
বিটিআরসির ক্ষমতা বাড়াতে আগের আইন বাতিল করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ সংশোধন ও পরিমার্জন করে এ সংক্রান্ত খসড়া তৈরি করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
বিশেষ সহকারীর নির্দেশনা অনুযায়ী ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিটিআরসির চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে।
বিটিআরসি জানায়, সরকারের পট পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার বিটিআরসির পুরনো আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। এ সংক্রান্ত একটি খসড়াও করা হয়। কিন্তু খাত সংশ্লিষ্টরা খসড়ার বিভিন্ন ধারায় আপত্তি জানান। এরই মধ্যে নতুন করে নয় দফা নির্দেশনা দেন বিশেষ সহকারী।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ইন্টারনেট যাতে সরকারি বা বেসরকারি কেউ বন্ধ না করতে পারে, সেজন্য মূল ২০০১ আইন সংশোধন ও পরিমার্জন করার নির্দেশনা দেন।
বিটিআরসির স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে সমন্বয় সাধন করার জন্য ২০০১ আইন সংশোধন ও পরিমার্জন করা, মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি যথাসম্ভব কমিয়ে আনা, বিটিআরসির নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করা, লাইসেন্স প্রদান, লাইসেন্স নবায়ন, লাইসেন্সে নাম পরিবর্তন, লাইসেন্স শেয়ার হস্তান্তর ইত্যাদিতে সুস্পষ্ট নীতিমালা, বকেয়া আদায়, রাজস্ব লিকেজ ইত্যাদিতে জবাবদিহি নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেন।
এই দুটি বিষয়ে সরকারের ‘রুল অব বিজনেস’ এবং ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস’ অনুসারে বিটিআরসির স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করা; ‘রুল অব বিজনেস’ এবং ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস’ অনুসারে মন্ত্রণালয়ের ওপর অর্পিত দায়িত্বসমূহের প্রশ্নে এবং মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান সমূহের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতির প্রাসঙ্গিকতা বজায় রেখে যে কোন অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে ট্যারিফ নির্ধারণ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি তুলে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ছয়টি টেলিযোগাযোগ কোম্পানি, বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা সংক্রান্ত লাইসেন্স এবং এ সংক্রান্ত কোম্পানিগুলোর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষযে মন্ত্রণালয়কে সংশ্লিষ্ট করা এবং শুধুমাত্র সেসব বিষয়ে পূর্বানুমতির বিধান রেখে বাদবাকি জায়গায় বিটিআরসির পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ২০০১ সংশোধন এবং বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী।
সব ক্ষেত্রে লাইসেন্স অব্লিগেশন ডিফাইন করণে কভারেজ এবং ক্যাপাসিটি সংক্রান্ত অব্লিকেশন আসবে। পাশাপাশি পুরনো টেকনোলজির বিলোপ এবং নতুন টেকনোলজির পথে মাইগ্রেশন সংক্রান্ত ধারা আসবে। নতুন লাইসেন্স এর অনুমতি, শেয়ার হস্তান্তর, নাম পরিবর্তন, কিংবা নিউ এসেট অ্যাকুইজিশন— এসব এক্ষেত্রে লাইসেন্স অব্লিগেশন বাধ্যতামূলক করতে হবে।
আইপিভি ফোর থেকে আইপিভি সিক্স মাইগ্রেশনের মত বিষয়গুলো নতুন লাইসেন্স প্রাপ্তি কিংবা লাইসেন্স নবায়নের সাথে বাধ্যতামূলক রাখতে হবে।
এ ধরনের লাইসেন্স পাবলিকেশনের পাশাপাশি করতে হবে আধুনিকতম কোয়ালিটি অব সার্ভিসের নিশ্চয়তা রাখা এবং আন্তর্জাতিক মানের কেপিআই বেঞ্চমার্ক বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা ও বিধিবিধান আনার নির্দেশ দেন। তবে বিনিয়োগকারীদের অপ্রয়োজনীয় ভয়ভীতি দেখানোর ধারা সংশোধন করা; বিপরীতে উন্নত সেবামান বাস্তবায়নকারী লাইসেন্সধারীদের পুরস্কার দেওয়া, ছাড় দেওয়ার বিষয়গুলো যুক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী।
ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন, সাইবার সুরক্ষা আইন, ডেটা গভর্নেন্স অ্যান্ড ইন্টার-অপারেবিলিটি আইন, ন্যাশনাল এআই পলিসি, টেলিযোগাযোগ লাইসেন্স, মেইলিং ইকমার্স এবং কুরিয়ার সার্ভিস পলিসিগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করারও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
টেলিযোগাযোগ লাইসেন্স এবং সেবা সংক্রান্ত বিষয়ে দেওয়ানি/সিভিল, ফৌজদারি/ত্রিমিনাল অফেন্স ডিমার্কেশন করা, সেভাবে আইন আপডেট করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
আড়িপাতা প্রশ্নে আন্তর্জাতিক স্টান্ডার্ড নিয়ে আসা; এনটিএমসি প্রশ্নে বৈধতার প্রশ্ন তৈরি করা; আন্তর্জাতিক স্টান্ডার্ড মতে শুধুমাত্র একটি এজেন্সিকে গেইটওয়ে করে বাকি এলইএ এজেন্সিদের আড়িপাতায় কোয়াসি বা প্যাসিভ জুডিশয়াল একনলেজমেন্টে রেখে আড়িপাতার কাঠামোগত এবং আন্তর্জাতিক স্টান্ডার্ড তৈরি করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ সংশোধন ও পরিমার্জন করে এ সংক্রান্ত খসড়া এ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
বিশেষ সহকারী এসব নির্দেশনার বিষয়ে বিটিআরসির কর্মকর্তারা মনে করছেন, বিটিআরসির একটি খসড়া তৈরি করেছিল। সংশ্রিষ্ট কমিটি বিশেষ সহকারীর এসব নির্দেশনা যুক্ত করার উদ্যোগ নেবেন। আইনে এসব নির্দেশনা যুক্ত করা হলে বিটিআরসি শক্তিশালী এবং স্বাধীন হতে পারবে। এতে কাজে গতি বাড়বে।