
কুমিল্লার দেবিদ্বারে হতাশায় ভুগছেন তিন শহীদের পরিবার। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এক বছরেও তারা স্বজন হারানোর ধকল কাটিয়ে সচ্ছলতায় ফিরতে পারেননি। উপার্জনক্ষমদের হারিয়ে এসব পরিবার এখন চারদিকে অন্ধকার দেখছেন। জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ কাদির হোসেন সোহাগ, সাগর মিয়া এবং হোসাইন মিয়া ছিলেন তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। দেবিদ্বারের এ তিন শহীদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জুলাই অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন দেবিদ্বারের ভানী ইউনিয়নের সূর্যপুর গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো. কাদির হোসেন সোহাগ (২৪)। উপজেলার বড়শালঘর গ্রামের মো. হানিফ মিয়ার ছেলে মো. সাগর মিয়া (১৯) ও রাজামেহার ইউনিয়নের বেতরা গ্রামের মো. মানিক মিয়ার ছেলে শিশু মো. হোসাইন মিয়া (১০)।
স্বজনরা জানান, কাদির হোসেন সোহাগ পাঠাও কুরিয়ার সার্ভিসে চাকরি করতেন। ২০ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর গোপীবাগের একটি মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। একটি গুলি এসে সোহাগের বুকে লাগে। বন্ধুরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোহাগ মারা যায়। সোহাগ ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাকে হারিয়ে পরিবারের আয়ের চাকা বিকল হয়ে গেছে। এক বছরেও ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো পথ খুঁজে পায়নি পরিবারটি।
তার ছোট ভাই নাজমুল হাসান বলেন, ভাইকে হারিয়ে আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। মায়ের চিকিৎসা চালাতে পারছি না। আমরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছি। বাবা মৃত্যুর পর ভাই ছিল আমাদের সংসারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে কিছু সহায়তা পেয়েছি। কিন্তু ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা চিন্তিত।
ভ্যানে করে সবজি ও কলা বিক্রি করতেন সাগর মিয়া। বাবা মায়ের সঙ্গে থাকতেন মিরপুর ১ নম্বরে। ১৯ জুলাই ভ্যানে কাঁচামাল নিয়ে মিরপুর ১ নম্বর থেকে ১০ নম্বরে যান। সেখানে সন্ধ্যায় পুলিশের গুলিতে আহত হয় সাগর। কয়েকজন তাকে মিরপুরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাতে তার মৃত্যু হয়।
সাগরের বাবা হানিফ মিয়া বলেন, ছেলের রোজগারের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম।
অসুস্থ শরীর নিয়ে আমি কোনো কাজকর্ম করতে পারি না। ছেলের মৃত্যুর পর চোখে মুখে অন্ধকার দেখছি। সামনের দিনগুলোতে কীভাবে চলব সেই চিন্তায় ঘুম আসে না।
এদিকে মায়ের চিকিৎসার জন্য চিটাগাং রোডের বিভিন্ন বাসে বাসে চকলেট, পপর্কন আচার বিক্রি করে দশ বছরের হোসাইন মিয়া। মা বাবার সঙ্গে থাকত ওই এলাকারই একটি ভাড়া বাসায়। ২০ জুলাই চিটাগাং রোডে পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই সে নিহত হয়। হোসাইনের বাবা মানিক মিয়া বলেন, আমার ছেলে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিল। আমি অসুস্থতার কারণে কোনো কাজ করতে পারি না। তাই ছেলের আয়েই চলত সংসার। এখন তো আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। দান অনুদানে সাময়িক ডাল-ভাতের ব্যবস্থা হলেও সামনের দিনে কীভাবে সংসার চলবে তা নিয়ে চিন্তিত। তাছাড়া আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই অসুস্থ। এ অবস্থায় সরকারি সহযোগিতা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই।
এদিকে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে নিয়মিত সরকারি সহায়তা প্রত্যাশা করছে শহীদ পরিবার। এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাসনাত খাঁন বলেন, শহীদ আব্দুল কাদের সোহাগ, সাগর মিয়া এবং হোসাইনের পরিবারকে জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আমরা নিয়মিত তাদের খোঁজখবর রাখছি। সামনের দিকে যে কোনো সহায়তা এলে পরিবারগুলোর কাছে যথাযথভাবে পৌঁছে দেওয়া হবে।