Image description
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দ্বিতীয় পর্যায়ের ২০তম দিনের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজসহ সদস্যরা অংশ নেন -পিআইডি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের কাজ শুরু হয়েছে। সমন্বয় করা হচ্ছে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং সিভিল প্রশাসনের মধ্যে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে দেওয়া হবে নির্বাচন বিষয়ক বিশেষ প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলবে অক্টোবর ও নভেম্বর পর্যন্ত। এ ছাড়া নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্রাউন্ড লেভেলের পরিস্থিতি জানতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে সিচুয়েশন রিপোর্ট পাঠানোরও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সভা শেষে এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। সভায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে পর্যালোচনা অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি দিকনির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেছেন। দুই ঘণ্টার বৈঠকে সামনে নির্বাচনের প্রস্তুতি কেমন এবং সে অনুযায়ী আমরা আরও কী কী কাজ করতে পারি, সেগুলো নিয়ে আলাপ হয়েছে। প্রথমত, আলাপ হয়েছে সমন্বয় বাড়ানো নিয়ে। আর্মি, পুলিশ এবং তৃণমূল পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসন- এদের মধ্যে সমন্বয়ের কথা বারবার বলা হয়েছে। স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে সমন্বয় বাড়ানোর জন্য জোর দিতে বলা হয়েছে। নির্বাচনের আগে পুলিশের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেছেন, সেপ্টেম্বর থেকে দেড় লাখ পুলিশের প্রশিক্ষণ শুরু হবে।

নির্বাচনের প্রস্তুতি সরকারের

প্রেস সচিব জানান, নির্বাচনে সেনাবাহিনীর প্রায় ৬০ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সেনাবাহিনী ৫ আগস্টের পর থেকেই মাঠে দায়িত্ব পালন করছে। তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাও আছে। আমরা আশা করছি, এই নির্বাচনের সময় তাদের একটা বলিষ্ঠ ভূমিকা থাকবে, তারা মূলত স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য। শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচন কেন্দ্রিক অপতথ্য-অপপ্রচার রোধে ‘ন্যাশনাল ইনফরমেশন সেন্টার’ গঠন করা হবে। এখানে দ্রুততার সঙ্গে অপতথ্যগুলো তুলে ধরা হবে। কয়েক দিন আগে পুলিশের যে কমান্ড সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে- প্রধান উপদেষ্টা সেখানে একটি মিডিয়া সেন্টার প্রতিষ্ঠা করার কথা বলেছেন। যাতে করে খুব দ্রুত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য সংগ্রহ করা যায় এবং সেখানে যেন প্রতিদিনই সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো যায়।

উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্রাউন্ড লেভেলের পরিস্থিতি জানতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে সিচুয়েশন রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। বিভিন্ন জেলাপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে একটা সিচুয়েশন রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে। এই রিপোর্ট অনুযায়ী সরকারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা গ্রাউন্ড লেভেলের প্রকৃত সিচুয়েশন সম্পর্কে অবগত হবেন এবং সে অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ নিতে করণীয় নির্ধারণ করবেন। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে নির্বাচনে সমস্যা তৈরি হতে পারে এমন হটস্পটগুলো চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। জায়গাগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তার জন্যে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, সেই ব্যাপারে সুপারিশ দেওয়ার জন্যও প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের আগে প্রশাসনিক অনেক রদবদল হবে। কিন্তু সব জায়গায় যে রদবদল হবে, এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যেখানে প্রয়োজন শুধু সেখানে রদবদল হবে।