Image description
 

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জেলা সিভিল সার্জন ডা. এসএম মনজুর-এ-এলাহীর পরিদর্শনকে কেন্দ্র করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ভূরিভোজ এবং সিভিল সার্জনকে উপহার দেওয়ার অজুহাতে হাসপাতালের ২২৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকে তোলা হয় এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায়ের বিষয়টি গতকাল বৃহস্পতিবার জানাজানি হলে উপজেলাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সিভিল সার্জন।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে যান বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনজুর-এ-এলাহী। এ সময় তিনি হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়নে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। পাশাপাশি বাকেরগঞ্জের বিভিন্ন ক্লিনিকের মালিকের সঙ্গেও বৈঠক করেন। দুপুরে ভূরিভোজ শেষে তিনি বিকালে বরিশালের উদ্দেশে বাকেরগঞ্জ ছাড়েন।

 

তবে জেলা সিভিল সার্জনের পরিদর্শন উপলক্ষে আগেই হাসপাতালের অভ্যন্তরে শুরু হয় ব্যাপক প্রস্তুতি, যার অংশ হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুমী আক্তার হাসপাতালের সব চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও স্টাফের কাছ থেকে চাঁদা তোলেন। বলা হয়, এর মাধ্যমে ভালো মানের লাঞ্চ সরবরাহ এবং সিভিল সার্জনকে আকর্ষণীয় উপহার দেওয়া হবে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সিভিল সার্জনকে আপ্যায়নের অজুহাতে হাসপাতালের ২২৮ জন স্টাফের মধ্যে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ৮০০ টাকা, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের কাছ থেকে ৬০০ টাকা এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা আদায় করা হয়। এর মাধ্যমে উত্তোলন করা হয় প্রায় দেড় লাখ টাকা । এসব অর্থে আয়োজন করা হয় দুপুরের খাবার। এছাড়া সিভিল সার্জনকে উপহার দেওয়ার জন্য কেনা হয় বড় সাইজের আটটি ইলিশ এবং ছয়টি আইড় মাছ, যা রাখা হয় হাসপাতালের ওষুধের জন্য বরাদ্দ ডিপ ফ্রিজে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতাল একাধিক কর্মী আমার দেশকে জানান, ভূরিভোজ ও সিভিল সার্জনকে উপহার দেওয়ার কথা বলে চাঁদা নেওয়া হয়েছে। এটি তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। অনেকে বাধ্য হয়ে অর্থ দিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছেÑহাসপাতাল পরিদর্শনের সফর সরকারি দায়িত্বের অংশ হলে এর জন্য কেন ব্যক্তিগতভাবে খরচ বহন করতে হবে। সিভিল সার্জনের আগমনকে কেন্দ্র করে কতিপয় ব্যক্তির ব্যক্তিগত সুবিধা গ্রহণের সুযোগ হিসেবেই এ আয়োজন করা হয়।

চাঁদা আদায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, ভূরিভোজের জন্য টাকা আদায় করা হয়েছিল। এ অর্থ খরচ করে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা এবং সিভিল সার্জনের জন্য মাছ কেনা হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুমী আক্তার বলেন, টাকা কালেকশন করার বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।

সিভিল সার্জন মনজুর-এ-এলাহী আমার দেশকে বলেন, আমি বুধবার সকালে বাকেরগঞ্জ গিয়েছিলাম। হাসপাতালের সেবার মান বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন ক্লিনিকের মালিকের সঙ্গে মতবিনিময় করি। তবে তার হাসপাতাল পরিদর্শনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আয়োজন ও চাঁদা উত্তোলনের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খাবারের জন্য হয়তো তারা আয়োজন করেন। তবে চাঁদা উত্তোলনের বিষয়টি আমি জানি না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, এই প্রথম শুনলাম চাঁদা আদায় করে ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে এভাবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক খরচ চাপিয়ে দেওয়া হলে সরকারি সেবার মান বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি কর্মপরিবেশও নষ্ট হবে। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।