
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত মোছা. মাহিয়া। বিমান দুর্ঘটনায় শরীরের ৫০ শতাংশ ঝলসে যায় তার, পুড়ে গিয়েছিল শ্বাসনালিও।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বিকাল ৪টার দিকে মৃত্যু হয় মাহিয়ার। দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে মারা যায় আরেক শিক্ষার্থী মাহতাব হোসেন ভূঁইয়া। মাহতাব মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। দুর্ঘটনায় তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। আইসিইউতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিভে যায় মাহতাবের জীবনপ্রদীপ।
আইসিইউর ভিতরে জীবনমৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন রোগীরা, বাইরে দীর্ঘ অপেক্ষায় স্বজনরা। একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য এ যেন এক অসম যুদ্ধ। সন্তানের অবস্থা একটু ভালো শুনলে উৎকণ্ঠা কিছুটা কমছে, আবার অবস্থার অবনতি শুনলে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন শিশুদের বাবা-মা এবং স্বজনরা।
আহত রোগীদের শুশ্রƒষায় দিনরাত চেষ্টা করছেন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা। গতকাল বার্ন ইনস্টিটিউটে আহত রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ করেছে ভারতীয় চিকিৎসক দল। এই চিকিৎসক দলে দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং দুজন অভিজ্ঞ নার্স রয়েছেন। তারা ভারতের নয়াদিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতাল এবং সফদারজং হাসপাতালে কর্মরত আছেন। এর আগে বুধবার সিঙ্গাপুর থেকে আসা চিকিৎসক প্রতিনিধিদল বার্ন ইনস্টিটিউটে রোগীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসকদের সঙ্গে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আলোচনা করে। এ ছাড়া গতকাল রাতে ঢাকা এসে পৌঁছেছে চীনের চিকিৎসক প্রতিনিধিদল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় ৩১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১৩ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১৫ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন, লুবানা জেনারেল হাসপাতালে অজ্ঞাত একজন এবং ইউনাইটেড হাসপাতালে একজন মারা গেছেন। বিমান দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বর্তমানে রাজধানীর তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৫১ জন।
মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ২০ শিক্ষার্থীসহ ২৪ জন নিহত হয়েছেন, নিখোঁজ রয়েছেন পাঁচজন। স্কুল কর্তৃপক্ষ গতকাল লিখিত বক্তব্যে জানায়, সেদিন বেলা ১টা ১২ মিনিট থেকে ১টা ১৪ মিনিটের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে একটি দোতলা ভবনে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। বেলা ১টায় স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়ায় তখন অভিভাবকদের জন্য শুধু স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী অপেক্ষারত অবস্থায় ছিল। এ সময়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় মাইলস্টোনের স্কুল শাখার ২০ জন শিক্ষার্থী, দুজন শিক্ষক, দুজন অভিভাবকসহ মোট ২৪ জন নিহত হন। গুরুতর আহত রয়েছেন ৪৯ জন। এদের মধ্যে ৩৮ শিক্ষার্থী, সাতজন শিক্ষক, একজন অভিভাবক, একজন আয়া ও একজন পিয়ন রয়েছেন। মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষ জানায়, এখন পর্যন্ত তিনজন শিক্ষার্থী ও দুজন অভিভাবকসহ মোট পাঁচজন নিখোঁজ রয়েছেন।
ডিএনএর মাধ্যমে পরিচয় মিলল পুড়ে অঙ্গার পাঁচ লাশের : রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় পুড়ে অঙ্গার পাঁচ লাশের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। এর আগে লাশগুলোকে প্রাথমিকভাবে নম্বর দিয়ে রেখেছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পরে দাবিদার পাঁচ পরিবারের মোট ১১ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষানিরীক্ষা শেষে গতকাল পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া ওই পাঁচ লাশের পরিচয় শনাক্ত হয়। গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় সিআইডির ওই কর্মকর্তা জানান, দাবিদার পরিবারগুলোর সঙ্গেই ডিএনএ মিলেছে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া লাশগুলোর। পাঁচ লাশের মধ্যে তিনজন শিক্ষার্থী এবং দুজন অভিভাবক। শনাক্ত লাশগুলোর মধ্যে আছে শিক্ষার্থী ওকিয়া ফেরদৌস নিধি (৯), অজ্ঞাত হিসেবে তার বডি নম্বর ছিল ৬২৫। অজ্ঞাত হিসেবে রাখা ৬২৬ নম্বর বডিটি লামিয়া আক্তার সোনিয়ার (২৮), তার বাবার নাম মো. বাবুল এবং মা মাজেদা। ৬২৭ নম্বর বডিটি আফসানা আক্তার প্রিয়ার (২৮), তার বাবার নাম আব্বাস উদ্দিন এবং মা মিনু আক্তার। ৬২৯ নম্বর বডিটি রাইসা মনির (৯), তার বাবার নাম শাহাবুল শেখ এবং মা মিম। ৬৩০ নম্বর বডিটি মারিয়াম উম্মে আফিয়ার (৯), তার বাবার নাম আবদুল কাদির এবং মা উম্মে তামিমা আক্তার।