
গাজায় নারীদের অধিকার নিয়ে ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় থাকা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সম্প্রতি ফুল সেন্ড পডকাস্টে হাজির হয়ে এ উদ্বেগ জানান তিনি।
গাজা ও এর বাসিন্দাদের ধ্বংসে যিনি বদ্ধপরিকর, তার মুখে এমন ‘সহানুভূতির’ কথা শুনে বিস্মিত বিশ্ববাসী। নেতানিয়াহু বলেন, ‘গাজার নারীরা সম্পত্তি, তাদের কোনো মূল্য নেই, তাদের কোনো অধিকার নেই, তারা পুরোপুরি দমন-পীড়নের শিকার। ঈশ্বর না করুন, তারা যদি কথিত কোনো অপরাধ করে বসেন, তবে তাদের প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়। এটি একেবারেই অযৌক্তিক।’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘(গাজার) তরুণ-তরুণীরা প্রগতিশীল মূল্যবোধের নামে হামাসকে সমর্থন করছেন। তারা বুঝতে পারছেন না, কী ভালো, আর কী মন্দ।’ তিনি বাইবেলের উদ্ধৃতি টেনে বলেন, ‘তাদের কি চোখ নেই দেখতে, কান নেই শুনতে?’
নেতানিয়াহু যাদের মুক্তির কথা বলে আবেগে গলা চড়াচ্ছেন, সেই ফিলিস্তিনি নারীদেরই মৌলিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনের অধিকার ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ছিনিয়ে নিচ্ছে। নির্বিচার বোমা হামলা ও দমনমূলক নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া সেই ইসরায়েল সরকারেরই প্রধান তিনি।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত সাড়ে ৫৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। এ সংখ্যাও রক্ষণশীল একটি হিসাব। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার মতে, নিহত ফিলিস্তিনিদের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
নেতানিয়াহুর বক্তব্য এমন এক সময়ে এল, যখন গাজার ক্ষুধার্ত নারী–পুরুষ ও শিশুরা ইসরায়েলের টানা অবরোধের মধ্যে অবর্ণনীয় দুরবস্থায় দিনাতিপাত করছে। জাতিসংঘ ও ত্রাণ সংস্থাগুলো এ উপত্যকায় ওষুধ, সুপেয় পানি ও খাদ্য সরবরাহ করতে পারছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানায়, গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুই-তৃতীয়াংশ কার্যত অচল। ৬৮৬টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ইসরায়েলি হামলার তথ্য তারা নথিভুক্ত করেছে। মাত্র আটটি হাসপাতাল আংশিক মাতৃত্বসেবা দিতে পারছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রায় নেই বললেই চলে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) জানিয়েছে, গাজায় প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার অন্তঃসত্ত্বা নারী রয়েছেন। তাদের মধ্যে শুধু রাফা অঞ্চল থেকেই সাড়ে ১৮ হাজার নারীকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে।
নেতানিয়াহুর এ বক্তব্যকে শুধু ভণ্ডামি নয়; বরং ইতিহাস বিকৃতিরও প্রয়াস বলে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। তাদের মতে, ফিলিস্তিনি নারীরা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও প্রতিরোধ সংগ্রামের অগ্রভাগে আছেন। তাদের শুধু ‘ভুক্তভোগী’ হিসেবে তুলে ধরা (নেতানিয়াহুর বক্তব্যে) তাদের পরিচয়কেই সংকুচিত করে, বাস্তবতাকে আড়াল করে।
সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে নেতানিয়াহু আরও বলেন, ‘হামাস যাদের দমন করে রেখেছে, তাদের কেন হামাসের সমর্থক হিসেবে দেখা যাচ্ছে? তাদের আটক করে রাখা হয়েছে কেন? তাদের তো চলে যাওয়ার সুযোগ দেয়া উচিত, স্বাধীনতা দেয়া উচিত, বাঁচার ও ভবিষ্যতের সুযোগ দেয়া উচিত।’
শীর্ষনিউজ