Image description

বাজারে চালের সরবরাহ স্বাভাবিক এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা পর্যায়ে বিশেষ টাস্কফোর্সের অভিযান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নিয়মিত অভিযান, আমদানির অনুমোদন, কিছু পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়াসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না চালের বাজার। বোরো মৌসুমের শুরুতে চালের দাম যতটুকু কমেছিল তার চেয়েও বেশি বেড়েছে গত দেড় মাসে। চালের উচ্চদামে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে।

গতকাল বুধবার কারওয়ান বাজারের পাইকারি বাজারের জনতা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আবু ওসমান বলেন, নতুন করে না বাড়লেও আগের বাড়তি দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে। দাম কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। মিলমালিকরা বলছেন বাজারে ধানের দাম বেশি তাই চালের দামও বাড়ছে।

তিনি আরো বলেন, বিদেশ থেকে চাল আমদানি না করা পর্যন্ত বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে না। ফলে সরকারের উচিত বেশি করে চাল আমদানি করা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বোরো মৌসুমে দেশে দুই কোটি টনের বেশি চাল উৎপাদিত হয়, যা সারা বছরের মোট উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি। বোরোর ভরা মৌসুমে সাধারণত চালের দাম অনেকটাই কমে যায়। এবারও কিছুটা কমেছে। তবে কয়েকদিন কমার পর তা আবার বেড়ে যায়। গত দেড় মাসে কেজিপ্রতি ১০ টাকা পর্যন্ত চালের দাম বেড়েছে।

টিসিবির গতকালের বাজার দর অনুযায়ী, গত এক মাসে কেজিপ্রতি মোটা চালের (স্বর্ণা-ইরি) দাম ৯.৫২ টাকা বেড়ে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, মাঝারি চাল (পাইজাম-আটাশ) ৮.৩৩ টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা এবং সরু চাল (নাজির-মিনিকেট) ৬.৬৭ টাকা বেড়ে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

তবে জনতা রাইস এজেন্সির আবু ওসমান বলেন, মোটা চাল ৫২-৫৫ টাকা, মাঝারি চাল ৫৮-৬০ টাকা এবং সরু চাল ৭৫-৭৬ টাকা মিলগেট থেকেই আমাদের কিনতে হচ্ছে। এরপর আবার বস্তাপ্রতি ৮০ টাকা গাড়ি ভাড়া যোগ করতে হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন করপোরেট কোম্পানিগুলোর ব্র্যান্ড অনুসারে সরু চাল আরো বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা রোজিনা আক্তার বলেন, বোরো মৌসুমেও চালের দাম বাড়লে কমবে কখন? উচ্চদামে চাল কিনতে হচ্ছে। গত দেড় মাসে দফায় দফায় চালের দাম বেড়েছে। শুধু চালের দাম নয়, কাঁচা তরিতরকারিসহ সব জিনিসপত্রের দামই তো চড়া। এতে আমাদের সংসারের ব্যয় বাড়লেও আয় বাড়েনি।

হঠাৎ চালসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকারও অনেকটাই চাপের মুখে রয়েছে। এজন্য বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৩ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে সরকারিভাবে আট লাখ ৩৫ হাজার টন ও বেসরকারিভাবে চার লাখ ৭০ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। একই সময়ে ৬২ লাখ টন গমও আমদানি হয়েছে।

গত মঙ্গলবার খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, মজুতে কিছুটা ঘাটতি থাকায় নতুন করে চার লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চলতি বছরে ৫৫ লাখ পরিবারকে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া হবে ছয় মাস। গতবার পেয়েছে ৫০ লাখ পরিবার। নিম্নবিত্ত পরিবারের মধ্যে আগস্ট থেকে নভেম্বর এবং ফেব্রুয়ারি ও মার্চে এই চাল বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

অন্যদিকে মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশে ধান, চাল, গমসহ খাদ্য মজুত সন্তোষজনক। আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমেছে, প্রয়োজনে কেনা হবে।