Image description
 

Ali Ahmad Mabrur (আলী আহমেদ মাবরুর)


 
প্রথম আলো তার স্বভাবসুলভ ভূমিকায় ফিরে এসেছে। গতকাল তারা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের একটি দীর্ঘ সাক্ষাতকার প্রকাশ করেছে। সেখানে তারা হেডলাইন হিসেবে পিক করেছে ‘বাংলাদেশে দক্ষিণপন্থার উত্থান প্রসঙ্গে।’ এটি তারা ইচ্ছেকৃতই করেছে। বিষয়টি প্রশ্ন হিসেবে সামনে এনে মির্জা সাহেবের মুখ দিয়ে কথাটি বের করেছে।
 
এর আগের দিন তারা একটি গোলটেবিল বৈঠককে শিরোনাম করেছে। যেখানে কবি ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার ও প্রফেসর ড. আনু মোহাম্মাদ ফ্রন্ট লাইনে ছিলেন। সেখানে তারা জুলাই বিপ্লব নিয়ে কিছু অবজারভেশন দিয়েছেন- যেগুলো মূলত সেক্যুলার ও বাম ঘরানার মানুষগুলো অনেকদিন ধরেই বলে আসছেন।
 
আমি প্রথম আলো ও ফরহাদ মজহার কানেকশন দেখে বিস্মিত হয়েছি। যারা বিগত ১৫-২০ বছর ধরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করেন, তারা জানেন এক সময় ফরহাদ সাহেবের সাথে প্রথম আলো, যুগান্তরসহ অনেক পত্রিকারই সম্পর্ক ভালো ছিল। ২০-২১ বছর আগের কথা যদি স্মরণ করি। তখন প্রতিদিনই কলাম যুদ্ধ চলতো। ফরহাদ মজহার ভার্সেস আব্দুল গাফফার চৌধুরি বা এবিএম মুসা।
 
তারপর ফরহাদ মজহার সাহেবের সাথে তাদের সম্পর্কের অবনতি হলো। সব পত্রিকা থেকেই ফরহাদ সাহেবের লেখা প্রকাশ বন্ধ হয়ে গেল। তিনি এরপর শুধু নয়াদিগন্তেই লিখতেন। পাশাপাশি তার চিন্তা পত্রিকাতেও নিয়মিত লিখতেন তিনি। সেখানে হিজবুত ইস্যু, হেফাজত ইস্যুসহ নানা ইস্যুতে স্ট্রাগলিং মুসলিম কম্যুনিটি নিয়ে তিনি সরব হয়েছিলেন। তাই ইসলামপন্থী তরুণদের একটি অংশ তাকে রীতিমতো অভিভাবকের আসনে বসিয়েছিল।
 
কিন্তু বিপ্লবের পর আবার প্রথম আলোর সাথে ফরহাদ মজহারের কানেকশন রিস্টোরড হতে দেখলাম। যারা ফরহাদ সাহেবের বিগত এক বছরের ভিডিওগুলো দেখেছেন সেখানে জামায়াত নিয়ে তার একটি কথাই বারবার শুনবেন। তিনি দলের এই নামটি ব্যবহারের চরম বিরোধিতা করেছেন। তার মতে, জামায়াত নামটিই থাকার কারণে দিল্লীর ফেরার সুযোগ রয়ে গেছে।
 
আরেকটু যদি আগের ইতিহাসে যাই, ফরহাদ সাহেব এবং বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাবেক উপদেষ্টা ও সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ মিলে ইনসাফ পার্টি করেছিলেন। এটি আওয়ামী আমলেরই ঘটনা। এই বিষয়টি নিয়ে তার সাথে বিএনপির দুরত্ব বেড়ে গিয়েছিল। এখন এসে প্রথম আলোর সাথে তার এই গাঁটছড়া বাধার বিষয়টি আমার কাছে তাই বেশ তাৎপর্যপূর্নই মনে হয়েছে। এটি মোটামুটি সবাই জানে, প্রথম আলো খুবই মানসম্মত পত্রিকা তবে তার কিছু এজেন্ডাও আছে। এর বিরুদ্ধে ফরহাদ সাহেবও একসময় কথা বলেছেন। কিন্তু সবই এখন কেবলই অতীত হয়ে গেল কিনা- প্রশ্নটা সেখানেই।
 
প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে মির্জা ফখরুল সাহেব- সবাই কথা বলার জন্য বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোর মধ্যে প্রথম আলোর ওপরই আস্থা রাখলেন এবং রাখছেন- যা এই পত্রিকার পুরনো অনেক অন্যায় আড়াল হওয়ার জন্য যথেষ্ট হয়েছে। জুলাই বিপ্লবের অনেক সমন্বয়ক ফরহাদ মজহারের চিন্তায় প্রভাবিত- এমন কথাও প্রচলিত রয়েছে। নতুন করে প্রথম আলোর প্লাটফর্মে সরকার, রাজনীতিবীদের একাংশ ও বুদ্ধিজীবীদের আগমন হালকা কোনো বিষয় নয়। গত এক বছর যেমনে যাওয়ার গেছে; তবে আগামীর দিনগুলোতে বিপ্লবের ন্যারেটিভের ক্ষেত্রেও আমরা নতুন কিছু শুনবো, নতুন অনেক ব্যাখ্যা জানবো বলেই আমার ধারনা। এমনকী গোটা অভ্যুত্থানটাই এর প্রকৃত নায়কদের হাত থেকে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।