
রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় রোববার রাতভর বৃষ্টি হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে ঢাকার আকাশ মেঘে ঢাকা। হচ্ছে অবিরাম বৃষ্টি। এতে থমকে গেছে নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবন। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া দিনমজুর, রিকশাচালক ও অস্থায়ী শ্রমিকরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত রাজধানীতে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সকাল থেকেও বৃষ্টি চলছে, ঢাকায় সারাদিন আরো বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
দুপুর ২টার দিকে সহকারী আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা আমার দেশকে বলেন, আজ সারাদিন ঢাকার আবহাওয়া এমনই থাকবে, আগামীকাল মঙ্গলবারও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাসে বলছে, সোমবার খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশির ভাগ জায়গায় বজ্রসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। এসব বিভাগের কোনো কোনো জায়গায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসও আছে। সোমবার ঢাকা বিভাগের অনেক স্থানেও বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি।
সহকারী আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেন, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে এই বৃষ্টি হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। আগামীকালও সারাদেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী সোমবার সকাল ৬টায় এর আগের ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৫১টি সেন্টার এলাকায় তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ রেকর্ড ও পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, দেশের অধিকাংশ এলাকায় কমবেশি বৃষ্টি হলেও আগের দিনের তুলনায় বরিশাল, খুলনা ও সিলেট বিভাগে বৃষ্টি কমে চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে বৃষ্টি বেড়েছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ নারায়নগঞ্জে ১৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। এছাড়া রাঙ্গামাটিতে ১২৪, কিশোরগঞ্জের নিকলিতে ৮০, চট্টগ্রামে ৭২ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। এসময় রাজধানীতে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
সকাল নয়টার বুলেটিনে বলা হয়, আজ ঢাকা ও আশপাশের আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকতে পারে এবং আরো বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়াবিদ ড. বজলুর রশিদ বলেন, বর্ষাকাল হিসেবে সারাদেশেই কমবেশি বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। মঙ্গলবার থেকে উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টি কমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী বৃষ্টি বাড়তে পারে। এতে তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও ভ্যাপসা গরমের দাপট থাকবে মাসজুড়ে।
তিনি বলেন, বর্ষাকালে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়, আবার থেমে গেলেই ভ্যাপসা গরম পড়ে। এর কারণ বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের এই আবহাওয়াবিদ আরো বলেন, এবার রংপুর ও সিলেট অঞ্চলে ৫০শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ময়মনসিংহ ও রাজশাহী অঞ্চলেও কম বৃষ্টি। সবমিলে এখনো চলতি জুলাই মাসে স্বাভাবিকের ৩ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। বর্তমানে যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে এতে জুলাই মাসের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত সম্ভাবনা।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ ঢাকার আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। হতে পারে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি। বজ্রপাতেরও সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। আজ দিনের তাপমাত্রা কমতে পারে এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দুপুর ১২টায় ঢাকা ও আশপাশের এলাকার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার বাতাসে আর্দ্রতা পরিমাপ করা হয়েছে ৮২ শতাংশ।
সকালে সহকারী আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানার স্বাক্ষর করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলার ওপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেইসঙ্গে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
তাই এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অফিসের অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামীকাল মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকাল পর্যন্ত খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণ হতে পারে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রসহ বৃষ্টি ও ভারি বর্ষণের এ প্রবণতা সপ্তাহজুড়ে অব্যাহত থাকতে পারে বলে ধারণা আবহাওয়া অফিসের। সংস্থাটি ৫দিনের বর্ধিত পূর্বাভাসে আরও জানিয়েছে, বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে।
সকাল থেকে ঢাকার আকাশ মেঘে ঢাকা এবং অবিরাম বৃষ্টিপাতের কারণে যেন থমকে গেছে নগরীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সকাল থেকেই বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাট, ফুটপাত ও বাজারসহ সব জায়গায় দেখা গেছে ছাতা খুলে কিংবা স্নান বৃষ্টি ভেজা মানুষের ভিড়। তবে এতে সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ ও ফুটপাতের দোকানিরা।
দিনমজুর, রিকশাচালক ও অস্থায়ী শ্রমিকরা যারা প্রতিদিন সকালে বের হয় জীবিকা অর্জনের তাগিদে, তারা এই বৃষ্টির কারণে অনেকটাই বিপাকে পড়েছেন। আজকের দিনটা তাদের জন্য খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। কারণ টানা বৃষ্টিতে কাজ খুঁজতে গেলে অনেক সময়ই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
আর ফুটপাতের দোকানিরাও বৃষ্টির পানিতে নাজেহাল। গুলিস্তান, ইসলামপুর, নয়াবাজার, চকবাজার, সদরঘাট, পল্টন এলাকায় ফুটপাতের ছোট ছোট দোকানগুলোকে দেখতে পাওয়া গেছে পানি জমে বিপাকে পড়েছে। কিছু দোকানি বাধ্য হয়ে তাদের পণ্য ও মালামাল বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য ছাতা বা প্লাস্টিকের পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা করছেন।