Image description

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ঝলসে যাওয়া শিশুদের চিকিৎসায় বিদেশি চিকিৎসক দলের সঙ্গে কাজ করছেন দেশের চিকিৎসকরা। এমন পরিস্থিতিতেও স্বজনদের মধ্যে উৎকণ্ঠা কমছে না।

গতকাল শুক্রবার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আরো দুই শিশু শিক্ষার্থী মারা গেছে। তারা হলো-তাসনিম আফরোজ আয়মান (১০) ও মাকিন (১৩)। এ নিয়ে এখানে ১৫ জনের মৃত্যু হলো। ভর্তি হওয়া বেশির ভাগ শিশুর শরীর ৩০ থেকে ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে।

বার্ন ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের উন্নত চিকিৎসায় ইতোমধ্যে চারটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। গত বুধবার সিঙ্গাপুর থেকে আসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ তিনজনের মেডিকেল টিম চিকিৎসাসেবা শুরু করেছেন। শুক্রবার সকালের মধ্যেই সিঙ্গাপুর ও চীন থেকে আরো দুটি চিকিৎসক দল বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাসেবা শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন ইনস্টিটিউট পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিরউদ্দিন।

ডা. নাসিরউদ্দিন আমার দেশকে বলেন, চীন থেকে পাঁচ ও সিঙ্গাপুর থেকে আরো তিনজন চিকিৎসক আসছেন। ভারত থেকে আসা তিনজনের চিকিৎসক দল বৃহস্পতিবার হাসপাতালে এসেছেন। ডাক্তার যে দেশেরই হোক না কেন পেশাগত জায়গায় আমরা সবাই একই রকম। তবে তাদের কাছ থেকে আমরা পরামর্শ নিচ্ছি। যে পরামর্শকে আমরা বেস্ট মনে করছি চিকিৎসার জন্য, সেটাই গ্রহণ করছি।

এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শুক্রবার দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও জানানো হয়েছে যে, চীনা পাঁচ চিকিৎসকের একটি দল গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় পৌঁছেছেন এবং রোগীদের চিকিৎসায় সহায়তা করছেন। চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলটি বাংলাদেশের অনুরোধে এসেছে বলে এতে জানানো হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ঢাকায় পৌঁছান সিঙ্গাপুরের আরো তিন সদস্যের আরেকটি চিকিৎসক দল।

চীনা দূতাবাস জানিয়েছে, চীনা ও বাংলাদেশি চিকিৎসক বিশেষজ্ঞরা অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসার লক্ষ্যে ভার্চুয়ালি পরামর্শ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশের অনুরোধে জরুরিভাবে চীনের কুনমিং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত হাসপাতাল থেকে বিশেষজ্ঞদের একটি দলকে বাংলাদেশের জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সঙ্গে পরামর্শ পরিচালনার আয়োজন করে। এ সময় গুরুতর আহত বেশ কয়েকজন রোগীর অবস্থা মূল্যায়ন এবং যৌথভাবে চিকিৎসা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে বার্ন চিকিৎসা, প্লাস্টিক সার্জারি, পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি এবং পেডিয়াট্রিক রেসপিরেটরি মেডিসিনের চীনা বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশি ডাক্তারদের সঙ্গে যোগ দেন।

নাসির উদ্দিন আমার দেশকে বলেন, আমাদের চিকিৎসক-নার্সসহ পুরো স্টাফ দিনরাত কাজ করছেন। বিদেশ থেকে আসা চিকিৎসকদের সঙ্গে এক এক করে প্রতিটি দগ্ধ ব্যক্তির শারীরিক অবস্থান নিয়ে আলোচনা চলছে। উভয়ের মধ্যে চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি জানান, এর আগে এত বেশি দগ্ধ শিশু ইনস্টিটিউটে আসেনি। চারজন শিক্ষক ছাড়া সবাই শিশু, যাদের বয়স ১৪ বছরের মধ্যে। দগ্ধদের যাবতীয় চিকিৎসা খরচ সরকার বহন করছে। আমাদের পক্ষ থেকে যাবতীয় ওষুধ বিনামূলে দেওয়া হচ্ছে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও অনেক শিশুকে বাঁচানো যাচ্ছে না। আমরা দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই, যাতে এসব শিশুকে সুস্থ করে তুলতে পারি।

১০ বছরের শিশু আয়মানের পর চলে গেল ১৩ বছরের মাকিন

শিশু তাসনিম আফরোজ আয়মানের (১০) মৃত্যুর পর মাকিন (১৩) নামের আরেক শিশু শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার তথ্য দিয়েছে জাতীয় প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১টা ৫মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মাকিন।

মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান জানান, তার শরীরে ৭০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। এর আগে একই দিন সকাল সাড়ে ৯টায় মারা যায় আয়মান নামে চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী।

গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।