Image description
সোনালি যুগের অবসান ঘটায় ঢাকা শহরে বেশ কিছু গুনী মানুষের পদ শূন্য হয়েছে বা শূন্য হবার পথে রয়েছে। কিন্তু পদ কখনো শূন্য থাকে না। তা সতত পূরণের চেষ্টাই প্রকৃতির নিয়ম।
গুনী মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বয়সোচিত কারণে অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। প্রতিশ্রুতিশীল আইনজীবী সারা হোসেন সে জায়গাটি নিয়ে নেবেন; এ প্রত্যাশা রাখা যায়। গুনী অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা আওয়ামী লীগের এমপি হয়ে সংস্কৃতিমুখ হিসেবে তার জায়গাটি হারিয়েছেন; এই শূন্য জায়গায় আপনি অভিনেত্রী জয়া আহসানকে কল্পনা করতে পারেন। অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর আওয়ামী লীগের মন্ত্রী হয়ে কারাগারে। ঐ শূন্যপদে যেহেতু অভিনেতা কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না; তাই সাংবাদিক তাসনিম খলিলকে কল্পনা করা যায়। ধর্মীয় নেতা শাফির শূন্যপদটি অবশ্যই মামুনুল হককে দিতে হবে।
অভিনেতা আলী যাকের নেই; ঐ শূন্য পদ গুনীজন শহিদুল আলমকে অবশ্যই দেয়া যাবে। অভিনেত্রী সারা যাকের-এর নিষ্ক্রিয়তায়; সে জায়গাটা অধ্যাপিকা রেহনুমা'র জন্য রইলো। এ শহর আলো করতে পাওয়ার কাপল তো আমাদের লাগবেই।
অধ্যাপক রাজ্জাকের শূন্যপদটি অনেকদিন ধরেই অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খানের দখলে। ফলে আহমদ ছফার শূন্যপদটি নিতে হয়েছে ব্রাত্য রাইসুকে।
আমাদের অনেকদিনের আক্ষেপ আমাদের শহরে কোন অরুন্ধতি রায় নেই; সুতরাং সে আক্ষেপ পূরণে মাহা মির্জা রয়েছেন।
অধ্যাপক এম এম আকাশ বিতর্কিত হয়ে পড়ায় ঐ শূন্য পদে আপনি অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটনকে অবশ্যই ভাবতে পারেন।
ফরহাদ মজহারের বয়স হয়েছে; ফলে উনার পদে চিন্তক রেজাউল করিম রনিকে ভাবতে পারেন।
খ্যাতিমান সাংবাদিক মাহফুজ আনামের বয়স হয়েছে; সেখানে প্রতিশ্রুতিশীল সাংবাদিক জাফর সোবহানকে বেশ যোগ্য মনে হয় আমার কাছে। ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুনের জায়গাটা হয়তো তরুণ ইতিহাসবিদ সহুল আহমেদ পেয়ে যাবেন।
বাম নেতা রাশেদ খান মেননের শূন্যতা পূরণে রুহিন হোসেন প্রিন্স; আর হাসানুল হক ইনুর শূন্যস্থান পূরণে জোনায়েদ হোসেন সাকিকে ভাবা যায়।
প্রথম আলোর গুনী সম্পাদক মতিউর রহমানের বয়স হয়েছে। তিনি যেভাবে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের পরিচর্যা করেন; সেই কাজটা প্রাজ্ঞ সাজ্জাদ শরিফ পারবেন বলে মনে হয়।
পৃথিবীর প্রতিটি শহরেই তিরিশ পয়ত্রিশ জন মানুষ থাকে; লিট ফেস্ট-নৃত্যানুষ্ঠান, সংগীত আয়োজন, সাহিত্যসভা, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিবৃতিতে স্বাক্ষর ও কুলখানি-শেষ কৃত্যে তাদের দেখা পাওয়া যায়। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে তাদের একজন দু'জনকে দাওয়াত দিয়ে আনতে পারলে সাধারণ নাগরিকের জীবন ধন্য হয়ে যায়। প্রতিবেশীরা তাকে বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করে।
ইন্টারনেট সেলিব্রেটি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলিকন যুগে আরো বেশ কিছু গুনীজন পেয়ে যাওয়ার কারণে সোনালী যুগের বেঙ্গল রেনেসাঁ সিলিকন যুগে এনলাইটেনমেন্টে-এ প্রবেশ করেছে।
এতে আবার মুশকিলও হয়েছে। প্রথম আলোর বুদ্ধিজীবী বিনির্মাণের মনোপলিকে চ্যালেঞ্জ করেছে ইন্টারনেটের আলো। মাস্টারদা সূর্যসেনের শূন্যপদটি যেমন দখল করেছেন আলতাফ পারভেজ, জুলিয়ান এসাঞ্জের জায়গাটা নিয়েছেন জুলকারনাইন সায়ের। প্রীতিলতার সংখ্যা অনেক, কাকে ফেলে কার কথা লিখি।
তবু আমার অভিমত হচ্ছে, ইন্টারনেটে কোয়ালিফাইং রাউন্ড খেলে প্রথম আলোর গোলটেবিলে পৌঁছে গেলে; আমরা সোনালী যুগের সঙ্গে সিলিকন যুগের একটা সমন্বয় করতে পারবো।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, প্রথম আলোকে আমাদের কেন প্রয়োজন? অনেক প্রয়োজন। প্রথম আলো আমাদের শেখায় কিভাবে আধুনিক হতে হবে, লিবেরেল হতে হবে, আর সেটা হতে কিভাবে কথা বলতে হবে, কি পোশাক পরতে হবে; কি খেতে হবে-কেন খেতে হবে।
প্রথম আলো আমাদের শেখায় গণতন্ত্র কি! প্রথম আলোর ৩৫ জন পুরোহিত যাকে ক্ষমতায় থাকার যোগ্য মনে করবে; ১৮ কোটি মানুষকে তাকে যোগ্য ভাবতে শিখতে হবে। এথেন্সের নগররাষ্ট্রে ব্যাপারটা এরকম ছিলো। নগরীর গার্ডিয়ান এঞ্জেলরা যাকে শাসক মনোনীত করতো; সেই নগর রাষ্ট্র শাসন করতো।
সুতরাং প্রথম আলো যা বলে, তা মন দিয়ে শুনুন। নইলে আনস্মার্ট থেকে যাবেন। একেবারেই আধুনিক হতে পারবেন না। প্রথম আলো ঠিক করে দেয়, কে প্রজাপতি আর কে তেলাপোকা। প্রজাপতির মৃত্যুতে কাঁদতে হবে এসথেটিকসের আলোয়। আর তেলাপোকার মৃত্যুতে মুখ টিপে হাসতে হবে। আপনি যদি তেলাপোকা না হতে চান, তবে প্রথম আলোর প্রজাপতির রঙ মুখে মাখুন। প্রজাপতিভিত্তিক সমাজই হোক আমাদের লক্ষ্য।
 
Maskwaith Ahsan