Image description

জুলাই কোনো স্মৃতি নয়, জুলাই বর্তমান, জুলাই বাস্তব, জুলাই চলমান। জীবনের কোনো কিছুর কথাই আমাকে এত কাঁদায় না, জুলাই যতটা কাঁদায়। 

২০২৪ এর ৫ আগস্ট সকালে মন স্থির করে বের হই যে আজ কিছু একটা হয়ে যেতে পারে। সাথে পরিবারের এক জনের ফোন নাম্বার কাগজে বড় করে লিখে ম্যানিবাগে নিয়ে বের হই। একপর্যায়ে শাহবাগ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারি। বেলা ১টা নাগাদ শহীদ মিনার থেকে খবর পাই শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছেন।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস) দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জুলাই গণআন্দোলনে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার এই স্মৃতি তুলে ধরেছেন এই আন্দোলনে সরাসরি সম্মুখভাগে সক্রিয় জুলাইযোদ্ধা রাজিয়া সুলতানা ঈশিতা।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন, ২০১৮ এর কোটা আন্দোলন এবং ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার অন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানে রাজিয়া সুলতানা ঈশিতা সরাসরি সম্মুখভাগে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৭ সালে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। কলেজ জীবন শেষ করেন শহীদ বীর উত্তম লেঃ আনোয়ার গার্লস কলেজে। এরপর পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক শুরু করলেও সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ থেকে চলে আসেন ইংরেজি সাহিত্যে। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন লালমাটিয়া সরকারি মহিলা কলেজ থেকে। ছোটোবেলা থেকেই সাহিত্য চর্চা ও লেখালেখি করেন তিনি। ভালোবাসেন লেখালেখি ও সম্পাদনা, বর্তমানে লিখছেন সাহিত্যের নানা শাখায়।

২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের সময় তখন তিনি স্নাতকোত্তর করছেন। লেখালেখির সুবাদে প্রথম থেকেই আদর্শিক অবস্থানগতভাবে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন জানাতে থাকেন। 

তখন থেকেই নানারকম হুমকির সম্মুখীন হতে হয় তাকে। ১৬ জুলাই আবু সাঈদকে হত্যা করা হলে সেদিনই তিনি আন্দোলনের মাঠে শরিক হন। এরপর তার লাগাতার আন্দোলনের পক্ষের বয়ান ও মাঠ পর্যায়ে অবস্থানের কারণে নানারকম সেফটি নিশ্চিত করে চলতে হয়। 

২ আগস্ট লেখক-শিল্পী ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের ব্যানারে অংশগ্রহণ ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সাক্ষাৎকার দেওয়ায় ছাত্রলীগের রোষের মুখে পড়তে হয় তাকে। কমপ্লিট শাটডাউন চলাকালীন সময়ে গুরুতর অসুস্থ বাবাকে রেখে আন্দোলনে থেকে যান তিনি ও তার ছোট ভাই। আন্দোলন যখন তুঙ্গে, সারাদেশে চলছে কারফিউ, সে সময় চাচাকে হারান তিনি। তাকেও দাফন করতে যেতে পারেননি তারা দুই ভাই-বোন। দেশ ও দশের স্বার্থে দুই ভাই-বোনের এই আত্মত্যাগ যেন তাদের কাছে কিছুই ছিল না। সারাদেশের ভাই হারানোর শোকই যেন তাদের পারিবারিক শোককে আন্দোলনের পক্ষের শক্তিতে পরিণত করেছে। আহতদের চিকিৎসা ও খাবার সরবরাহ করে গেছেন ৫ আগস্ট পরবর্তীতে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার বিশেষ আয়োজন ‘জুলাই জাগরণ’ এর মুখোমুখি হয়ে আন্দোলনে তার রাজপথের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা শুনিয়েছেন ঈশিতা। 

বাসস : জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ১ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। জুলাইয়ের সেই স্মৃতি কতটা অনুভব করেন?

রাজিয়া সুলতানা ঈশিতা : জুলাই আমার কাছে বিশাল শোক ও মাতমের মাস। জুলাই আমাদের নিজেদের চেনানোর মাস। জুলাই যেন আমাদেরকে দেশ ও দশের জন্য উপযোগী করে তুলেছে। বললে অত্যুক্তি হবে না, আমার পরিবারের যে জন মৃত, তার স্মৃতির চেয়েও অনেক বেশি দগদগে, অনেক বেশি আঘাত করে এই জুলাই, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তাক্ত ইতিহাস।

আমার পরিবার থেকে একাধিক সদস্য আমরা জুলাইয়ের রাজপথের অতন্দ্র প্রহরী ছিলাম। নিজে কখন মরে যাই সেই ভয়ের চেয়ে বেশি ভয় ছিল আমার ছোট ভাইকে নিয়ে।

রাতে ঘুমাতাম না, এই বুঝি কী খবর চলে আসে, এই বুঝি বোনের হৃদয় চূর্ণবিচূর্ণ করে দেবে। 

ভাই হারানোর স্মৃতি বোনেরা আজীবন লালন করে যায়। এখনো রাতে ঘুমের মধ্যে বাইরে কোনো শব্দ হলে লাফিয়ে উঠি। কী এক ভয়, না জানি কার বুক খালি হয়! জুলাই কোনো স্মৃতি নয়, জুলাই বর্তমান, জুলাই বাস্তব, জুলাই চলমান। জীবনের কোনো কিছুর কথাই আমাকে এত কাঁদায় না, জুলাই যতটা কাঁদায়। এই মুর্হূতে মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে জুলাই আমাদের কাছে বেশি জীবন্ত। কারণ আমাদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ও স্বাধীন দেশে স্বজন হারিয়ে জুলাই সাধন হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ দেখতে না পাওয়ার বেদনা জুলাই ঘুচিয়েছে।

জুলাইয়ের একটা কথা ভুলতে পারি না। আমার ছোট ভাই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ১৮ জুলাই ফোন করে বলল, ‘আব্বা তো ইমার্জেন্সিতে আছে, তুই একটু আমাকে খবর দিস। আমাদের পুলিশ ফায়ার করতেছে, আমরা ক্যাম্পাসে আটকা পড়ে গেছি। আর শক্তি পাচ্ছি না। কী হয় জানি না, দোয়া করিস।’ এই স্মৃতি, এই তীর যা আমাকে এফোড় ওফোড় করে দিয়েছে। তা কি কখনো আমার মনকে জোড়া লাগাতে পারবে? এইসব স্মৃতি আমরা কী করে ভুলি? আবু সাঈদের বোন কী কখনো তার ভাইকে ভুলতে পারবে?

বাসস : আপনি কবি। কবি লেখক শিল্পীরা আগস্টের ২ তারিখে বিক্ষোভ করে বাংলামোটর ও ধানমন্ডিতে। আপনি কোথায় অংশগ্রহণ করেন? জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কবি লেখক শিল্পীদের ভূমিকা কেমন ছিল?

রাজিয়া সুলতানা ঈশিতা : দুঃখজনক হলেও সত্য যে আগস্টের ২ তারিখে আন্দোলনে সংহতি জানাতে লেখক-শিল্পীরা এলেও সেটাকে আমি স্রেফ গা বাঁচানো বলব। কারণ তাদের মধ্যে ৮০% ২ তারিখের আগে-পরে কোনো কথা বলেনি। এবং আড়ালেও ন্যায়ের পক্ষে মানসিক অবস্থানও ছিল না অনেকেরই। হ্যাঁ, আপনি বলতে পারেন কর্মজীবন, ব্যক্তিজীবনে আন্দোলনে সমর্থন করলে প্রভাব পরতে পারে, সেক্ষেত্রে পেছনে থেকেও তো কাজ করা যায়। তাদের অধিকাংশেরই এমন পজিটিভ নজির পাওয়া যায়নি। এমন কি এইসব উত্তাল দিনে, যখন আমার শতশত ভাইবোনেরা লাশ হয়ে গেছে তখনও তাদের দেখেছি বিয়ে খেয়ে আনন্দঘন পোস্ট করতে। নিজেদের বইকে কবে কোন পাঠক কিনলো, কোন বোদ্ধাজন তার লেখার প্রশংসা করলো সেইসব নিয়ে তারা ব্যতিব্যস্ত ছিল। এমনও হয়েছে কোনো লেখককে বলেছি, ভাই একটা অন্তত কথা বলেন, এত বাচ্চারা মারা যাচ্ছে। এই কথার অপরাধে ফেসবুকে আনফ্রেন্ড করে। আমাকে নিয়ে নানারকম কথা বিভিন্নজনের কাছে ছড়িয়েছে। তারাই আবার ২ তারিখে ব্যানার ধরে ছবিও তুলেছে। তাই শুধু ২ তারিখে একটা ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে ফটোসেশন শেষে ঘরে ফিরে যাওয়ার দলের মানুষ আমি নই। হ্যাঁ, তাদের ওটুকু অংশগ্রহণও আমরা মাথা পেতে সশ্রদ্ধায় নিয়েছি।

আমি আন্দোলনের শুরু থেকেই সশরীরে মাঠে থেকেছি। ২ অগস্ট আমি ধানমণ্ডির আবাহনী মাঠে শিল্পী সমাজের ব্যানারেই অংশগ্রহণ করি। সাধারণত আমার আন্দোলন পয়েন্ট মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি ২৭ ও সাইন্সল্যাবে ছিল। সেদিন পথনাট্য প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে অন্যায়ভাবে শিক্ষার্থীদের মেরে ফেলার দৃশ্য নাট্যকর্মীরা উপস্থাপন করেন।

পক্ষান্তরে অনেক কবি-লেখক আছেন যারা তাদের লেখনী দিয়ে, মাঠে থেকে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন ও আমাদেরকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।

বাসস : কোটা সংস্কার আন্দোলনে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভূমিকা কেমন ছিল?

রাজিয়া সুলতানা ঈশিতা  : চব্বিশের জুলাইয়ে আমার মাস্টার্সের রেজাল্ট বের হয়। ততক্ষণে আমি জব হোল্ডার। সরকারি চাকরির প্রতি ফ্যাসিনেশন এই মুর্হূতে দাঁড়িয়ে আর নেই। ১৮ সালে যখন কোটা আন্দোলন হয়, সে সময়েও প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ছিল আমার। আমি সে সময় লালমাটিয়া সরকারি মহিলা কলেজের ইংলিশে অনার্স করছি।

আমরা যখন ১৮ এর আন্দোলনে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে একাত্মতা পোষণ করি। সে সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ এক প্রকার বাধা দেয়। তখন নানক সাহেব এই কলেজের হর্তাকর্তা। হয়তো রাজনৈতিক কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের নিবৃত্ত করে থাকতে পারে। তো তারই ধারাবাহিকতায় চব্বিশের কোটা বিরোধী আন্দোলনে আমার সমর্থন। কিন্তু আমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তোয়াক্কা করি না যেহেতু বিগত অভিজ্ঞতা আছে। আমি নিজের নাগরিক অবস্থান থেকে আন্দোলনের শরিক হই। যদিও লালমাটিয়া সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা ও শিক্ষক আন্দোলনে পজেটিভ ছিল।

লালমাটিয়া স্কুলের এক শিক্ষকের একটা গল্প বলতে চাই। ২ আগস্ট স্কুলের ছাত্রীরা যখন দেয়াল লিখন করছিল। সাথে তাদের অভিভাবকরাও ছিলেন কারো কারো। তখন এক শিক্ষক গালমন্দ করে তাদের সরিয়ে দেয়। কেনো এসব করতে এসেছে? কেনো আন্দোলন করছে? পরে আমি একা শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বললে- সেই শিক্ষক এক প্রকার পলায়ন করেন। তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ‘এই মুগ্ধ, ফারহান ফাইয়াজ এরা যদি আপনার সন্তান হতো, আপনি কী করতেন? শিক্ষক হয়ে পারলে বাচ্চাদের পাশে দাঁড়ান, না পারলে ঘরে ফিরে যান।’

বাসস : জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে এখনো কাউকে বলেননি এমন কোনো ব্যক্তিগত স্মৃতি জানতে চাই।

রাজিয়া সুলতানা ঈশিতা : জুলাই নিয়ে অনেক অনেক স্মৃতি। যা কাউকেই বলতে ইচ্ছে করে না। যেন জুলাই একান্ত আমার। জুলাইয়ে আমার চেয়েও অনেক অনেক বেশি হারিয়েছে অনেক বোন, অনেক মা। সেখানে নিজের একটু আত্মত্যাগ সমুদ্রে এক বিন্দু শিশিরের মতো। জুলাইয়ে আমার একটা ফরেন ট্রিপ ছিল। আমাকে অনেক বার রিকোয়েস্ট করা হলো কিন্তু আমি গেলাম না। বললাম, ‘আমার ভাইয়ের তপ্ত লাশ রেখে আমি ফরেন ট্রিপে যেতে পারি না।’ আমি থেকে গেলাম, ট্রিপের বাকিরা চলে গেল।

১৮ জুলাই, যেদিন কমপ্লিট শাটডাউন শুরু হলো। আমার বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে ইমার্জেন্সিতে ভর্তি হলো। বড় ভাই ছুটে গেলেন বাবার কাছে। আমি আর ছোট ভাই যুদ্ধের ময়দানে রয়ে গেলাম। মনে হলো সারাদেশের মানুষ নিজেদের জীবন দিয়ে দিচ্ছেন। সন্তানকে কোরবানি করে দিচ্ছেন দেশের জন্য। সেখানে বাবার কাছে না গিয়ে দেশের বৃহৎ স্বার্থে থেকে যাওয়াটাই শিক্ষা ও দেশপ্রেম।

জুলাইয়ের সবচেয়ে ব্যক্তিগত দুঃখের স্মৃতি হলো, কারফিউ চলার দিনগুলোতে আমার বড় চাচা মারা যান রাতে। সকালে দাফন হয়। কারফিউয়ের জন্য যাবার মতো সাহস আমার ছিল না। কারণ এর কিছুদিন আগে আর্মি চেকিংয়ের মধ্যে পড়ি।  জব আইডি, ফোন, ব্যাগ সবকিছু দেখিয়ে তবে কোনো মতে নিস্তার পাই সেদিন। তাদের সে কী ভস্মীভূত চাহনি যেন এক্ষুনি গিলে ফেলবে আমাকে।

সেই ভয় থেকে কারফিউ ঠেলে বড় আব্বার কবর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারিনি। আমরা ভাইবোনেরা তাকে বড় আব্বা ডাকতাম। আমি আমার বড় আব্বাকে এখনো বিদায় দেইনি। জুলাই যেমন জেগে আছে, তেমনি আমার আব্বা আমার সাথেই আছে। আমি আর তার কবর জিয়ারত করতে যেতে পারি না। এক বিপুল ব্যর্থতা নিয়ে যে মেয়ে শেষ মুর্হূতে পৌঁছাতে পারেনি। সে মেয়ে তার আব্বার কবর বুকে আঁকতে চায় না। আমার চাচার কবরের সাথে সাথে জুলাইয়ের সকল শহীদের কবর মনে গেঁথে আছে। একচেটিয়া ক্ষমতার কাছ থেকে দেশকে জিতিয়ে দিতে এ আমার সামান্য আত্মত্যাগ।

বাসস : আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন জুলাইয়ের কত তারিখে এবং কোথায়?

রাজিয়া সুলতানা ঈশিতা : মাঠ পর্যায়ে অবস্থান নিতে থাকি ১৬ তারিখ থেকে। যখন অন্যায়ভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো হলো। আমি শিক্ষার্থী হলেও ততদিনে কর্পোরেট জব করতাম। সামাজিকভাবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শুরু থেকেই সমর্থন ছিল। আর মাঠে নেমেছি যত না শিক্ষার্থীর জায়গা থেকে, তারও বেশি নাগরিকত্বের অধিকারে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে।

বাসস : এক দফা ঘোষণার আগে কি বুঝতে পেরেছিলেন হাসিনা পালিয়ে যাবে?

রাজিয়া সুলতানা ঈশিতা : না, বুঝতে পারিনি। আমরা তো জ্ঞান হওয়ার আগে থেকেই দেখছি এক নায়কের শাসনতন্ত্র। প্রধানমন্ত্রী কেমন পরিস্থিতিতে কীভাবে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন? ভোটাধিকার কী? নতুন প্রধানমন্ত্রীর উত্থান কীভাবে হয়? এসব তো আমাদের কল্পনার বাইরের বিষয় ছিল। কারণ আমরা রাজনীতির সুষ্ঠু বন্টনের সাথেই পরিচিত না। আদৌ এভাবে এই পরাক্রমশালীর পদত্যাগ সম্ভব কিনা সেটাই ভাবার বিষয় ছিল। বরং ভেবেছিলাম তাদের গতিপ্রকৃতি দেখে, তারা আরও অনেক বেশি গণহত্যা চালাবে তবুও জনগণের কথা শুনবে না।

বাসস : ৫ আগস্ট বা ৩৬ জুলাই সকালে কোথায় ছিলেন? হাসিনা পালানোর খবর কখন কার মাধ্যমে পান? সেই অনুভূতি কেমন ছিল?

রাজিয়া সুলতানা ঈশিতা : ৫ আগস্ট সকালে মন স্থির করে বের হই যে আজ কিছু একটা হয়ে যেতে পারে। সাথে পরিবারের এক জনের ফোন নাম্বার কাগজে বড় করে লিখে ম্যানিবাগে নিয়ে বের হই। ফোন তো লক থাকে সেটা প্রয়োজনে অন্য কেউ নাও খুলতে পারে। আমার ধারণা ছিল আজ কিছু একটা হবেই। হয় শেখ হাসিনা আরও রোলার কোস্টার চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ করবে নির্বিকারে, নয়তো ক্ষমতা সেনাবাহিনী নেবে। সেদিন আসলে প্রস্তুত ছিলাম যে সুস্থ অবস্থায় হয়তো ফিরব না। মোহাম্মদপুর থেকে কোনো দিকেই বের হওয়া যাচ্ছিল না। সেনাবাহিনী আটকে দিচ্ছিল। বিভিন্ন রুট চেঞ্জ করে করে কখনো হেঁটে, কখনো রিক্সা নিয়ে শহীদ মিনারের দিকে আগাতে থাকি। জিগাতলায় ছাত্রলীগের সাথে ধাওয়া-পাল্টা হয় আমাদের। একপর্যায়ে শাহবাগ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারি। বেলা ১টা নাগাদ শহীদ মিনার থেকে খবর পাই শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছেন।

বিশ্বাস হতে চায় না। বলি এটা আরেকটা চাল হতে পারে। এর মধ্যে দিয়ে সে ম্যাসাকার করে ফেলতে পারে আন্দোলনরতদের ওপর। কারণ তখনো যাত্রাবাড়ীসহ কিছু জায়গায় শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করা হচ্ছে।

ধীরে ধীরে মানুষের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস আর আন্দোলনে শরিক হওয়াই বলে দিলো তিনি ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। মনে হলো বানের জলের মতো মানুষ ছিটকে বেরিয়ে আসছে টিএসসিতে। মানুষের বাঁধভাঙা আনন্দ আর কান্নায় টিএসসি প্রকম্পিত হয়ে গেল মুহূর্তেই। অজস্র মানুষের সাথে আমরা বঙ্গভবনের দিকে যাত্রা করি। তখনো ওয়াকার সাহেব জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেননি, সময়ক্ষেপণ করছেন।

বিজয়ের সে কি আনন্দ! যাকে পাচ্ছি জড়িয়ে ধরে কাঁদছি। কাঁদছি আমার ভাই হারানোর হাহাকারে। ভাইয়ের লাশের ওপর দিয়ে যে বিজয় সেই বিজয় যন্ত্রণায়, সেই বিজয় গর্বের। রাস্তায় রাস্তায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের চিৎকার করে বলছিলাম, ‘কই মারবেন না আমার ভাইগুলোকে আর? দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? মারেন, মারেন।’

এমনও ইতিহাস হয়। যে সেনাবাহিনী একটু আগেও গুলি করে যাচ্ছিলেন জনতার ওপর, তারাই এখন ফুল ছড়াচ্ছে! সে দিনের কথা মনে পড়লে এখনো আনন্দাশ্রু ঝরে।

সেদিন হয়তো কোনো কাকপক্ষীও ঘরে ছিল না। নেমে এসেছিল বিজয়ে সামিল হতে। এমন ইতিহাস কখনো আসবে না। যাকেই পাচ্ছিলাম ফোনে বলছিলাম, ‘১৬ ডিসেম্বর যেমন একবারই এসেছে, ৫ আগস্টও একবারই। আর আসবে না। আসেন আসেন।’

বাসস : আন্দোলনে আপনার সামনে আহত বা নিহত হয়েছেন কেউ? থাকলে সে রকম কোনো স্মৃতি শুনতে চাই।

রাজিয়া সুলতানা ঈশিতা : অনেকেই হতাহত হয়েছেন। কারো গুলি লেগেছে। কারো বুলেট, ইট-পাটকেল। আর টিয়ারশেল লেগে লেগে প্রতিটা মানুষ যেন ঝলসে গেছে।

সম্ভবত ১৮ জুলাই শংকর থেকে আই হসপিটাল পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা। অপরদিকে ২৭ নাম্বারে ছাত্রলীগ ও পুলিশ ধাওয়া-পাল্টা দিচ্ছে। রাবার বুলেট ছুঁড়ছে। আমাদের হাতে কিচ্ছু নেই। শুধু কপালে পতাকা বাঁধা। প্রচুর ইট-পাটকেল ছুটে আসছে আর মুর্হুমুহু টিয়ারশেল ছুঁড়ছে। পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। ছোট ছোট বাচ্চাছেলেগুলোকে সামলে রাখাই দায় হয়ে যাচ্ছিল। কোনো শক্তিই ওদের আটকাতে পারছিল না। কী গভীর তেজ নিয়ে বারবার ২৭ এর দিকে চলে যাচ্ছিলো ওরা। এর মধ্যে একটা ছেলের পুলিশের টিয়ারশেলে পুরো শরীর ঝলসে গেল। মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে চিৎকার করে উঠে বলছিল। আর বলছিল, ‘আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে, আমি মরে যাব, তবুও আমি পেছনে যাব না। আমার ভাইদের কেন মারল? আমি যাব না।’ আমরা তাকে ধরাধরি করে একটা গ্যারেজে নিয়ে পানি ঢালি ও ফার্স্ট এইড দেই। কিন্তু নিজের আহত শরীরই যেন ওকে আরও বেশি বিপ্লবী করে তুলছিল। আটকে রাখা যাচ্ছিল না। বারবার উঠে দৌঁড়ে চলে যাচ্ছিল। ওর সেই আহত ও তেজস্বীতা নিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি দেবার যে যন্ত্রণা তা এখনো আমার চোখে জীবন্ত ভাসে।

আরও কিছু ঘটনা আলোড়িত করে তোলে আমাকে। ৪ আগস্ট সারাদিন আমাদের অবস্থান ছিল সাইন্সল্যাবে। সারাদিন অনেকেই গুলি খেয়ে আহত অবস্থায় হসপিটালে যায়।

যে নেতৃত্ব দিচ্ছে, সে আহত হয়ে গেলে আবার অন্যজন নেতৃত্ব দিচ্ছে। এভাবেই আন্দোলন আগাচ্ছে। হতাহত ব্যাপক। যার দিকে তাকাচ্ছি হয় সেই গুলি খাচ্ছে। কেউ রাবার বুলেট খাচ্ছে। কারো পা থেকে গলগলিয়ে রক্ত ঝরছে। কারো কপাল, কারো শরীর। বিকাল ৪টা নাগাদ কারা যেন ইয়েলোর শো-রুম জ্বালিয়ে দেয়। দাউদাউ করে আগুন পুরো এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তোলে। পুলিশ গুলি করতে থাকে। ছররা গুলি লেগে আহত এক শিক্ষার্থীকে গলির মধ্যে ফাস্ট এইড দিতে নিয়ে যাই। মাথার তালুতে গুলি লাগে তার। সেই মুর্হূতে পুলিশ আবার আমাদের অবস্থানে দৌঁড়ে এসে গুলি করতে থাকলে সবাই দৌঁড়ে সরে যাই। সেই আহত ছেলেটাকে তখন হারিয়ে ফেলি। ওর যে নিষ্পাপ রক্ত আমার হাতে লেগে থাকে। সেই হাত মনে হয় আজও ধুতে পারি না। ছেলেটাকে আমি মনে মনে এখনো খুঁজি। যার রক্তের দাগে বিজয় নিয়ে এসেছে।

বাসস : আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কীভাবে প্রভাবিত করেছিল?

রাজিয়া সুলতানা ঈশিতা : এ আর নতুন করে কী বলব! এই আন্দোলনের বীজ একদিনে বুনেনি। আবরারকে ছাত্রলীগের পশুর মতো হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন ঘটনা ধীরে ধীরে এই আন্দোলনের বীজ জনতার মাঝে বুনেছিল। ছাত্রলীগের অযাচিত মারপিট, অন্যায় অত্যাচার জনগণকে স্বৈরাচার মুক্ত করতে বেগবান করেছে। ছোট্ট একটা ঘটনা বলি, আন্দোলন চলাকালীন সময়ে আমার ছোট ভাই ও তার বন্ধুরা যে মেসে থাকতো সেটাকে ট্রেস করার জন্য ছাত্রলীগ রান্নার বুয়াকে ফলো করে। কী ভয়াবহ ব্যাপার চিন্তা করুন! বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদেরকে মসজিদে নামাজ শেষে ফেরার পথে ট্রেস করে। এমন অনেক হয়েছে ছাত্রলীগের ভয়ে শিক্ষার্থীরা শুক্রবারের নামাজে যেতে পারেনি। বাসা থেকে বের হতে পারেনি। বাসায় ফিরতে পারেনি। নানারকম হুমকি-ধামকি দিয়েছে তারা আমাদের।

বাসস : জুলাইয়ে নারী শিক্ষার্থীরা ঢাল হয়েছিল। কিন্তু ছেলে শিক্ষার্থীরা কি আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল ঢাল হয়ে?

রাজিয়া সুলতানা ঈশিতা : ছেলে শিক্ষার্থীদের অবদান তো সবচেয়ে বেশি। ছেলে শিক্ষার্থীরা আমাদের মেয়েদেরকে সস্নেহে সেফটি বলয় দিয়ে ঘিরে রেখেছিল সব সময়।

আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে না রেখে মাঝামাঝি পজিশনে রাখতো। যাতে আমাদের হামলা হলে ছেলেরা সেটা প্রতিরোধ করতে পারে। বা দ্রুত দৌঁড়ে পালাতে হলে সেটা আমরা নারীদের চেয়ে তারা ভালো পারবে। আবার যাতে কোনো খারাপ অবস্থার মুখোমুখি হতে না হয়। সেদিকেও তাদের লক্ষ্য ছিল। নারীরাও আহত হলে তারা আমাদের ফাস্ট এইড দেওয়া, নিরাপদে সরিয়ে আনা সবই করেছে। তাদের কাছে আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা।

মোহাম্মদপুর তো এক ভয়াল অবস্থানে ছিল আপনারা জানেন। প্রতিটা মোড়ে মোড়ে আওয়ামী লীগের অস্ত্রসহ অবস্থান। সন্ধ্যা হয়ে গেলে মোহাম্মদপুর ঢোকাটা খুব কঠিন হয়ে যেতো। অনেক দিন আমাদেরকে ছেলে শিক্ষার্থীরা নানা বাধা-বিপত্তি, ধাওয়া-পাল্টা পাড়ি দিয়ে বাসায় পৌঁছে দিয়ে গেছে। অথচ তাদের না আগে কোনোদিন দেখেছি, না কাউকে আর কখনো দেখব। অথচ কত মমতায় বোনদেরকে নিরাপত্তা দিয়ে গেছে তারা। তাদের প্রতি আমার এক আকাশ ভালোবাসা ও বিপ্লবী শুভেচ্ছা।

বাসস : জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কোন দিনটি বিশেষভাবে আলোড়িত করে?

রাজিয়া সুলতানা ঈশিতা : ৪ আগস্ট। রাত প্রায় ৯টা। আন্দোলন ছত্রভঙ্গ হয়ে নিরাপদে সরে যাচ্ছি আমরা। নানা পথ ঘুওে ফিরে আমাদের ফিরতে হতো। কারণ সব গলির মুখেই ছাত্রলীগের পয়েন্ট থাকতো। অধিকাংশ সময়েই পতাকা, ফাস্ট এইড, ফোন সবকিছু বুকের মধ্যে লুকিয়ে চলাচল করতে হতো। আমার সাথে কিছু ছোট বাচ্চারা ছিল।

সম্ভবত এইট-নাইনে পড়ে। বছিলার দিকে বাসা। হাঁটতে হাঁটতে লেকের কাছাকাছি এসে রেস্ট নেবার জন্য বসি আমরা। ওদেরকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি, বাড়িতে এতকিছু জানে না, তারা যে আন্দোলনে এভাবে অংশগ্রহণ করছে। কবে কোথায় কীভাবে আহত হয়েছে সেসব শুনতে চাইলে তাদের মধ্যে একজন বলে, সে এক সপ্তাহ আগে আহত হয়ে হাসপাতালে ছিল। এখন সুস্থ হয়ে আবার আন্দোলন করছে। ব্যথায় বুকটা ভারী হয়ে উঠলো আমার। বাচ্চা ছেলে দুটোর হাত প্রসারিত করে দেখি রক্ত লেগে শুকিয়ে চৌচির হয়ে আছে। চিৎকার করে কান্না করে ক্ষমতাসীনদের মসনদ পর্যন্ত পৌঁছে দিতে ইচ্ছে করছিল তখন। মনে হলো ওদের নিষ্পাপ রক্তে রাঙানো হাতগুলো পতাকার লাল বৃত্তে রেখে এরপর আমার বুকে করে রাখি। যাতে আর কোনো অসূয়া আমাদের ভাইগুলোকে, বাচ্চাগুলোকে ছুঁইতে না পারে।

সেদিন আমার পরনে ছিল সাদা স্যালোয়ার। বাসায় ফিরে দেখি তাতে রক্তের দাগ শুকিয়ে আছে। সেই পোশাকটি আমি ওভাবেই রেখে দিয়েছি। মনে হয়েছে এ তো বিজয়ের দাগ। একে ধুয়ে ফেলা যাবে না। এই দাগ আমাদের সার্বভৌমত্বে, পতাকায়, কর্মে ও দীক্ষায় জেগে থাক।

বাসস : আন্দোলন চলাকালীন সময়ে আপনি কি ধরনের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন?

রাজিয়া সুলতানা ঈশিতা : দুঃখের বিষয় হচ্ছে যেদিন আমার বাবা অসুস্থ হলেন। এম্বুলেন্স পাওয়া যাচ্ছিল না। সারাদেশ ব্লকেড। আবু সাঈদকে গুলি করা হয়েছে। সেদিন আমার ছোটবেলার এক বন্ধু আমাকে বলল, তোদের এই আন্দোলনের জন্য এমন অনেক মানুষ সাফার করছে। তোর বাবার মতো। এত মানুষের সাফার করার পেছনে তুইও দায়ী! আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম! আমার বাবা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আর আমার বন্ধু আমাকে অমৃত বাণী শোনাল! হয়তো বন্ধু আমার ছাত্রলীগ করে বলে তার মনে হয়েছে, আমাদের আন্দোলন অযৌক্তিক। আমরা মানুষের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছি। এই ঘটনা আমার হৃদয়ে দাগ কেটে আছে। কিছু লিখলে ফোন ও ম্যাসেজে হুমকি দেওয়া হতো।

ভয়ে পোস্ট ডিলেট করেছি। এগুলো তো অহরহ সবার সাথেই হয়েছে। এমন নানারকম হুমকি তো দিনেরাতে পেয়েছি। সময় আসুক, দেখে নিবে, কেনো ফেসবুক লিখলাম, কেনো আন্দোলনে গেলাম, বাঁচতে পারব না। এ রকম অনেক কিছু। প্রথম আলোর বন্ধুসভায় এক লোক আমাকে হুমকি দিয়েছে।

বাসস : জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন কতটা হল?

রাজিয়া সুলতানা ঈশিতা : এটা বুঝি যে দেশ তো রাতারাতি ইডেন হয়ে যেতে পারে না। যদিও আমাদের মনের মধ্যে ছিল স্বৈরাচার হঠাতে পারলে আমরা ধুম করে জান্নাতুল ফেরদৌসের মতো দুনিয়া পেয়ে যাবো। দেশের জন্য কে না চায় যে সেটা স্বর্গ হোক। কিন্তু যেই স্বপ্ন নিয়ে জনগণ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন এখনো সুদূর পরাহত। ভেবেছিলাম মানুষগুলো যেভাবে অকাতরে নেমে এসেছিল, তেমনিভাবে তারাও সমুজ্জ্বল মানুষ হয়েই আগামী দিনগুলো স্বর্গের সিঁড়ি বানিয়ে ফেলবে। তবে একটা দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হয়, যেটা আমরা দেইনি। সেই পুরনো পথেই হেঁটেছে লোকজন। ক্ষমতা বোধহয় এমন এক জিনিস, হয়তো ফেরেশতাকে বসিয়ে দিলেও সেও নিরপেক্ষ থাকতে পারবে না। ১৬ বছর ধরে যে শাসন ও প্রশাসন চলে এসেছে। যে শিক্ষাদীক্ষা হয়েছে তাতে একদিনে বা অল্পদিনে এই দেশকে স্বর্গের সিঁড়ি বানানো সম্ভব নয়।

বাসস : স্বৈরাচার পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে আপনার প্রত্যাশা কি?

রাজিয়া সুলতানা ঈশিতা : বাংলাদেশে জনগণের স্বার্থ কায়েম হোক। ফ্যাসিবাদ দূর হোক। অন্যায়, নিপীড়ন, হত্যা, ছিনতাই, দুর্নীতিসহ সব মন্দ জিনিস ভুলে সাম্যের দেশ গঠন হোক। নাগরিক অধিকার বলবৎ হোক। সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও দল মতের। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হোক। নারীর প্রতি সকল সহিংসতা বন্ধ হোক। ভোটাধিকার ফিরে আসুক। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান এবং যারা রাজনীতির রোষানলে পতিত হয়ে অন্যায়ভাবে জীবন দিয়েছেন এমন সব শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে দেশ গড়া। কোটা বিহীন দেশ গড়া। বিশ্ব দরবারে দেশের মানুষ ও পতাকাকে সমুন্নত রাখা।