
নেত্রকোনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশের কারণে জেলা পুলিশ লাইন্স স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার শুরু হলে নোটিশটি ‘ফেইক’ দাবি করে এ রকম নোটিশ বিদ্যালয় থেকে জারি করা হয়নি বলে জানিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের দাবি, নেত্রকোনায় এনসিপির পদযাত্রা উপলক্ষে পুলিশ লাইন্স স্কুল দুই দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণার নোটিশটি ভুয়া নয় বরং সেটি আসল।
পুলিশ লাইন্স স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক জানান, ‘তার স্বাক্ষর জাল করে কেউ হয়তো বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য এরকম নোটিশ ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে। বিষয়টি নজরে আসার পর শুক্রবার বিকেলে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ লিপি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এ ব্যাপারে থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদোন্নতিপ্রাপ্ত) সাহেব আলী পাঠান বলেন, এনসিপির সমাবেশের জন্য বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি। বিদ্যালয়ের ফেসবুক আইডি হ্যাকড হয়েছিল। কেউ হয়তো প্রধান শিক্ষকের নাম ও স্বাক্ষর জাল করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছিল। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের ফেসবুক পেজে প্রতিবাদলিপি ও থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
আগামীকাল রোববার দুপুরে শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় পুরাতন কালেক্টরাল মাঠে এনসিপি সমাবেশ করবে। এ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা দিতে তৎপর রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে জেলা পুলিশ প্রশাসন পরিচালিত শহরের কুড়পাড় এলাকায় পুলিশ লাইন্স স্কুল দুই দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে একটি নোটিশ জারি করা হয়। ওই স্কুলে পুলিশ অবস্থান করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় নোটিশতে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পরে বিকেলে ওই স্কুলের পক্ষ থেকে প্রতিবাদলিপি প্রদান করা হয়।
অপরদিকে রিউমর স্ক্যানার টিমের দাবি, নেত্রকোনায় এনসিপির পদযাত্রা উপলক্ষে পুলিশ লাইন্স স্কুল দুই দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণার নোটিশটি ভুয়া নয় বরং নোটিশটি আসল। রিউমর স্ক্যানার স্কুলের নোটিশ সংক্রান্ত পোস্টের স্ক্রিনশটগুলো মূল সোর্স থেকে সংগ্রহ করে মেটাডাটা যাচাই করে দেখেছে এবং আগের নোটিশটিও স্কুলের পেজ থেকেই দেওয়া হয়েছিল বলে নিশ্চিত হয়েছে। তাছাড়া প্রতিবাদলিপিতে থাকা প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষরের সঙ্গে বিভিন্ন সময় নোটিশে থাকা তার স্বাক্ষরেরও অমিল পরিলক্ষিত হয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে নেত্রকোনার পুলিশ লাইন্স স্কুলের ফেসবুক পেজে কথিত বন্ধের নোটিশটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ফেসবুকের অ্যাডভান্স টুলের সহায়তায় সোহেল রানা সোহান নামে এক ব্যক্তির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বন্ধের নোটিশটির স্ক্রিনশট খুঁজে পাওয়া যায়। স্ক্রিনশটটি স্কুলটির ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া হয়েছে ২২ ঘণ্টা আগে। উক্ত ব্যক্তি স্ক্রিনশটটি তারই নেওয়া বলে পোস্টে দাবি করেন। রিউমর স্ক্যানার জনাব সোহানের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্ক্রিনশটটির মূল ফাইল সংগ্রহ করে মেটাডাটা যাচাই করে স্ক্রিনশটটি তারই নেওয়া বলে নিশ্চিত হয়। স্ক্রিনশটটি শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকাল ১০টা ৪৭ মিনিটে নেওয়া হয়।
বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে জনাব সোহান থেকে সংশ্লিষ্ট আরও কিছু স্ক্রিনশট নিয়ে সেগুলোও একাধিক মেটাডাটা সাইটের মাধ্যমে যাচাই করে নোটিশটির স্ক্রিনশট আসল বলে নিশ্চিত হয় রিউমর স্ক্যানার।