Image description
» রাজনৈতিক সব পক্ষকে নিয়ে ৫ আগস্ট ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে সরকার । » সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকতে হবে : এনসিপি » স্বীকৃতি অপ্রয়োজনীয় মনে করে বিএনপি ।

অনিশ্চয়তা - সংশয় কাটিয়ে নির্ধারিত সময়েই ঘোষিত হচ্ছে জুলাই ঘোষণাপত্র । সরকারের পক্ষ থেকে গতকাল শনিবার জানানো হয়েছে , স্বৈরাচার পতনের বর্ষপূর্তির দিন ৫ আগস্ট মঙ্গলবার সব পক্ষের উপস্থিতিতেই উপস্থিতিতেই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করা হবে । তবে ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির বিষয়টি এখনো খোলাসা হয়নি । সাংবিধানিক স্বীকৃতির কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও কোন ধারায় তা যুক্ত হবে, সেটি পরিষ্কার করা হয়নি । এ নিয়ে সরকারের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে চাননি ।

জুলাই আন্দোলনের ছাত্রনেতাদের গঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির ( এনসিপি ) পক্ষ থেকে সংবিধানের প্রস্তাবনায় জুলাই ঘোষণাপত্র রাখার দাবি করা হয়েছে । জামায়াতে ইসলামী এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছুই বলছে না । আর বিএনপি এটি সংবিধানের তফসিলে যুক্ত করার পক্ষে । মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বর্তমান সংবিধানের সপ্তম তফসিলে যুক্ত করা হয় । এ নিয়ে উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করা আছে , যার শুনানি এখনো শেষ হয়নি ।

জুলাই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক স্বীকৃতি অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করে বিএনপি । তারা এটিকে রাজনৈতিক দলিল হিসেবে রাষ্ট্রের আর্কাইভে ২০২৪ সালের গণ - অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র সংরক্ষণের পক্ষে । দলটির নেতারা বলছেন , একটি বিপ্লবকে সংবিধানে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না । তাই জুলাই ঘোষণাপত্রের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিতেই থাকতে চায় বিএনপি । বিএনপি থেকে বলা হয়েছে , তারা জুলাই ঘোষণাপত্রকে সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে যুক্ত করার পক্ষে । তবে পুরো ঘোষণাপত্র নয় , অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি হিসেবে একটি অনুচ্ছেদে ঘোষণাপত্রের উল্লেখ থাকবে ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল একটি গণমাধ্যমকে বলেন , “ঘোষণাপত্রের কোনো প্রয়োজনীয়তাই ছিল না । আর খসড়া ঘোষণাপত্রের বিষয়ে আমাদের মতামত যদি চূড়ান্ত ঘোষণাপত্রে না থাকে , তখনই প্রতিক্রিয়া দেব । তা ছাড়া আমরা তো বলেছি , সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে এর বর্ণনা রাখব , বৈধতা দেব । ' জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সব শক্তি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা বলায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এনসিপি আহ্বায়ক মো . নাহিদ ইসলাম । গতকাল দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন , ‘ ঘোষণাপত্রের অবশ্যই সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকতে হবে । আমরা আশা করছি সরকারের জায়গা থেকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে । সব রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে সমর্থন এবং প্রতিশ্রুতি দেবে । ’

জুলাই গণ - অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সব দলের অবদানের কথা ঘোষণাপত্রে উল্লেখ থাকার দাবি জানান এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন । তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন , ‘ ঘোষণাপত্রের কোনো অংশে যেন দলীয়করণ করা না হয় । গণ- অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে শামিল নয় , এমন কোনো বয়ানের স্বীকৃতি যেন দেওয়া না হয় । আমরা চাইব গণ- অভ্যত্থানের মাধ্যমে মানুষের যে সার্বিক আকাঙ্ক্ষার উত্তরণ ঘটেছে , সেটির উল্লেখ করা হয় , সেটি উঠে আসে । '

এখন বাস্তবতা । ৫ আগস্টের মধ্যেই ঘোষিত হবে ঘোষণাপত্র । ঘোষণাপত্র ইস্যুকে গণ - আকাঙ্ক্ষায় বাঁচিয়ে রেখে এটি বাস্তবায়নের পথ সুগম করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ । ’ জানতে চাইলে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন , ‘ ঘোষণাপত্রের বিষয়ে ( খসড়া ঘোষণাপত্র ) আমাদের পক্ষ থেকে কিছু পরামর্শ ( সাজেশন ) যা থাকছে ঘোষণাপত্রে দিয়েছি । বাস্তবায়ন করবে সরকার । চূড়ান্ত ঘোষণাপত্রটা তো আমরা দেখিনি । এটা নিয়ে আগাম কোনো মন্তব্য করব না । ’ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গতকাল এক বিবৃতিতে বলা হয় , গতকাল এক বিবৃতিতে বলা হয় , অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছে । আগামী মঙ্গলবার বিকেল ৫ টায় অভ্যুত্থানের সব পক্ষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে , ৫ আগস্ট বিকেল ৫ টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা বা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করা হবে । সেখানে জুলাই আন্দোলনের সম্মুখসারির যোদ্ধা , নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য ও আহত এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত থাকবেন । যে সব দল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে অংশ নিয়েছে , থাকবেন তাঁদের প্রতিনিধিরাও ।

গতকাল রাতে নিজের ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলে , ‘জুলাই ঘোষণাপত্র  জানা গেছে , জুলাই আন্দোলনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট , গণ-অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি এবং ভবিষ্যৎ সাংবিধানিক সংস্কারের দিকনির্দেশনা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে জুলাই ঘোষণাপত্র । যেটি কেবল একটি রাজনৈতিক দলিল নয়; বরং এটি সংস্কারকৃত সংবিধানের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে । ঘোষণাপত্রের খসড়ায় ২৬ টি দফা রয়েছে । প্রথম ২১ দফায় মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের মানুষের অতীতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থানের পটভূমি বর্ণনা করা হয়েছে । অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে অংশে । শেষের ৫ টি দফায় রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা, আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম , খুন , গণহত্যা , মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন- নিপীড়ন ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধের দ্রুত উপযুক্ত বিচার , আইনের শাসন ও মানবাধিকার , দুর্নীতি , শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে ।

ঘোষণাপত্রে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বিএনপি , জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোর সংগ্রামকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে । বিএনপির মতামতে পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বরের সিপাহী বিপ্লব , ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সরকারের করা সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে । জনগণের দাবি অনুযায়ী ‘ অবৈধ ’ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া , সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়ে সাংবিধানিকভাবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছে বলে ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা আছে । বিদ্যমান সংবিধান এবং সব রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক সংস্কার , আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের সংঘটিত গুম , খুন , হত্যা , গণহত্যা , মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন , নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধের দ্রুত উপযুক্ত বিচার । যুক্তিসংগত সময়ে অনুষ্ঠেয় একটি অবাধ , সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রতিশ্রুত প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রত্যাশা , বিশেষত তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসন ও মানবাধিকার , দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা আছে ঘোষণাপত্রে ।