Image description
 

সংস্কারের দীর্ঘসূত্রিতা আর অবহেলায় সাত বছর ধরে বন্ধ রাখা পান্থকুঞ্জ পার্কটির হয়তো শেষ রক্ষা হচ্ছে না। ধ্বংসের আয়োজনে শেষ পেরেক ঠুকতে যাচ্ছে হাসিনা আমলে নেয়া প্রকল্প এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্প। পার্কটি বাঁচাতে বর্তমান সরকারও অনেকটাই উদাসীন। তবে এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পার্কটিকে বাঁচাতে লড়ে যাচ্ছেন গাছ রক্ষা আন্দোলন কর্মীরা।কনক্রিটে ঠাসা রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে এক খণ্ড সবুজের আচ্ছাদন পান্থকুঞ্জ পার্ক। কারওয়ানবাজার সংলগ্ন হাজারো বৃক্ষ শোভিত ৫ একর আয়তনের এই উদ্যান আশপাশের মানুষের কাছে ছিল এক এক স্বস্তির ঠিকানা। কিন্তু সেই ঠিকানার স্বরুপ বদলে দেয়া হচ্ছে নগর উন্নয়নের যাতাকলে। একসময়ের স্নিগ্ধ-শীতল পার্কটিকে পরিণত করা হয়েছে রং-রূপহীন এক পরিত্যক্ত জায়গায়।

রাজউকের তত্ত্বাবধানে থাকা পার্কটির মালিকানা আশির দশকের শেষে আসে ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাছে। ২০১৮ সালে এটিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। বিপত্তির শুরুটা সেখান থেকেই। গত ৭ বছর ধরে এখানে প্রবেশে মানা সাধারণ মানুষের।স্থানীয়রা জানান, ছোট সময় যে পার্কটি তারা পেয়েছেন সেই পার্কের পরিবেশ এখনকার ছোট বাচ্চারা পাবে না। যখন পার্ক বন্ধ করে দেয়া হয় তখনই স্থানীয়দের মনে প্রশ্ন আসে কেনো বন্ধই করে দেয়া হলো পার্কটি।

দীর্ঘ সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যেই জানা যায়, পান্থকুঞ্জ পার্কের একপাশে নির্মাণ করা হবে এলিভেটেড এক্সপ্রসেওয়ের র‍্যাম্প। যেখানে ওঠানামা করবে গাড়ি। তাই পার্কটি রক্ষার দাবিতে সম্প্রতি জোড়ালো আন্দোলনে নামেন পরিবেশবাদীরা। আবার সেই আন্দোলনে বাধা দেয় আরেকটিপক্ষ।পরিবেশবাদীরা বলছেন, পার্ক থেকে ৪০ প্রজাতির গাছ কাটা হয়েছে। দোয়েল, কাক আবাসস্থল হারিয়েছে। পার্কগুলোকে উন্নয়নের নামে নষ্ট না করে আরও সুন্দর নকশা করে কিভাবে এটা স্বতঃস্ফূর্ত করে মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ানো যায় সেটা নিশ্চিত করাই প্রধান কাজ।তারা আরও বলেন, সরকারের সঙ্গে তাদের কয়েকদফায় মিটিং হয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো রেসপন্স পাওয়া যায়নি।

পরে পরিবেশের ক্ষতি বিবেচনায় প্রাথমিক নকশায় আনা হয় পরিবর্তন। সংশোধিত নকশা তৈরি করে স্থপতি ইকবাল হাবিবের প্রতিষ্ঠান ভিত্তি আর্কিটেকচার। তবে তাতেও পুরোপুরি রক্ষা হবে না পার্কের। অবশ্য পরিবেশ বিপর্যের এমন আয়োজনে নিজের সম্পৃক্ততার কথা নাকচ করেন স্থপতি ইকবাল হাবিব।তিনি বলেন, এর ভেতর দিয়ে যখন নিশ্চিত যে রুট নেবেই। তখন এর নিচে কি কি করা যায় তার একটি পরিকল্পনা জমা দেয়া হয়েছিল প্রায় ৯৭ কোটি টাকার। তখন বলেছিলাম পান্থকুঞ্জ আর যেনো ধ্বংস না করা হয়। কিন্ত আমরা সেই সময় সরকারকে বলেও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারিনি।উন্নয়নের নামে প্রকৃতি বিনষ্টের এমন উদ্যোগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একথা বলছেন, নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান।

তিনি বলেন, পার্কটা যেভাবে বলি দেয়া হচ্ছে এটি আসলে আধুনিক পরিকল্পনার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বিগত সরকারের অবকাঠামোকেন্দ্রীক উন্নয়নের যে তত্ত্বটা নিয়ে এসেছিলো যেখানে জনগণ কোনো প্রশ্ন করতে পারেনি এটিরই একটি প্রতিফলন এই ধরণের নকশা। বর্তমান সরকার তো সংস্কারের কথা বলছে তাহলে সংস্কারের ভাবনায় এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এই লিংকটা বাতিল হওয়া উচিত।পান্থকুঞ্জ পার্কের সবুজে ভরা আবহ, এলাকাবাসীর কাছে এখন কেবলই স্মৃতি। যদিও তারা স্বপ্ন দেখেন উন্নয়নের বলি থেকে রক্ষা পাবে এই উদ্যান।