
বাংলাদেশের লাইফলাইন হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অংশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক মূলত অচল হয়ে পড়েছে। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা বিভিন্ন কনটেইনার ডিপো ও ট্রাক টার্মিনালে গাড়িগুলো যাওয়া আসা করতে গিয়ে এবং মহাসড়কের ওপর অবৈধ পার্কিং করে রাখার কারণে প্রতিদিনই যানজট লেগেই আছে। মুমূর্ষু রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সগুলো দীর্ঘ সময় ধরে যানজটে আটকা পড়ে মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকে। স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা ও চাকরিজীবী মানুষদের অফিস আদালতে যাওয়া আসা করতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে দূরপাল্লার যাত্রীদেরও দুর্ভোগের সীমা থাকে না। মহাসড়কে প্রতিদিন যানজট লেগে থাকলেও হাইওয়ে পুলিশ সড়কের যানজট নিরসনে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি বলে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশে নিয়মিত ও দীর্ঘস্থায়ী যানজট এখন নিত্যদিনের দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ভাটিয়ারী, বানুরবাজার, কুমিরা, বাঁশবাড়িয়া এবং ফৌজদারহাট এলাকায় যানজটের কারণে মহাসড়ক কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় গড়ে ওঠা পোর্ট লিঙ্ক কনটেইনার ডিপো, কেএসআরএমসহ বিভিন্ন কনটেইনার ডিপো ও ট্রাক টার্মিনালের গাড়িগুলো সড়কের ওপরেই পার্কিং করে রাখার কারণেই মূলত এ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে দেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লাইফলাইন এই মহাসড়ক কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছেড়ে আসা মালবাহী ট্রাক ও কন্টেইনারবাহী বড় বড় লরিগুলো ফৌজদারহাট এলাকার পোর্ট কানেক্টিং সড়ক হয়ে যখন মহাসড়কে এবং মহাসড়ক থেকে পোর্ট কানেক্টিং সড়কে যাওয়া আসা করতে থাকে, তখন যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। একই অবস্থা দেখা যায় ভাটিয়ারী ও কুমিরা এলাকায়, যেখানে কনটেইনার ডিপোর ও ট্রাক টার্মিনালের শত শত গাড়ি সড়কের ওপর পার্কিং করে দাঁড়িয়ে থাকে। যানজটের কারণে প্রতিদিন হাজারো যাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে অফিস, আদালত কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথামময়ে পৌঁছাতে পারছেন না। সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হন মুমূর্ষু রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স। দীর্ঘ যানজটে আটকে পড়ে অনেক রোগী মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যেও পড়েন।
গত ২৫ জুন রাতেও মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়, যা গভীর রাত পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। দূরপাল্লার বাস, পণ্যবাহী ট্রাক, অ্যাম্বুলেন্সসহ হাজারও যানবাহন রাস্তায় আটকে পড়ে। সীতাকুণ্ড থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেইট যেতে সাধারণত যেখানে ৪০ মিনিট সময় লাগে, সেখানে সময় লাগছে দুই ঘণ্টারও বেশি।
এদিকে, মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা টায়ার রিপিয়ারিং দোকান ও ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানগুলোকেও যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চালকেরা চাকা মেরামতের অজুহাতে এসব দোকানের সামনে দীর্ঘক্ষণ ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখেন, কেউ কেউ সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিশ্রাম ও আড্ডায় মেতে থাকেন। এসব দোকানগুলোর সামনে সৃষ্ট ভিড় ও অব্যবস্থাপনাও যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
এ ছাড়া আন্তঃজেলা বাসগুলো সড়কের ওপর দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে এবং লোকাল বাসগুলো যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করায় যানজট আরও তীব্র ও জটিল আকার ধারণ করছে।
ভুক্তভোগী যাত্রী আব্দুর রহমান বলেন, বাঁশবাড়িয়া ও কুমিরা এলাকায় কনটেইনার ডিপো ও টার্মিনালের গাড়িগুলো রাস্তার ওপরে পার্কিং করে রাখে। আমরা প্রতিদিন অফিসে দেরিতে পৌঁছাই। দীর্ঘ যানজটে মুমূর্ষু রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স আটকা পড়ে থাকতেও দেখা যায়।
সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবের সদস্যসচিব সুলাইমান মেহেদী হাসান বলেন, দেশের শিল্প ও আমদানি-রপ্তানির লাইফলাইন হিসেবে খ্যাত এই মহাসড়ক। অথচ বছরের পর বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের যানজটের কোনো সমাধান নেই। কনটেইনার ডিপো ও টার্মিনালগুলোকে বাধ্য করতে হবে নিজস্ব পার্কিং নিশ্চিত করতে। রিপিয়ারিং ও অস্থায়ী খাবারের দোকানগুলো সরিয়ে নিতে হবে। লোকাল বাসগুলোকে নির্দিষ্ট স্টপেজ ব্যতীত যাত্রী ওঠা নামা বন্ধ করতে হবে।
সচেতন মহল মনে করছেন এ বিষয়গুলোর স্থায়ী সমাধানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি।
বারো আউলিয়া হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল মোমিন মহাসড়কে যানজটের বিষয়ে স্বীকার করে আমার দেশকে বলেন, সড়কের ওপর অবৈধ পার্কিং করে রাখা অনেকগুলো গাড়িকে মামলা দিয়েছি। যানজট নিরসনে আমরা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছি।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন আমার দেশকে বলেন, মহাসড়কের ওপর গাড়ি পার্কিং করার কারণে গত শনিবার গাড়ির ড্রাইভারকে জরিমানা করা হয়েছে।