলতে পারব। তবে এর সঙ্গে যারা যুক্ত তারা অবশ্যই শাস্তির আওতায় আসবে।
যেভাবে ওয়েবসাইটে প্রকাশ হয় ভুয়া চিঠি
গত ২৬ ডিসেম্বর কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের ওয়েবসাইট tmed.gov.bd-তে ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নতুন করে এমপিওভুক্ত করা সংক্রান্ত একটি চিঠি আপলোড করা হয়। সেই চিঠিতে মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর ছিল। যদিও চিঠি আপলোড হওয়ার কিছুক্ষণ পর সেটি সরিয়ে ফেলা হয়।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে সচিবালয়ে একটি ভবনে আগুন লাগে। পরদিন ২৬ ডিসেম্বর সচিবালয়ে বিদ্যুৎ ছিল না, কর্মকর্তাদের প্রবেশাধিকারও সীমিত করা হয়। স্বাভাবিক কোনো কাজকর্ম সেদিন হয়নি। ঠিক ওই দিনই এমপিওভুক্তকরণের ভুয়া সেই চিঠি অনলাইনে আপলোড করে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের আইটি সেল। চিঠিটি আপলোড করে কম্পিউটার অপারেটর শাহিন। তার ভাষ্য, ২৬ তারিখ তার টেবিলে চিঠিটি পড়েছিল। সচিবালয়ে বিদ্যুৎ না থাকায় চিঠিটি বাইরে থেকে আপলোড করা হয়।
ঘটনাটি ভুলবশত হয়েছে দাবি করে কম্পিউটার অপারেটর মো. শাহিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে চিঠিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাইরে নিয়ে আপলোড করেছি।
১২টি প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে এমপিওভুক্তির চিঠি দেখার পর সেটি কেন যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজনবোধ করেননি— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, চিঠিটি দেখে ভুয়া মনে হয়নি। কারণ, একটি চিঠিতে যা যা থাকার কথা সবই এটিতে ছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের ছুটি ছিল, পরদিন ২৬ ডিসেম্বর অগ্নিকাণ্ডের কারণে সচিবালয়ে অঘোষিত ছুটি, এরপর শুক্র ও শনিবার বন্ধ। অর্থাৎ মাঝে চারদিন বন্ধের সুযোগে ভুয়া চিঠিটি আপলোড করে চক্রটি। চিঠির বিষয়টি জানাজানির পর তা সরিয়ে ফেলা হয়।
ডিসেম্বর মাসের ২৬ তারিখ কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ থেকে ১২টি কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসাকে নতুন এমপিওভুক্ত করে একটি ভুয়া চিঠি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। চিঠিটি এমন একদিন প্রকাশ করা হয়, যার আগের দিন সচিবালয়ে আগুন লাগে এবং ওই দিন বিদ্যুৎ ছিল না
এ প্রসঙ্গে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের প্রোগ্রামার মো. নুরুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই দিন আমি ছুটিতে ছিলাম। ঘটনাটি তিন দিন পর ২৯ ডিসেম্বর শুনেছি। এরপর তদন্ত কমিটি হয়েছে। চিঠি আপলোড করার অ্যাকসেস সীমিত করেছি। এমন জালিয়াতির ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি।
এদিকে এমন জালিয়াতির ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে মন্ত্রণালয়। তাৎক্ষণিক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। চার সদস্যের কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এই চিঠি ওয়েবসাইটে কীভাবে প্রকাশ হলো, তা উদঘাটন এবং এর সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কেউ জড়িত কি না তা বের করতে কমিটিকে বলা হয়।
কমিটির আহ্বায়ক এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের যুগ্ম সচিব জহুরুল আলম চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, কমিটির সদস্যরা ইতোমধ্যে চিঠি আপলোডে যুক্তদের সঙ্গে কথা বলে তাদের জবানবন্দি নিয়েছেন। শুধু আইটি সেল নয়, এর সঙ্গে অন্য কোনো চক্র যুক্ত আছে কি না তাও খোঁজা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জালিয়াতির এ ঘটনার সঙ্গে মন্ত্রণালয়, কারিগরি ও মাদ্রাসা অধিদপ্তরের বড় একটি চক্র জড়িত। চিঠিতে যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে এসেছে সেই প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বললে চক্রকে চিহ্নিত করা সহজ হতো। কিন্তু কমিটি শুধু অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেই দায় সারছে। ফলে মূল চক্রটিকে বের করা যাচ্ছে না।
মন্ত্রণালয় ছাড়াও বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। গত ৬ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে তারা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে বলে ডিবি সূত্রে জানা গেছে।
ভুয়া চিঠিতে যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম
এমপিওভুক্তির ভুয়া যেই চিঠিটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয় সেটিতে স্বাক্ষর ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তারিখ ছিল ৩১ জুলাই, ২০২৪; অর্থাৎ শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পাঁচ দিন আগের। ওই দিনের তারিখ ব্যবহার করা চিঠিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি স্মারক নম্বর ব্যবহার করা হয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সাজ্জাদ হোসেনের স্বাক্ষর করা চিঠিটি কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো হয়।
চিঠিতে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার তেথুলিয়া পীরগাছা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজম্যান্ট কলেজ ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, রাজশাহীর বাঘমারা উপজেলার দ্বীপনগর মহিলা টেকনিক্যাল বিজনেস ম্যানেজম্যান্ট কলেজ, পবা উপজেলার পীয়ারলেস বিএম কলেজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবপুরের সোনামসজিদ মাধ্যমিক কারিগরি ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, ভোলাহাটের ঝোউবোনা কৃষি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট, গোমস্তাপুরের রহনপুর কৃষি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট, নাচোল উপজেলার নাচোল কৃষি ডিপ্লোমা কলেজ, নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার নুরুল্যাবাদ জোতপাড়া বি এম কলেজ, নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার কালিকাপুর কৃষি ও কারিগরি কলেজ, দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার ইচ্ছামতি ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা অ্যান্ড ভোকেশনাল এবং গাইবান্ধার আব্দুল কদ্দুস সরকার কৃষি কলেজ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের নাম উল্লেখ রয়েছে।
এ ছাড়া অন্য আরেকটি চিঠি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে। সেখানে উত্তরবঙ্গের আটটি জেলার ১২টি মাদ্রাসার নাম ছিল।
সূত্রে জানা যায়, জালিয়াতি করতে গিয়ে ধরা পড়া চিঠির প্রজেক্ট সফল হলে নতুন করে আরও ১২টি মাদ্রাসার নাম সম্বলিত চিঠি অনলাইনে আপলোড করা হতো।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের রহনপুর কৃষি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষক বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও করে দেবে– এমন শর্তে ৫০ লাখ টাকার চুক্তি হয়। পরে ২৬ ডিসেম্বর এমপিও’র চিঠি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোডের পর টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেয় চক্রের লোকজন। সেই চিঠি যাচাই-বাছাই করে দেখি পুরোটাই ভুয়া। আমরা টাকা না দিলেও অনেকেই টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ে শক্তিশালী সিন্ডিকেট, দালালদের মধ্যে অন্যতম রবিউল
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্ত, স্কুল-কলেজ অনুমোদন, বদলিসহ নানা বাণিজ্যের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কর্মচারী ও পিয়নরা জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে মন্ত্রণালয়ে কাজ করার সুবাদে তারা শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কাজ ভাগিয়ে আনেন এমন কয়েকজন দালাল নিয়মিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যাতায়াত করেন। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন রবিউল ইসলাম। এমপিওভুক্তির ভুয়া এই চিঠির সঙ্গে তার সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকার তথ্য মিলেছে।
তদন্ত কমিটির একজন সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের নামে চিঠি হয়েছে, সবগুলো উত্তরবঙ্গের। তদন্তে রবিউল নামে এক ব্যক্তির সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছি। তার নিজের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের আটটি প্রতিষ্ঠান ছিল তালিকায়। বাকিগুলো রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের। ওই ব্যক্তি নিজেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি কলেজের প্রিন্সিপাল দাবি করে নিয়মিত সচিবালয়ে যাতায়াত করতেন। তিনি মূলত একজন দালাল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নানা ধরনের কাজ বাগিয়ে এনে মন্ত্রণালয়ের লোকদের দিয়ে করিয়ে নেন। রবিউল ছাড়া মন্ত্রণালয়ে বদলি বা এমপিও কাজ করা সম্ভব নয় বলেও রাজশাহী অঞ্চলে প্রচার করা হয়েছিল।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রবিউল সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের একজন এপিএসের ছত্রছায়ার মন্ত্রণালয়ে কাজের সুযোগ পান। এরপর দীপু মনি, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সময়েও তা চালিয়ে যান। মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন পিয়ন, কর্মকর্তা-কর্মচারী রবিউলের সিন্ডিকেটে সক্রিয়। রবিউল বিভিন্ন উপহারের বিনিময়ে এদের কাছ থেকে কাজ হাসিল করতেন। মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়া ছিল তার।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রবিউল ইসলাম কখনও নিজেকে শিক্ষক, কখনও সাংবাদিক একপর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগত কাজে সচিবালয়ে যাই। এই ভুয়া চিঠির সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
আপনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোন কলেজের প্রিন্সিপাল— জানতে চাইলে রবিউল বলেন, সেটি আপনাকে বলতে চাইছি না।
দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্ত, স্কুল-কলেজ অনুমোদন, বদলিসহ নানা বাণিজ্যের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কর্মচারী ও পিয়নরা জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে মন্ত্রণালয়ে কাজ করার সুবাদে তারা শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন
স্কুল-কলেজ এমপিওতে একই চক্র
সর্বশেষ ২০২১ সালে নতুন করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। এরপর থেকে সেই কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কখন নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে, তাও প্রায় অনিশ্চিত।
অভিযোগ রয়েছে, রবিউল চক্রটি ২০২২ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে দেবে বলে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয়। সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় অনলাইনে চিঠি আপলোড করে অভিনব এক প্রতারণার আশ্রয় নেন তিনি। উদ্দেশ্য ছিল— এই চিঠি দেখিয়ে আঞ্চলিক অফিস থেকে শিক্ষকদের এমপিও ভাগিয়ে নেওয়া।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ (মাউশি) সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে মাউশি থেকে ২০টি প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া চিঠি করিয়ে নেওয়ার জন্য এমপিও শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে চাপ দেয় চক্রটি। ওই কর্মকর্তা এতে রাজি না হওয়ায় তার ওপর ক্ষিপ্ত হয় চক্রের সদস্যরা এবং তাকে ওই শাখা থেকে বদলি করা হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এমপিও শাখার একজন উপসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে একই ধরনের প্রতারণা করে এমপিওর চিঠি এই বিভাগ থেকে অনলাইনে আপলোড করার চেষ্টা হয়েছিল। বিষয়টি আমরা জেনেছি ডিসেম্বর মাসে। এ ধরনের প্রতারণা থেকে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।