
ময়মনসিংহে জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আল-আমিন নামের এক যুবককে রাজনৈতিক মামলায় ফাঁসিয়ে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। ছেলের মুক্তির দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন নগরীর বলাশপুর এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের স্ত্রী ষাটোর্ধ্ব আনারা বেগম। তিনি বলেন, ‘থানায় দরবারের কথা কইয়া ওসি স্যার আমার নিরপরাধ ছেলেরে ডাইক্যা জেলে ডুকাইয়া দিল। ওসি স্যারের হাতে-পায়ে দইরাও লাভ হইল না।’
আনারা বেগমের অভিযোগ, গত শনিবার রাতে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম সালিশ বৈঠকে মীমাংসার কথা বলে থানায় ডেকে চার ঘণ্টা কথা বলেন। পরে আল-আমিনকে আটক করেন তিনি। রোববার তাকে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। অথচ আল-আমিন কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি আনারা বেগমের।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ২০২১ সালে স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকা দিয়ে বলাশপুর এলাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন আনারা বেগম। কিন্তু একই দাগে ৪ শতাংশ জমি ২০০৮ সালেই কেনেন বলে দাবি করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র বিভাগের উপপ্রধান প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান। উভয় পক্ষই তাদের কেনা জমি নিজেদের দখলে আনার চেষ্টা করে আসছিলেন। এ বিষয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিশ বৈঠক হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর মনিরুজ্জামান ও তাঁর সহযোগীরা আনারা বেগমের কেনা জমিতে বাড়ি তৈরির উদ্যোগ নিলে বাধা দেন।
ওই বৃদ্ধার অভিযোগ, আল-আমিনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ করেন মনিরুজ্জামান। বিষয়টি সমাধানের জন্য গত শনিবার ওসি শিবিরুল ইসলাম উভয় পক্ষকে থানায় ডাকেন। রাত ৮টা থেকে শুরু হয়ে ১২টা পর্যন্ত এ বৈঠক চলে। বৈঠকের শেষ পর্যায়ে যখন কাগজপত্র তাদের পক্ষে ছিল, তখন আল-আমিনকে নিজের কক্ষে ডেকে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন ওসি। পেছন পেছন গিয়ে আনারা বেগম প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করা হয়। আল-আমিনকে সাদা স্ট্যাম্পে সই করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন ওসি। আল-আমিন এতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে সাজানো রাজনৈতিক মামলায় জেলে পাঠানো হয়।
আনারা বেগম কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি অনেক কষ্ট করে সন্তানদের মানুষ করেছেন। তাঁর ছেলে আল-আমিন মাস্টার্স শেষ করে বর্তমানে ক্রোকারিজের ব্যবসা করে সংসার চালাত।
এ বিষয়ে প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আল-আমিন কীভাবে গ্রেপ্তার হয়েছে সে সম্পর্কে আমি বলতে পারব না। আমার অভিযোগের ভিত্তিতে সে গ্রেপ্তার হয়নি।’
অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পুলিশের আবেদনে দেখানো হয়েছে, আল-আমিনকে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরীর কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তাকে এ বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারির বেআইনি জনসমাবেশ সৃষ্টির মামলায় ১৪৩, ১৪৭ ও ৪২৭ ধারায় আসামি করে আদালতে পাঠানো হয়।
জানতে চাইলে ওসি শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘আল-আমিনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল। পুলিশ তার খোঁজে বাড়িতে গিয়েছিল। কিন্তু পায়নি। তাই থানায় এলে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।’
আল-আমিনের রাজনৈতিক কোনো পদ আছে কিনা– জানতে চাইলে ওসি নিজের মোবাইল ফোন থেকে দুটি ছবি দেখিয়ে বলেন, যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে তার ছবি রয়েছে।
জানতে চাইলে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম সমকালকে বলেন, ‘শুনেছি আল-আমিন যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। এখানে কারও দোষ খুঁজে পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’