
১৯৮০’র দশকে বাংলাদেশ এফ-৭ এমবি যুদ্ধবিমান দিয়ে চীনের তৈরি এফ-৭ সিরিজ ব্যবহার শুরু করে। এরপর ২০০৬–২০০৮ সালে আরও আধুনিক এফ-৭বিজি যুক্ত হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও উন্নত প্রযুক্তি ও মাল্টি-রোল সক্ষমতা চাহিদা পূরণে আসে এফ-৭বিজিআই।
২০১১ সালে চীনের চেংডু এয়ারক্রাফট ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপের সঙ্গে এফ-৭ বিজিআই সরবরাহের চুক্তি হয়। ২০১৩ সালের মধ্যে সবগুলো বিমান বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়। তারমধ্যে একটি বিমান সোমবার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্ত হলো। যাতে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তবে বিমানটি প্রশিক্ষণ ছিল না। বিমানটি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধ বিমান। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআর থেকে পাঠানো খুদে বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
এফ-৭ বিজিআই (F-7 BGI) একটি মাল্টি-রোল যুদ্ধবিমান অর্থাৎ এটি একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনে সামরিক কার্যক্রমে দক্ষ বা বহুমুখী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। এই বিমান চীনের চেংডু এয়ারক্র্যাফ্ট করপোরেশনের তৈরি।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী এটি বিশেষভাবে একটি ব্যয়সাশ্রয়ী মাল্টি-রোল যুদ্ধবিমান হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছে। চেংডুর তৈরি এফ সিরিজের বিমানগুলোর মধ্যে এটিকে সবচেয়ে উন্নত সংস্করণ বলে গণ্য করা হয়।
এফ-/৭ বিজি-তে, জে-৭ জি বিমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করেই তৈরি করা F-7 BGI (I বলতে বুঝানো হয় Improved বা উন্নত)।
এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমানের প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য
ইঞ্জিন: এটি একটি ইঞ্জিন বিশিষ্ট বিমান। এতে ডব্লিউপি-১৩এফ (WP-13F) আফটারবার্নিং টার্বোজেট ইঞ্জিন রয়েছে
সর্বোচ্চ গতি: এটি মাক ২.২ (Mach 2.2) বা ঘণ্টায় প্রায় ২,৪৭০ কি.মি. গতিতে উড়তে সক্ষম।
রেঞ্জ: এর ফেরি রেঞ্জ (ফেরত যাওয়ার ক্ষমতাসহ) প্রায় ২,০০০ কি.মি.।
এটি এয়ার-টু-এয়ার মিশন চালাতে পারে। আবার লেজার গাইডেড বোমা বা রকেট দিয়ে স্থল টার্গেটেও আঘাত করতে পারে।
অস্ত্র: এফ-৭ বিজিআই বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র বহন করতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে- পিএল-৫, পিএল-৯ ইনফ্রারেড গাইডেড মিসাইল। ৩০ মিমি কামান। ফ্রি-ফল বোমা। রকেট পড। এটি লেজার গাইডেড বোমা (যেমন: Mk 81, Mk 82-এর জন্য TEBER গাইডেন্স কিট), জিপিএস গাইডেড বোমা এবং ৩০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত সাসপেন্ডেড আরমামেন্ট বহন করতে পারে।
রাডার: এতে কেএলজে-৬এফ (KLJ-6F) পালস ডপলার রাডার ব্যবহার করা হয়, যা ৮০ কিমি+ রেঞ্জ কাভার করে।
ককপিট: এর ককপিট আধুনিক ‘গ্লাস ককপিট’; যেখানে মাল্টিফাংশন ডিসপ্লে এবং হ্যান্ডস অন থ্রটল অ্যান্ড স্টিক সিস্টেম রয়েছে।
সীমিত বিয়ন্ড ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ (BVR) যুদ্ধক্ষমতা: আধুনিক যুদ্ধবিমানগুলোর তুলনায় এর বিয়ন্ড ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ যুদ্ধক্ষমতা সীমিত।
বলা হয়ে থাকে, এটি অধিকাংশ মিগ-২১ এবং অনেক সমসাময়িক যুদ্ধবিমানের তুলনায় বেশি ম্যানুভারেবল।
এফ-৭ বিজিআই-এর সীমাবদ্ধতা
দৃষ্টিসীমার বাইরে আঘাত হানতে সক্ষম (Beyond Visual Range) ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে না। শুধু স্বল্প-পাল্লার ইনফ্রারেড গাইডেড মিসাইল (PL-5, PL-7, সম্ভবত PL-9) বহন করতে পারে। ফলে, শত্রু বিমানকে দূর থেকে ধ্বংস করার সক্ষমতা নেই।
এটি পুরনো নকশা ভিত্তিক বিমান। মিগ-২১ এর ১৯৫০–৬০-এর দশকের ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। যদিও আধুনিকায়িত (ডাবল ডেল্টা উইং) তবুও এটির এরোডাইনামিক পারফরম্যান্স আধুনিক চতুর্থ প্রজন্মের জেটের তুলনায় পিছিয়ে।
এটি সর্বোচ্চ ৩,০০০ পাউন্ড পর্যন্ত বোমা/রকেট বহন করতে পারে, যা আধুনিক অনেক যুদ্ধবিমান যেমন জেএফ-১৭ থান্ডার এবং রাফায়েলের তুলনায় অনেক কম, যারা ৬,০০০–৯,০০০ পাউন্ড পর্যন্ত অস্ত্র বহন করতে পারে।
এর কেএলজে-৬এফ রাডার ভালো হলেও, আধুনিক এইএসএ রাডার বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-সহ সেন্সর সিস্টেমের চেয়ে পিছিয়ে।
ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার, জ্যামিং বা সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্সের দিক থেকে দুর্বল।
একমাত্র ইঞ্জিনের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় যান্ত্রিক ত্রুটির সময় বিকল্প ইঞ্জিন না থাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ঢাকাটাইমস