
‘ফেসবুক পোস্টের কারণে আমাকে ঢাবির সকল প্রশাসনিক-একাডেমিক দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নীলিমা আক্তার। শুক্রবার (১ আগস্ট) মধ্যরাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজ আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি।
ফেসবুক পোস্টে ড. নীলিমা আক্তার বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার প্রিয় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আমাকে সকল প্রশাসনিক ও একাডেমিক দায়িত্ব থেকে বিরত করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ কোনো প্রশাসনিক বা একাডেমিক অপরাধের ভিত্তিতে নেওয়া হয়নি। আমার অপরাধ আমি ফেসবুকে মত প্রকাশ করেছি। আমি ২০ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি। আমার বিরুদ্ধে কোনোদিন একটি ছোট্ট অভিযোগও ওঠেনি। শুধু একটি ফেসবুক পোস্টের কারণে আমাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নিজের যোগ্যতায় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হয়েছিলাম ২০০৫ সালে। সিন্ডিকেট আমাকে নির্বাচিতদের তালিকায় প্রথম স্থানে রেখেছিল। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে মাস্টার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলাম। অনার্স পরীক্ষায়ও প্রথম স্থান অর্জন করেছিলাম। ১৯৯৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের মানবিকের মেধা তালিকায় প্রথম হই এবং সারাদেশে সর্বোচ্চ নম্বর লাভ করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ওভারসিজ স্কলারশিপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করে এবং অস্ট্রেলিয়াতে কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর, ২০২৪ সালে দেশের টানে ফিরে এসেছিলাম এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অবদান রাখার জন্যে। তার আগে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ পেয়ে ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইক থেকে দ্বিতীয় মাস্টার্স করেছি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত সিন্ডিকেট সদস্য ছিলাম। ছিলাম শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক।’
ফেসবুক পোস্টে ড. নীলিমা আক্তার বলেন, ‘আমার আসল অপরাধ আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী! ২০২৪ সালের আজকের দিনে প্রোফাইল পিকচারে লাল রং না রেখে আমি শোকের মাসের কালো রং ধারণ করেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়েছিলাম। ২০২৪-এর ১৭ জুলাই আন্দোলনকে প্রতিক্রিয়াশীলদের আন্দোলন হিসেবে আখ্যায়িত করে বক্তব্য দিয়েছিলাম! বলেছিলাম মৌলবাদী শক্তি তরুণদের ব্যবহার করছে। ১৯৯৫ সালে এসএসসি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জনের পর ভোরের কাগজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারেই বলেছিলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব। আমার অপরাধ — আমি মধ্যপন্থী এবং প্রগতিশীল বাংলাদেশে বিশ্বাস করি, যেখানে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে! আমার অপরাধ — আমি দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে কথা বলি।’
ঢাবি শিক্ষিকা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী শিক্ষকদের রাজনৈতিক মত প্রকাশের অধিকার এবং এমনকি রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করে থাকেন! ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ শিক্ষকদের পেশাগত স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। অথচ একটি ফেসবুক পোস্টের কারণে আমাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে! আমি স্তম্ভিত, ব্যথিত এবং হতাশ। তবুও, আমি বিশ্বাস করি — একদিন সত্যেরই জয় হবে।’
এর আগে গত ২২ জুলাই ফেসবুকে নিজ আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দেন। সে পোস্টে তিনি রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি দাবি করেছেন, ‘লাশের রাজনীতি’ করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে তিনি জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্ববায়ক নাহিদ ইসলামের অনুসারীদেরও দায়ী করেছেন। কোনো ইস্যু নেই, তবু ইস্যু তৈরি করে গত বছর যারা ছোট ছোট ছেলেদের গুলির মুখে ঠেলে দিয়েছিল, তারা এবার বিমান ‘দুর্ঘটনায়’ মৃত মানুষের সংখ্যা নিয়েও অসততা করেছে!
তার এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও বক্তব্যের প্রতিবাদে পরেরদিন (২৩ জুলাই) বিক্ষোভ মিছিল ও উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে ঢাবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।