
ঢাকা থেকে শুরু হওয়া চব্বিশের ‘জুলাই আন্দোলনের’ স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছিল দেশের সীমানা পেরিয়ে প্রবাসীদের হৃদয়ে। ছাত্রজনতার ওপর গুলি ও দমন-পীড়নের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে আফ্রিকার প্রান্তিক শহরগুলো পর্যন্ত।
ঢাকার রাজপথের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছিল লন্ডন, নিউইয়র্ক, রোম, টরেন্টো, দোহা কিংবা জেদ্দার পথঘাট। প্রবাসীরা কেউ পোস্টার হাতে, কেউ প্ল্যাকার্ড নিয়ে, কেউtবা ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে আওয়াজ তুলেছেন, ‘বুলেট নয়, সমাধান চাই।’
আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নিলে সরকার দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। এতে দেশের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন প্রবাসীরা। ছড়িয়ে পড়ে নানা গুজব, বিভ্রান্তি। তথ্যের একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
নিষ্পাপ শিক্ষার্থীদের বুকে বুলেট ছোঁড়ার জবাবে প্রবাসীরা ঘোষণা দেন রেমিট্যান্স বন্ধের। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত এই ঘোষণা ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। আর তাতেই বড় ধাক্কা খায় সরকার।
সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছিলেন, ‘প্রবাসী ভাইবোনদের কাছে আবারও কড়জোরে অনুরোধ করছি, এ মিথ্যা গুজবে কান দেবেন না।’
যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই ব্রিটিশ এমপি আফসানা বেগম ও রূপা হক মুখ খোলেন বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে। রূপা হক বলেছিলেন, ‘এখন কী হচ্ছে দেশে, ভালো কিছু দেখছি না। কিন্তু ঠিক জানতেও পারছি না, কারণ ১০ দিনের ইন্টারনেট শাটডাউন।’
আইন অমান্য করে মধ্যপ্রাচ্যে বিক্ষোভে নামেন প্রবাসীরা। আরব আমিরাতে ৫৭ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে কঠোর সাজা দেয় আদালত। এর মধ্যে ৫৩ জনকে ১০ বছর, একজনকে ১১ বছর এবং ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
আরব আমিরাত ফেরত ফরিদ আহম্মেদ শাহিন বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের খবর ন্যাশনাল সিকিউরিটির কাছে পৌঁছানোর পর কনসুলেটকে ব্যবহার করে এ সাজা দেয়া হয়।’
আরেক প্রবাসী আলম গফুর বলেন, ‘১০ বছরের সাজা মানেই পুরো ১০ বছর থাকতে হবে। প্রথম ৪৭ দিন পরিবারকে জানাতেও পারিনি আমরা কোথায় আছি।’
ফিরে আসা আরেকজন মোহাম্মদ রহিম বলেন, ‘এক সময় আফসোস হয়, আবার হয় না। কারণ যেটার জন্য আন্দোলন করছিলাম, তার তো কিছুই হলো না।’
জুলাইয়ে সৌদি আরবেও বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়। একইভাবে মালদ্বীপে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে ধরপাকড়ের শিকার হন অনেকে।
সব হারিয়েও প্রবাসীদের একটাই প্রত্যাশা, আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে যে নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে, সেখানে তারা যেন আর অবহেলিত না হন। যেনো নতুন বাংলায় সকলের জন্য থাকে ন্যায্যতার জায়গা।