Image description
 

যশোরের চৌগাছায় পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি শিম ৩-৪টাকা দরে বিক্রি হলেও হাত বদলেই খুচরা বিক্রিকেন্দ্রে তা বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০টাকায়।অপরদিকে মূলার সরবরাহ কম থাকলেও পাইকারি বিক্রি হয়েছে ১ টাকা কেজি। সেই মূলাই হাত বদলে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা কেজি। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে চৌগাছা বড় কাঁচাবাজার ও খুচরা সবজি বাজার ঘুরে এ দৃশ্য দেখা যায়।

বাজারের আড়ৎদার (পাইকারি ব্যবসায়ী) ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় এবার সবজির দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। বাজারে নতুন ফুলকপি, বাধাকপি, শিম, মিস্টি কুমড়া, বিটকপির সরবরাহ তুলনামূলক কম থাকার পরও দাম কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তারা বলছেন এ অঞ্চলের সবজি যেসব অঞ্চলে বেশি বিক্রি হতো, সেসব এলাকার সবজি ভালো উৎপাদন হওয়া এবং বাজারে এসে যাওয়ায় ব্যাপারিদের কাছে সবজির চাহিদা ও দাম কমে গেছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ও জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহের তুলনায় প্রায় সকল সবজির দাম কিছুটা কমে গেছে। 

চাষীরা জানিয়েছে, গত শুক্রবার শিম ৭ থেকে ৮ টাকা কেজি এবং তার আগের শুক্রবার ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি পাইকারি বিক্রি হয়েছিল। তবে ২৭ ডিসেম্বরের তুলনায় মিস্টি কুমড়া কেজিতে ৫ থেকে ৭, বেগুন ৩ থেকে ৪ টাকা, পেয়াজের ফুল(কালি) ৫ থেকে ৭ টাকা, মরিচ ৫ থেকে ৭ টাকা, গোলআলু ১০ থেকে ১৫, টমেটো ৮ থেকে ১০ টাকা কমেছে।

বড় কাঁচাবাজারের আড়ৎদার মুকুল হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার পাইকারিতে মূলা বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ১টাকা, শিম ৩ থেকে ৪টাকা, মিস্টি কুমড়া ১৫ থেকে ২০, বেগুন ১১ থেকে ২০, বাধাকপি (প্রতিটি) ৭ থেকে ৮, ফুলকপি (প্রতিটি) ৩ থেকে ৪, ওলকপি ২ থেকে ৩, পেয়াজের (ফুল) কালি ২ থেকে ৩, কাঁচাকলা ৮ থেকে ১৫, পালংশাক ৪ থেকে ৫, মরিচ ৩৫ থেকে ৩৮, পেয়াজ ৩৫ থেকে ৪৫টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে। লাউ (প্রতিটি) বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১২টাকা, নতুন আলু (স্থানীয়) ২৫ থেকে ৩৫, টমেটো ২৫ থেকে ৩০, মেটেআলু ৪০ থেকে ৪৫, পেপে ১০ থেকে ১২, ধনেপাতা ২০ থেকে ২৫টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।’

চৌগাছা সদর ইউনিয়নের মন্মথপুর গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম জানান, ‘শুক্রবার ২ কজি ওজনের ফুলকপি প্রতিটি ৩ থেকে ৪টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। এছাড়া গোলআলু ২৬ টাকা ও পেয়াজ ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। ফুলকপি ও বাধাকপির দাম একেবারেই না থাকায় চাষিরা খেতে অন্য সবজি রোপণের জন্য চাষ দিয়ে দিচ্ছেন। এ জন্য ফুলকপি ৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। না হলে বাজারে ফেলে রেখে যেতে হতো।

 

তবে পাইকারি বাজারের মধ্যেই (৫ থেকে ১০ফুট দূরত্বে) খুচরা বিক্রিকেন্দ্রে এবং শহরের খুচরা বাজারে (১০০ মিটার দূরের) মূলা বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ১৫ টাকা, শিম ২০ থেকে ৩০টাকা, মিস্টি কুমড়া ৩০ থেকে ৩৫, বেগুন ৩০ থেকে ৩৫, বাধাকপি (প্রতিটি) ১৫ থেকে ২০, ফুলকপি (প্রতিটি) ১০ থেকে ২০, ওলকপি ১৫ থেকে ২০, পেয়াজের (ফুল) কালি ১৫ থেকে ১৮, কাঁচাকলা ২৫, মরিচ ৬০ থেকে ৮০, পেয়াজ ৫৫ থেকে ৬০টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে। লাউ (প্রতিটি) বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫টাকা, নতুন আলু (স্থানীয়) ৩৫ থেকে ৪০, টমেটো ৪০ থেকে ৪৫, মেটেআলু ৬০থেকে ৬৫, পেপে ২০ থেকে ৩০, ধনেপাতা ৪০ থেকে ৬০টাকা দরে কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

পাইকারিতে এই মূল্য কমে যাওয়ার প্রভাব খুচরা বাজারে কিছুটা পড়েছে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ি (আ

ড়ৎদার) মুকুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘খুচরা বিক্রেতারা যে পরিমাণ সবজি ক্রয় করেন তার সম্পূর্ণটা বিক্রি হয় না। এছাড়া খাজনা, জায়গার ভাড়া, ব্যবসায়ীর মুজুরী ও ইনভেস্ট অনুযায়ী লাভ সব হিসেব মিলিয়ে তাদের বিক্রি করতে হয়। ‘

বাজারে সবজির দাম এত কমে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চট্রগ্রাম, নোয়াখালি, কুমিল্লাসহ দেশের যেসব অঞ্চলে চৌগাছার সবজি বিক্রি হয় সেসব এলকায় স্থানীয় খেতের সবজি বাজারে চলে এসেছে। ওই এলাকায় এবার সবজির ফলনও ভালো হয়েছে এসব কারনে ব্যাপারিদের কাছে সবজির চাহিদা কিছুটা কমে যাওয়ায় বাজারে সরবরাহ তুলনামূলক কম হলেও দাম কমে গেছে।’

তবে গত বছরের চেয়ে এবার সবজির দাম অনেক কম জানিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এবারের আবহাওয়া অনুকূল থাকায় সবজির ফলন গত বছরের এই সময়ের (ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারীর প্রথমার্ধ) চেয়ে এবার বাজারে সরবরাহ ভালো। সে কারণে দামও গত বছরের চেয়ে কম।’

মুকুল হোসেনের গত বছরের হিসাবের খাতা ঘেটে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ১২ জানুয়ারি পাইকারিতে শিম বিক্রি হয়েছিল ২০ থেকে ২২ টাকা, পেয়াজ ৬৮ থেকে ৭০, কাঁচামরিচ ৬৫ থেকে ৭০, টমেটো ৪০ থেকে ৪৩, পেপে ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি। এছাড়া লাউ প্রতিটি ২৫টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল।

মুকুল হোসেন ও আরেক আড়ৎদার আব্দুস সালাম বলেন, ‘গতবছর এই সময়ে ফুলকপি ৩০ থেকে ৪০, বাধাকপি ২৫ থেকে ৩০টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মুসাব্বির হোসেন বলেন, ‘দেশের আবহাওয়া অনুকুল থাকায় সব এলাকায় স্থানীয় সবজি বাজারে এসে গেছে। ফলে আমাদের বাজারে সরবরাহ কিছুটা কম হলেও ব্যাপারিদের কাছে চাহিদা কমে গেছে। এজন্য দাম কিছুটা কম। আমরা নিয়মিত বাজার পরিদর্শন করছি ও খোঁজ খবর রাখছি।’