Image description
♦ পোশাকশিল্পে বাজার হারানোর আশঙ্কা ♦ মাসে ২০০ থেকে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত খরচ হবে

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত প্রস্তাবিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক পোশাক খাতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। ৩৫ শতাংশের সঙ্গে আগের ১৫ শতাংশ যোগ হলে শুল্ক হবে ৫০ শতাংশ। পোশাক খাতে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম। ভিয়েতনামে ৪৬ শতাংশ শুল্ক অরোপ করা হলেও পরে তা ২০ শতাংশ করা হয়। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করে পাল্টা শুল্ক ৩২ থেকে ১৯ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। ভারতের ক্ষেত্রেও শুল্ক ২০ শতাংশের নিচে হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিযোগী এসব দেশের কম শুল্কই পোশাক খাতের নতুন চ্যালেঞ্জ হবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি এখন অসম প্রতিযোগিতার মুখে। দেশটিতে রপ্তানি ব্যাপক হারে কমে যেতে পারে।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান এখন তৃতীয়। আর ভারতের অবস্থান চতুর্থ। ভারতের শুল্ক বাংলাদেশের তুলনায় কম হলে বাংলাদেশ ভারতের কাছে বাজার হারাতে পারে। বাংলাদেশকে টপকে তৃতীয় স্থানে চলে আসতে পারে ভারত। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভিয়েতনামের সঙ্গে বাংলাদেশের আরও বড় ব্যবধান তৈরি হতে পারে। নতুন কাঠামোতে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে বাংলাদেশের তুলনায় এ দেশ দুটির শুল্কহার কম। বাংলাদেশের তুলনায় কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকতে পারে প্রধান রপ্তানিকারক চীনও। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বরাবরের মতো শীর্ষে রয়েছে চীন। গত বছর দেশটির রপ্তানির পরিমাণ ১ হাজার ৬৫১ কোটি ডলার। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভিয়েতনামের রপ্তানির পরিমাণ ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার। তৃতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ৭৩৪ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে ভারতের অবস্থান চতুর্থ। গত বছর দেশটির পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৬৯ কোটি ডলার। পঞ্চম অবস্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়ার পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ৪৩০ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ ১০ দেশের বাকি দেশগুলো যথাক্রমে কম্বোডিয়া, মেক্সিকো, পাকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়া। অটেক্সার উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে এ প্রবণতা রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার যদি শুল্ক কমাতে না পারে শুধু অর্ডার হ্রাস নয়, এর ফলে শ্রমিকের মজুরি, কর্মসংস্থান ও সামাজিক স্থিতিশীলতা সবই ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে শুধু অর্ডার নয়, বরং বিশ্বমঞ্চে এ দেশের তৈরি পোশাক খাতের দীর্ঘদিনের অর্জন ও ভাবমূর্তি চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো শুল্ক আলোচনায় কোন অবস্থায় থাকছে, সেটি আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বড় বাজার। এটি যতটুকু সম্ভব ধরে রাখতে হবে। কয়েক বছর ধরে, বিশেষ করে ভারতসহ অনেক দেশ এ বাজারে আসতে চাইছে। তারা এখন সুযোগ কাজে লাগাতে চাইবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পোশাকের অনেক বড় সরবরাহকারী দেশ। এক দিনে এখান থেকে চলে যেতে পারবে না। ক্রেতারা একটা দরকষাকষির মধ্যে আসতে চাইবেন। বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও ইউনাইটেড ফোরামের প্যানেল লিডার মোহাম্মদ মফিজ উল্লাহ বাবলু বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিযোগী দেশের মধ্যে ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, কম্বোডিয়া অন্যতম। ভারতের এখন পর্যন্ত আগের ২৬ শতাংশ শুল্ক বহাল আছে। বাংলাদেশের সেখানে ১ তারিখের পর থেকে ৫০ শতাংশ শুল্ক বহন করতে হবে।