
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক নিয়োগে প্রথমবারের মতো লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ২২ জুলাই সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো এ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। তবে এ পদ্ধতি নিজের পছন্দ নয় বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। এরপরও লিখিত পদ্ধতি চালু কেন করেছে, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।
উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পক্রিয়ায় লিখিত পরিক্ষার একটা চর্চা শুরু হয়েছে। এটা নিয়ে অনেকের অনেক প্রশ্ন। কিছু ব্যাপার পরিস্কার করতে চাই।লিখিত পরিক্ষা নেওয়া কি স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাক্টিস? উত্তর হচ্ছে, না। লিখিত পরিক্ষা সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত স্ট্যান্ড - এটা আমার খুব পছন্দের কিছু নয়। তাহলে আমারা এটা কেন করছি? কীভাবে করছি? উত্তরটা বেশ লম্বা।
তিনি বলেন, শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিয়ে আসার চেষ্টা আমরা করছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি, কোন কোন বিভাগে প্রার্থির সংখ্যা অনেক বেশি। লম্বা সময় নিয়ে মৌখিক যাচাইবাছাই সম্ভব নয়। একটা ইনিশিয়াল স্ক্রিনিং প্রয়োজন। লিখিত পরিক্ষার মাধ্যমে এটা করার একটা চেষ্টা করা যায়। এই লিখিত পরিক্ষা যেনতেন প্রকারে হলে চলবে না। এর একটা সাধারণ গঠন থাকতে হবে। ফোকাসটা থাকতে হবে বেইসিকসের উপর।
‘একটা উদাহরণ দিই, তাহলে বিষয়টা পরিস্কার হবে। ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির একটি বিভাগের জন্য লিখিত পরিক্ষায় চারটি প্রশ্ন ছিল। একটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ইলেক্ট্রিক্যাল সার্কিটের জন্য ডিফারেনশিয়াল ইকুয়েশন লেখা এবং তার সল্যুশন। একটি ছিল 4IR-এ ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা কী ভুমিকা রাখতে পারে তার ওপর। অন্য দুটি ছিল একেবারেই বেইসিক ট্রান্সমিশন/কমুনিকেশন সিস্টেম সম্পর্কে। মোট নম্বর ৫০। এই ধরনের প্রশ্নে যারা ১৪ বা ১৫ তুলতে পারবেন না, তাদের রেজাল্ট, পাবলিকেশন, ডিগ্রি যাই থাকুক না কেন, তাদের আমরা পরবর্তী ধাপের জন্য উপযুক্ত মনে করিনি’, যোগ করেন তিনি।
উপাচার্য বলেন, ‘লিখিত পরিক্ষা থেকে আমরা কতজন বাছাই করি? বিজ্ঞাপিত পদের তিনগুন। তবে শেষ যে স্কোর বিবেচিত হয়, সেই স্কোর প্রাপ্ত সকলেই মৌখিক পরিক্ষার জন্য ডাক পান। নির্বাচনী বোর্ডের চারজন সদস্য একাধিক প্রশ্ন করেন, সেই প্রশ্নগুলো থেকে বোর্ডের সভাপতি চারটি প্রশ্ন সিলেক্ট করেন। বোর্ডের পঞ্চম এবং শেষ সদস্য পরিক্ষার খাতায় কোডিং করেন। তিনি খাতার মুল্যায়নে অংশ নেন না। বাকি চারজন প্রত্যেকে কোডিংকৃত খাতায় কেবলমাত্র একটি করে উত্তরের মুল্যায়ন করেন। সবার নম্বরের যোগফল থেকে চুড়ান্ত নম্বর প্রস্তুত করা হয়। আমাদের দিক থেকে সচ্ছতা নিশ্চিত করার সবরকম চেষ্টা করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, মৌখিক পরিক্ষায় বিষয়ের বাইরে কোন প্রশ্ন করা হয় না। পিতার নাম কী? বাড়ি কোথায়? কার আন্ডারে থিসিস করেছ? এই ধরনের প্রশ্ন করা যাবে না। বিষয়, থিসিস, পাবলিকেশন এই তিনটি হচ্ছে প্রশ্নের জায়গা। এর বাইরে কোন আলাপ নেই। সময়ের কোন বার নেই, যাচাই করতে যতটুকু সময় নিতে হয়, আমরা নিই। মৌখিক পরিক্ষায় পাঁচজন বোর্ড মেম্বার যারযার মত মার্কিং করেন। মার্কিং-এর সময় কোন ধরনের আলাপ আলোচনার সুযোগ নেই।
লিখিত, মৌখিক, রেজাল্ট, উচ্চতর ডিগ্রি এবং পাবলিকেশন দেখে নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয় জানিয়ে অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘এ বিশ্ববিদ্যালয় নষ্ট হয়েছে বিভিন্ন দেনদরবার এবং লেনদেনকে সামনে রেখে দুটি পদের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে ছয়-সাতটি নিয়োগ দিয়ে। এমনটা বারবার হয়েছে। এটা আমরা করব না। বরং যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে, বিজ্ঞাপনে উল্লিখিত সংখ্যা আমরা পূর্ণ করছি না।’
তিনি বলেন, ‘চারটির জন্য বিজ্ঞাপন, চারজন ভালো ক্যান্ডিডেইট পাওয়া না গেলে, তিনজন নেওয়া হবে। তিনজন পাওয়া না গেলে, দুজন। কাউকে পাওয়া না গেলে, কেউ নয়। সংখ্যা পূর্ণ করার কোন দায় আমার নেই। আমরা চেষ্টা করছি। কী করছি, কতটুকু করছি সেটা ভবিষ্যত বলে দেবে।’