Image description

জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ষষ্ঠ তলায় চিকিৎসাধীন মো. মাহতাব। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার শরীরের ৮৫ শতাংশই পুড়ে গেছে। সেই দগদগে শরীর নিয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছে ১৪ বছর বয়সের এই কিশোর। কষ্ট-যন্ত্রণায় মাহতাবের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে, ‘আম্মু আমার সারা শরীর জ্বালাপোড়া করছে।

আর সহ্য করতে পারছি না। তুমি বল না আমি কবে সুস্থ হব। তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে আমার জন্য দোয়া কর, আমি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠি।’ এভাবেই আকুতি-মিনতি করে কেঁদে কেঁদে মা রাহেলা ইসলামের কাছে নিজের কষ্ট ব্যক্ত করে মাহতাব।

পাশের বিছানায় শোনা গেল আরেক দগ্ধ শিশুর আর্তচিৎকার। মো. তানভীর নামের শিশুটির শরীরের প্রায় শতভাগ পুড়ে গেছে। কেবল মাহতাব কিংবা তানভীর নয়, উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ সবার মুখে একই যন্ত্রণার সুর; একই ধরনের অসহায়ত্ব।

গতকাল মঙ্গলবারও অন্যান্য হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আরো বেশ কয়েক জনকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। শিশু শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ বর্তমানে অন্তত শতাধিক পোড়া রোগী সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন শাওন বিন রহমান বলেন, দগ্ধদের বেশিরভাগের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।

মঙ্গলবার সরেজমিনে বার্ন ইনস্টিটিউটের পঞ্চম থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত গিয়ে দেখা যায়, দগ্ধ রোগীদের আর্তচিৎকারে এখানকার বাতাস ভারী হয়ে উঠছিল। শিশুদের অভিভাকরা আমার দেশকে জানান, সন্তানদের শরীর জ্বালাপোড়া করছে, আর সেই যন্ত্রণায় শিশুরা চিৎকার করছে, সারা রাত ঘুমাতে পারছে না। সন্তানদের এই কষ্টের দৃশ্য তাদের সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে। সন্তানদের কষ্ট দেখে অভিভাবকদের কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে যখন বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান আছড়ে পড়ে, তার ৫ থেকে ৭ মিনিট পর সেখানে যান আবুল কালাম আজাদ। মেয়ে মুনতাহা তোয়া সেখানকার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। আবুল কালাম বলেন, ‘তখন ফায়ার সার্ভিসও আসেনি। তবে সেনাবাহিনী উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। সেনাবাহিনীকে টপকে এগিয়ে যাই আমি। গিয়ে দেখি ১০ থেকে ১৫টি লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। সবগুলো ক্ষত-বিক্ষত।’

সেখানে দেড় ঘণ্টার মতো মেয়ের খোঁজ করেন বলে জানান আজাদ। তিনি বলেন, এক পর্যায়ে একজন শিক্ষক ফোন করে জানান, তার মেয়েকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এ কথা শোনার পর তিনি উত্তরা এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালে মেয়ের খোঁজ করতে থাকেন। বিকাল ৫টার দিকে তার এক আত্মীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে তোয়াকে খুঁজে পান। এরপর এখানে ছুটে আসেন তিনি।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, তার মেয়ের দুই হাত ব্যান্ডেজ করা। মুখে ক্রিম লাগানো। মেয়ের সঙ্গে কথাও হয়েছে তার। সে অনেক ভয় পেয়েছে। যে জায়গা থেকে তোয়া ফিরে এসেছে, সে জায়গা থেকে ফিরে আসার কথা নয় বলেও জানান তিনি।

জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, সবচেয়ে বেশি দগ্ধ হয়েছে ১৫ শিশু। এছাড়া ৯ জন নারী ও ১৪ জন পুরুষও বেশ দগ্ধ হয়েছেন। ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান গতকাল বিকেলে বলেন, ‘গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত অর্ধ শতাধিক রোগী এসেছে। আমরা খুব ব্যস্ত আছি।’ তিনি আরো জানান, ‘আহতের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। দগ্ধ রোগীদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী ও শিশু। তাদের সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক।’

এদিকে গতকাল বার্ন ইনস্টিটিউটে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। এ সময় তিনি জানান, বার্নে ভর্তি রোগীদের মধ্যে দুজনকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া শঙ্কামুক্ত রয়েছেন আরো ১০ জন। ৩০ জন এখনো ঝুঁকিতে রয়েছেন।