Image description

গাজীপুরের টঙ্গীতে পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের মাঠে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় তিন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের একজন রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বিকেলে টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন—রাফি ভুঁইয়া (১৬), আরিফ ভুঁইয়া (১৭) এবং দুর্জয় (১৭)। এদের মধ্যে রাফি ও আরিফ টঙ্গী পাইলট স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং দুর্জয় অন্য স্কুলের শিক্ষার্থী। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোবাইল ফোন সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পূর্ববিরোধ থাকা অবস্থায় ভুক্তভোগীরা টঙ্গী পশ্চিম থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এরপরই প্রতিশোধ নিতে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার দিন প্রায় ৫০-৬০ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পাইলট স্কুল মাঠে এসে রাফি, আরিফ ও দুর্জয়ের ওপর হামলা চালায়।

আহতদের মধ্যে রাফিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উত্তরা সিন সিন জাপান হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং বর্তমানে তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। অপর দুই শিক্ষার্থীকে টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী এবং ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক সৈকত জানান, হামলাকারীদের মধ্যে নাঈম, রানা, জীবন, ইমন, জয়, বিজয় ও সানিম নামে কয়েকজন ছিল। হামলার পর তিনজনকে ধরে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তবে পরে দেখা যায় অধ্যক্ষ তাদের ছেড়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

আহত শিক্ষার্থীদের সহপাঠীরা তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত নাঈমের বাসার সামনে অবস্থান নেন। এবং তারা পুলিশ আসা পর্যন্ত সেখানে অবস্থানে থাকেন। টঙ্গী পশ্চিম থানার পুলিশকে বিষয়টি অবগত করলে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে  অভিযুক্ত নাঈমের বাসা তল্লাশি করে নাঈমকে খুঁজেন। এসময় নাঈমের মা জানান নাঈম বাসায় নেই এখন তবে সে কোন মারামারিতে যুক্ত ছিলো না। 

সৈকতের অভিযোগ, “আমরা অধ্যক্ষকে অনুরোধ করেছিলাম যেন অপরাধীদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে আহতদের ভর্তি করিয়ে কলেজে ফিরে দেখি তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাহলে কি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ কিশোর গ্যাংকে আশ্রয় দিচ্ছেন?”

এ বিষয়ে পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, তার মোবাইল ফোন রিসিভ করে তার ছেলে জানান, অধ্যক্ষ অসুস্থ।

এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ঘটনার পর পুলিশে খবর দেওয়া হলেও ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে। অনেকেই মনে করছেন, ভারপ্রাপ্ত  অধ্যক্ষের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক দলের য ছত্রছায়ায় থাকা কিশোর গ্যাংয়ের কারণে হামলাকারীরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, অভিযুক্ত কিশোরদের একটি গ্রুপ ‘ইনডোর’ নামে এলাকায় পরিচিত এবং তারা ৫৪ নং ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা ইব্রাহীম চৌধুরীর অনুসারী। 

ঘটনা পরবর্তী স্থানীয়রা অভিযোগ তুলে বলেন, যেখানে টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজের ৩ জন শিক্ষার্থীর উপর হামলা হয়েছে কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতরে। সেখানে অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের পাশে না দাঁড়িয়ে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে কীভাবে তাদের ছেড়ে দেন?  এটা দুঃখ জনক। সম্পূর্ণ বিষয় তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান স্থানীয়রা। 

ঘটনার বিষয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইস্কান্দার হাবিবুর বলেন, “দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”