Image description
 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্রী হলে রাত ১০টার পর ফিরলে সিট বাতিলের ‘হুমকি’ দেওয়া হয়েছে ছাত্রীদের। অভিযোগ উঠেছে, সহকারী প্রক্টর নিজে গাড়ি থেকে নেমে ছাত্রী হল এলাকায় গিয়ে হলের সামনে বসে থাকা ছাত্রীদের উঠিয়ে দিয়ে হুমকি দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্তকে ‘একপাক্ষিক, বৈষম্যমূলক ও নারী বিদ্বেষী’ বলে ফেসবুকে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপ্লবী উদ্যান ও লেডিস ঝুপড়ি এলাকায় এমন ঘটনার সূত্রপাত। এক প্রত্যক্ষদর্শী সমকালকে জানান, “আমি লেডিস ঝুপড়ি থেকে বিপ্লবী উদ্যানের সামনে দিয়ে হলে যাচ্ছিলাম। তখন প্রক্টরিয়াল টিম গাড়ি থেকে নেমে উচ্চস্বরে বলে, ‘সব মেয়েরা যেন রাত ১০টার মধ্যে হলে ফেরে। ১০টা ১ মিনিটেও কেউ বাইরে থাকলে তার সিট ক্যান্সেল করে দেওয়া হবে।’ এরপর তারা বিপ্লবী উদ্যানে বসা মেয়েদেরও উঠিয়ে দেন।” 

 
 

সেসময় টহলে থাকা সহকারী প্রক্টর নাজমুল হোসেইন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং ছাত্রী হলে থাকা নির্দেশনার ওপর ভিত্তি করে ছাত্রীদের হলে ফিরে যেতে বলেছেন- এ তথ্য সমকালকে নিশ্চিত করেছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক ও মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া শিকদার সমকালকে বলেন, ‘আমরা কিছুদিন আগেও প্রীতিলতা হলে সান্ধ্য আইন জারির প্রতিবাদে শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছিলাম। অথচ আবারও একই কাজ করতে চাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, এটা স্বৈরাচারী মনোভাব।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটা স্বাধীন দেশে কেন শুধু নারীদের জন্য এমন নিয়ম? এটা স্পষ্টভাবে নারী বিদ্বেষী। আমরা আগেও দেখেছি, এই প্রশাসন এমন আচরণে জড়িত। এবারও যদি তারা স্বৈরাচারী আচরণ চালিয়ে যায়, আমরা কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলব।’

সুমাইয়ার অভিযোগ, প্রক্টরিয়াল বডির দায়িত্ব হলো ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অথচ তারা নিজেরাই ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখছে। প্রশাসন গুপ্ত হামলার তদন্ত করতে পারে না, অবৈধভাবে শিক্ষার্থী বহিষ্কার করে— এসবের দায় তাদের নিতে হবে।


অন্যদিকে চারুকলার ইন্সটিটিউটের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী সমকালকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য আইন জারি করা হয়েছে, এটা আমাদের জন্য অপমানজনক। সাধারণভাবে সান্ধ্য আইন বলতে আমরা কারফিউ বুঝি, যা কেবল রাষ্ট্রই জারি করতে পারে। অথচ এখানে বলা হচ্ছে, রাত ১০টার পর হলে ঢুকতে দেওয়া হবে না, এবং এই নিয়ম শুধু মেয়েদের জন্য। এটা স্পষ্টতই বৈষম্যমূলক।

তিনি আরও বলেন, অনেকে ক্লাস শেষে শহরে গিয়ে টিউশন বা চাকরি করে হলে ফেরে। সেই বাস্তবতা বিবেচনায় না নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত দেওয়া অযৌক্তিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আইন জারি করা নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজয় ২৪ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জান্নাত আরা পারভীন সমকালকে বলেন, রাত ১০টার মধ্যে হলে প্রবেশের নির্দেশনা আগে থেকেই আছে। তবে ছাত্রীদের অনেকেই তা মানছে না। কারও জরুরি প্রয়োজন হলে লিখিতভাবে জানালে হলে ঢোকার সুযোগ থাকে।

তিনি আরও বলেন, কেউ নিয়মিত দেরিতে ফিরলে তার নাম রেজিস্টারে তোলা হয়। সতর্কতা সত্ত্বেও যদি নিয়ম না মানে, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সিট একবারেই বাতিল হয় না, তবে বারবার নিয়ম ভাঙলে বাইরে থাকতে বলা হয়।

প্রভোস্ট ড. জান্নাত আরা আরও বলেন, রাত ২টা–৩টা পর্যন্ত বাইরে ঘোরাঘুরি করলে হলে শৃঙ্খলা থাকে না। ১০টায় হলে ফেরা একটি স্ট্যান্ডার্ড সময়। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করে, তারা ভালো শিক্ষার্থী নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ সমকালকে বলেন, সহকারী প্রক্টর মূলত কিছু নির্দিষ্ট ‘অনিরাপদ’ জায়গার কথা বোঝাতে চেয়েছেন— যেমন অন্ধকার এলাকা, যেখানে মাদক সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের আশঙ্কা রয়েছে। আমরা সম্প্রতি কয়েকজনের কাছ থেকে বড় অঙ্কের গাঁজা উদ্ধার করেছি। তাই এমন কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীদের গভীর রাতে অবস্থান করাটা নিরাপদ নয়।

তিনি আরও বলেন, লাইব্রেরি এলাকা, শহীদ মিনার বা জিরো পয়েন্টের মতো জায়গা যেখানে শিক্ষার্থীরা গ্রুপ ডিসকাশন বা পড়াশোনা করে— সেসব জায়গা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। এমনকি কেউ হলের সামনে সারারাত বসে থাকলেও আমরা কিছু বলি না। নির্দেশনাটা মূলত অন্ধকার, নির্জন জায়গায় রাত গভীরে না যাওয়ার বিষয়ে ছিল।

প্রক্টর আরও বলেন, রাত ১০টার পর যদি কেউ হলে ফিরতে চায়, তার জন্য হলে অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি সহকারী প্রক্টর বুঝিয়েছেন। এখনো পর্যন্ত প্রশাসন বা হল কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো কড়া নির্দেশনা জারি হয়নি।