Image description
 

উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স সামিউল আলম। প্রতিদিনের মতো সোমবার জরুরি বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। ঘটনার একদিন পরেও স্বাভাবিক হতে পারছেন না সামিউল। চোখের সামনে ভাসছে ছোট্ট সোনামনিদের ঝলসে যাওয়া দেহ।

মঙ্গলবার কথা বলার সময় সামিউলের কণ্ঠ ধরে যায়। কথা বলতে বলতে পানি খেয়ে তিনি বলেন, প্রথমে এলো ৭-৮ বছরের এক মেয়েশিশু। সঙ্গে তার ভাই, সেও ছোট। মেয়েটার শরীরের চামড়া ঝুলছিল, কাপড় পুড়ে গেছে। জিজ্ঞেস করতেই মেয়েটির ভাই বলল, বোমা মারছে।

 
 

শিশু দু’জনের সঙ্গে অভিভাবক নেই; শিক্ষকও নেই। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক বড় ভাই দু’জনকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে গেছে। ৫-৭ মিনিট পরে একের পর এক আসতে থাকে ঝলসে যাওয়া শিক্ষার্থী।

সামিউল বলেন, ‘আমরা হঠাৎ একটা শব্দ শুনি– মৌচাকে ঢিল মারলে যেমন গুঞ্জন, তেমন আর কি! দেখি একের পর এক দগ্ধ রোগী ঢুকছে জরুরি বিভাগে। কাউকে কাঁধে, কাউকে ট্রলিতে চাপিয়ে আনা হচ্ছে। ছোট ছোট শিশু, পা পর্যন্ত পুড়ে কালো হয়ে গেছে। কারও মুখে চামড়া নেই; কারও পিঠ গলে গেছে। কারও শরীর থেকে চামড়া খুলে খুলে পড়ছে। চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। নিজেই কেঁদেছি আর পোড়া শরীরে পানি ঢেলেছি।’ 

সিনিয়র নার্স সামিউল আলম জানান, তারা ১০-১৫ জন স্টাফ ছিলেন। কেউ কলের পানি দিচ্ছে পোড়া শরীরে, কেউ স্যালাইন দিচ্ছে, কেউ মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে ব্যথায় কাতর শিশুগুলোর আর্তনাদ থামাতে। জরুরি বিভাগের ফ্লোরে পানি জমে গোড়ালি সমান হয়ে গিয়েছিল। তার মধ্যে পড়েছিল দগ্ধ শিশুরা।

এক তরুণীর কথা বলতে গিয়ে থমকে যান সামিউল। ইসিজি রুমের সামনে ট্রলিতে শোয়ানো তাঁর মুখে একটিই প্রশ্ন, ‘আমি বাঁচব তো?’ সামিউল বলেন, ‘আমরা জানতাম তিনি আর ফিরবেন না। কারণ ৪০-৫০ শতাংশ দগ্ধ হলে চিকিৎসা সম্ভব। তার তো শরীরের ৭০-৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘শুধু ওই তরুণী নয়, যারা এসেছিল, প্রত্যেকেরই শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। আমাদের এখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে অন্তত সাতজন মারা গেছে।’

সামিউল আলম পেশাগত জীবনে অনেক কিছু দেখেছেন। গত বছরের জুলাই আন্দোলনের সময়ও দগ্ধ এবং গুলিবিদ্ধ মানুষের চিকিৎসা দিয়েছেন। কিন্তু এবারের অভিজ্ঞতা তাঁকে একেবারে ভেঙে দিয়েছে ভেতর থেকে। তিনি বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের সময়েও এতটা ভেঙে পড়িনি। সেখানে বেশির ভাগই ছিলেন প্রাপ্ত বয়স্ক। কিন্তু সোমবার যারা এসেছে, সবাই কোমলমতি, নিজের সন্তানের বয়সী। আমি জানি না, এসব দৃশ্য কীভাবে ভুলে যাব?’

সামিউল বলেন, ‘আমরা সবাই চেষ্টা করেছি। কিন্তু মনে হয়, খুব বেশি কিছু করতে পারিনি। এসব শিশুদের মায়ের কথা ভেবে আরও কষ্ট হচ্ছে।’

গতকাল সোমবার দুপুরে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বলেছে, রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত মোট ৩১ জন নিহত ও ১৬৫ জন আহত হয়েছেন।