
খুলনা জেনারেল হাসপাতালের ৮ তলা নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ এক বছর ধরে সম্পূর্ণ বন্ধ। ২০১৮ সালের আগস্টে শুরু হওয়া চার বছর মেয়াদি এ প্রকল্পটি আজও শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগী ও তাদের স্বজনরা। পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলছে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম, অপরদিকে চিকিৎসা সুবিধার প্রসারে নির্মাণাধীন ভবনটি থেমে আছে কার্যত অচল অবস্থায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের নতুন ভবনের নির্মাণ এলাকাটি বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। চারপাশে স্তূপ করে রাখা নির্মাণ সামগ্রী, কোথাও কোনো কর্মীর দেখা নেই, বিরাজ করছে নিস্তব্ধতা। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সেখানে কোনো নির্মাণ কাজ হয়নি।
২০১৮ সালের আগস্টে হাসপাতালের রোগীর অতিরিক্ত চাপ সামাল দিতে ১২ তলা ফাউন্ডেশনের ওপর ৬ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয় ৪০ কোটি টাকা। পরবর্তীতে কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ২০২১ সালের মার্চে ব্যয় বাড়িয়ে ৬৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। তবুও ৭ বছরে শেষ হয়েছে মাত্র ৭৭ শতাংশ কাজ।
চিকিৎসকদের তথ্য অনুযায়ী, কাগজে-কলমে খুলনা জেনারেল হাসপাতাল ২৫০ শয্যার হলেও বাস্তবে সেবা পাচ্ছেন অর্ধেকেরও কম রোগী। বর্তমানে মাত্র দুটি ভবনে চালু রয়েছে ১১৫টি শয্যার কার্যক্রম। পুরাতন ভবনগুলোর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। অনেক ওয়ার্ডের ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে, কোথাও কোথাও রড বেরিয়ে গেছে, মেঝেতে দেখা দিয়েছে ফাটল। রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ছাদের পানি ও ধুলাবালি থেকে রক্ষায় শয্যার ওপর কাপড় টানিয়ে রাখা হচ্ছে।
হাসপাতালের আরেক প্রান্তে টিনশেডে চলছে বহির্বিভাগের কার্যক্রম। ছোট কক্ষে একাধিক চিকিৎসকের একসঙ্গে বসে চিকিৎসা দিতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়ছেন তারাও। রোগীদের অবস্থা আরও করুণ। চিকিৎসার জন্য আসা রোগীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কিংবা মেঝেতে বসে অপেক্ষা করছেন।
সালমা আক্তার নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, রোগী নিয়ে এসে মেঝেতে বসতে হয়। চিকিৎসা নিতে এসেও জায়গার জন্য যুদ্ধ করতে হয়। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
রোগী আফজাল হোসেন আরেক রোগীর স্বজন বলেন, বাবাকে নিয়ে সকাল ৭টায় এসেছি, এখন বিকেল ৩টা বাজে তবুও ডাক্তার দেখাতে পারিনি। বসার জায়গা নেই, পানি খাওয়ার ব্যবস্থাও খুবই খারাপ। এমন পরিস্থিতিতে অসুস্থ মানুষকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হয়।
খুলনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম গাজী জানান, নতুন ভবনের কাজ শেষ করতে আমরা সংশ্লিষ্ট দফতরকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি, যোগাযোগ করেছি, কিন্তু কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। অথচ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ হাজার রোগী বহির্বিভাগ থেকে সেবা নিচ্ছেন। ভবন সংকটে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ এখনও চালু করা যাচ্ছে না। এতে রোগীদের ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছে।
এদিকে গণপূর্ত বিভাগ জানিয়েছে, অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতে হলে নতুন একটি প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, নতুন প্রকল্প প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে কাজ দ্রুত শুরু হবে। আশা করি এক বছরের মধ্যে বাকি কাজ সম্পন্ন করা যাবে।