Image description

 উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি গতকাল নিম্নচাপে পরিণত হয়। এটি বাংলাদেশের উপকূলে পৌঁছার পর সংশ্লিষ্ট নীচু অঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। একদিকে নিম্নচাপ, অন্যদিকে অমাবস্যার প্রভাব। এ অবস্থায় শুক্রবার রাতে একটানা তীব্র বাতাসসহ জোয়ারের উঁচু পানি তান্ডব সৃষ্টি করে, যদিও নিম্নচাপটি মধ্যরাতে ভারতের দিকে সরে গেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। 

নিম্নচাপের প্রভাবে ১ থেকে ৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় বরগুনা,পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী,সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, চট্টগ্রাম,কক্সবাজারসহ অন্তত ১৬টি জেলার নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। বহু লোকালয় পানিমগ্ন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় গতকাল নৌযোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ নদ-নদীর পানি বিপৎমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে অস্বাভাবিক জোয়ারে নদীর তীরবর্তী জনপদ জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র  জানিয়েছে, আগামী তিন দিন কয়েকটি নদীর পানি সমতল বেড়ে ফেনী জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। 

জানা গেছে, নিম্নচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে গতকাল শুক্রবার পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় দিনের জোয়ারে নদ-নদীর পানি বেড়ে যায়। শুক্রবার সকালে পায়রা বন্দর থেকে ১১০ কিমি দূরে অবস্থান করছিল নিম্নচাপটি। স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ারের পানিতে উপজেলার একাধিক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বসতভিটা, মাছের ঘের, পুকুর ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে দুর্ভোগে পড়েছে। কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে গতকাল শুক্রবার দেওয়া নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে: বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীগুলোতে স্বাভাবিক জোয়ার বিরাজমান, তবে অমাবস্যা ও নিম্নচাপের প্রভাবে আগামী একদিন স্বাভাবিকের চেয়ে ১ থেকে ৩ ফুটের অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। 
গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগে ভারি বৃষ্টি ঝরেছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। তবে উজানে কোনো উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বিপৎমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী তিন দিন কয়েকটি নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। এই সময়ে ফেনীর মুহুরি ও সেলোনিয়া নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং ফেনী জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। 

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আরো জানিয়েছে, এ সময়ে চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরি, রহমতখালি খাল ও নোয়াখালী খাল নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেয়ে সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে এবং আশপাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। 

এছাড়া সিলেট বিভাগের মনু, ধলাই ও খোয়াই নদীর পানিও সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে; যা আগামী তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। অন্যদিকে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। এসব নদীর পানি সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টা স্থিতিশীল থাকতে পারে ও পরবর্তী দুদিন বৃদ্ধি পেতে পারে।

নিম্নচাপটি ভারতের দিকে সরে গেছে

এদিকে শনিবার আবহাওয়ার তিন নম্বর এবং সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ভারতের দিকে সরে গেছে। এটি এখন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন ঝাড়খন্ডে অবস্থান করছে।

বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে গত শুক্রবার মধ্যরাতে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন ঝাড়খন্ডে অবস্থান করছে। এটি আরো পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

এ অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক
সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এছাড়া অমাবস্যা ও নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১-৩ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

শীর্ষনিউজ