
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে পারিবারিক বিরোধের জেরে ছেলের হাতে বাবা খনু হয়েছেন বলে অভিযাগ উঠেছে। শুক্রবার (১৮ জুলাই) উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভায় পূর্ব-ফরহাদাবাদ গ্রামে বাড়ির পাশে পুকুর থেকে বাবা মো. এনামের (৬২) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এই লোমহর্ষক ঘটনায় অভিযুক্ত ছেলে মো. মোবারক হোসেন, নিহতের স্ত্রী, কন্যা ও শ্যালককে আটক করেছে পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নিহত এনাম দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। সে কারণে সন্তানরা তার যত্ন-আত্মি নিতেন না। বৃহস্পতিবার এনাম তার একমাত্র মেয়ের শ্বাশুর বাড়ি চলে গেলে ছেলে মোবারক ও তার মা রাত আড়াইটার দিকে গ্রামের বাড়িতে রেখে তারা নাজিরহাটের বাসায় চলে যান। শুক্রবার সকালে পুনরায় বাড়িতে গিয়ে বাবা এনাম নিখোঁজ হওয়ার গুঞ্জন তোলেন ছেলে মোবারক। অনেক খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে তার লাশ পার্শ্ববর্তী পুকুরে ভাসতে দেখে লোকজন পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে শুক্রবার বিকেলে লাশ উদ্ধার করে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, রাতে বৃদ্ধ এনামকে মারধর করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পুকুরে ফেলে দিতে পারেন। কিন্তু সকাল থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে ছেলে মোবারক পাড়ার লোকদের হুমকি দেন। মোবারকের দাবি, প্রতিবেশীরা তার বাবাকে মেরেছে। প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে মামলা করবে বলে ধমকাতে থাকেন তিনি।
এক পর্যায়ে প্রতিবেশীরা বিষয়টি আঁচ করতে পেরে মোবারককে আটক করেন এবং পুলিশে খবর দেন। তবে পুলিশ জানিয়েছেন, ‘পারিবারিক কলহে বাবা-ছেলে-পরিবারের প্রায়ই বাগবিতণ্ডা হতো। এছাড়া প্রতিবেশিদের সাথেও তাদের দীর্ঘদিনের বিরোধ। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের পরিবারের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরেই এমন ঘটনা ঘটেছে বলে লোকজন মত দেন। তবে আসল ঘটনা জানতে আমরা কাজ করছি।’
প্রতিবেশী মো. জলিল বলেন, ‘বৃদ্ধ এনাম ভালো এবং কর্মঠ, পরিশ্রমী মানুষ ছিলেন। নানান অভাব-অনটনের মধ্যেও সন্তানদের মানুষ করার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু তার শেষ পরিণতি মোটেই কাম্য হয়নি।’ মো. শাহ জালাল নামে আরেক প্রতিবেশী বলেন, ‘বিশ্বাস করতে পারছি না, সেই ছেলে-পরিবারের হাতেই খুন হতে হলো বৃদ্ধ বাবাকে। সন্তানদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু এখন সেই পরিবার-সন্তানই হয়ে উঠল তার মৃত্যুর কারণ।’
ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা এখনো ঘটনাস্থলে। ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত ছেলে মোবারককে এলাকাবাসীর সহায়তায় আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে নিহতের স্ত্রী, কন্যা ও নিহতের শ্যালককে। এনামের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।’