
গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণ হতে না হতেই আবারও রক্তাক্ত হলো রাজপথ। এক বছর আগে ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন আবু সাঈদ।
সংঘবদ্ধ হয়ে এই কর্মসূচিতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রমাণ করলেন, ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিয়ে বরং ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তির পথেই হাঁটছেন তারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলেও তারা মূলত ছিল সুযোগের অপেক্ষায়। সুযোগ পেয়েই প্রকাশ্যে সংঘর্ষে নেমেছে দলটির সমর্থকরা। এনসিপির ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে দফায় দফায় হামলা চালিয়ে রাজনৈতিক পরিবেশকে ফের উত্তপ্ত করে তুলে তারা বুঝিয়ে দিলো- দীর্ঘ দেড় দশক ফ্যাসিবাদ কায়েম করে গুম, খুন, গণহত্যা চালানোর পরও তাদের মূলত কোনো অনুশোচনা নেই। বরং অভ্যুত্থানকারীদের প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসা আওয়ামী লীগের অ্যাক্টিভিস্টদের উসকানিতে গোপালগঞ্জে তাদের ক্যাডারদের নজিরবিহীন সহিংসতায় স্পষ্ট যে, তারা প্রতিহিংসাতেই জ্বলছেন, সুযোগ পেলে এই প্রতিহিংসার আগুনে পোড়াবেন অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির সবাইকে।
অন্যদিকে, কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার পরও কীভাবে তারা এত বিস্তৃত আকারে সহিংসতা চালাতে পারলো? পূর্বঘোষিত এই রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ কোনো ব্যবস্থা ছিল না কেন? রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও হামলার কোনো তথ্য কেন পৌঁছায়নি, অথবা গোপালগঞ্জে কর্মসূচি পালনে এনসিপিরই বা কতটুকু আগাম প্রস্তুতি ছিল?—এসব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। উত্তর খোঁজা হচ্ছে, ফ্যাসিস্ট পতনের পরও আবার কেন রাজপথে রক্ত ঝরবে? কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে কারও প্রাণ যাবে? যেকোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডই অপ্রত্যাশিত, তার পরিচয় যা-ই হোক না কেন—এমনটাই মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই ঘটনায় কোনোভাবে দায় এড়াতে পারে না সরকার, এ অভিমত দিচ্ছেন তারা।
বুধবার এনসিপি নেতারা গাড়িবহর নিয়ে গোপালগঞ্জ শহরে ঢোকার আগেই পুলিশের গাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটায় আওয়ামী লীগ। পরে ইউএনওর গাড়িতেও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ, যুবলীগের ক্যাডাররা হামলা ও ভাঙচুর করে। দুপুরে একযোগে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের লোকেরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্ক এলাকায় স্থাপিত এনসিপির সমাবেশ মঞ্চে হামলা চালায়। সেখানে তারা ককটেল বিস্ফোরণ, মঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করে।
এই অবস্থার মধ্যেই সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন এনসিপি নেতারা। কিন্তু তারা গাড়িতে উঠে সমাবেশস্থল ত্যাগ করে ফিরে আসার পথে এনসিপির নেতা-কর্মীদের গাড়িবহরে হামলা করে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডাররা। ভাঙচুর করা হয় গাড়ি। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে তাদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে জড়ায় হামলাকারীরা। তখন গোপালগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এনসিপির নেতারা সেসময় পুলিশ সুপারের (এনসিপি) কার্যালয়ে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়। মাঠে নামে সেনাবাহিনী। এনসিপির নেতারা কয়েক ঘণ্টা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকার পর সেনাবাহিনীর এপিসিতে করে গোপালগঞ্জ ছাড়েন। পরিস্থিতি সামলাতে বিকেলে গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় ৪ প্লাটুন বিজিবি।
বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সংঘর্ষ ও সহিংসতায় অন্তত চারজন নিহত হওয়ার খবর এসেছে। ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
গোপালগঞ্জের এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার তাৎক্ষণিকভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে এনসিপির কর্মীরা। পরবর্তীতে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের আহ্বানে ব্লকেড কর্মসূচি বাতিল করা হয়। রাতে খুলনায় পৌঁছে এনসিপির শীর্ষ নেতারা সংবাদ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সারাদেশে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেন। এ সময় দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আলটিমেটাম দেন সরকারকে।
এনসিপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের হামলার এই ঘটনায় অনেকের মনেই এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- গোপালগঞ্জ কি তবে বাংলাদেশের বাইরের কোনো অংশ? তবে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওই স্থানটি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান, এ কথা ভুলে গেলে চলবে না। বিগত সাড়ে পনেরো বছর ওই এলাকার মানুষ সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছে।
বাংলাদেশের এমন কোনো সেক্টর নেই, যেখানে গোপালগঞ্জের মানুষের আধিপত্য ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকার পতনে, স্বভাবতই তাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার ঘটেছে। তাছাড়া, ৫ আগস্টের পর দেশের অন্য কোথাও আওয়ামী লীগ বা তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা নিরাপদ আশ্রয়ে না থাকলেও বুধবারের ঘটনায় প্রমাণ হয়ে যায়, একটা বিশাল আওয়ামী সমর্থিত গোষ্ঠী গোপালগঞ্জে নিরাপদে অবস্থান করছে।
এমন এক স্থানে ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’ স্লোগান উঠলে প্রতিক্রিয়াটা কেবল রাজনৈতিক না হয়ে, প্রতিশোধপরায়ণও হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এছাড়া, আওয়ামী লীগের আক্রমণ যতটা আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে, ততটাই তীব্রভাবে উঠে এসেছে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা। এই কর্মসূচি ঘিরে আগে থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হামলার হুমকি ছিল, কিন্তু তাতেও কেন আগাম কোনো নিরাপত্তা নেয়নি প্রশাসন?
এনসিপির কর্মসূচিতে এই হামলার পরপরই বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণঅধিকার পরিষদসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল কড়া ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে। কিছু রাজনৈতিক দল তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিলও করেছে। হামলার পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আওয়ামী দোসররা মরণকামড় দিয়েছে। অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে তারা আবারও ফায়দা তুলতে চায়। ’
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘গোপালগঞ্জ বাংলাদেশের বাইরের কোনো জেলা নয়। প্রশাসনের নির্লিপ্ততা এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আক্রমণ দুটিই ছিল রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। ’ ফ্যাসিস্ট লীগের প্রশ্নে আর কোনো ছাড় নয়- বলে মন্তব্য করেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।
তবে একই সঙ্গে রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং দায়িত্বশীলতার প্রশ্নও উত্থাপন করেছেন কেউ কেউ। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক এই হামলা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এনসিপি নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘গোপালগঞ্জে বক্তৃতার ভাষা আরও সংযত হওয়া উচিত ছিল। এই অঞ্চলের সংবেদনশীলতা মাথায় রেখে চলাই ছিল বুদ্ধিমানের কাজ। ’
অনেকে বলছেন, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই নানা ছদ্মবেশে রাজনীতিতে ফেরার পথ খুঁজছিল আওয়ামী লীগ। ‘শেখ হাসিনার বিকল্প নেই’, ‘দেশে বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী অভ্যুত্থানপন্থীরা’ কিংবা ‘দেশকে দিশাহীন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন নানা ধরনের ন্যারেটিভ বা বয়ান প্রচার করে তারা সুযোগ খুঁজছিল রাজপথে ফের শক্তি প্রদর্শনের।
অভ্যুত্থানপন্থীদের বিভেদ সুযোগ দিচ্ছে ফ্যাসিবাদীদের!
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সুযোগ তৈরির দায় কিছুটা অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর ওপরও বর্তায়। গত এক বছরে অভ্যুত্থানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ ও মতপার্থক্য বাড়তে দেখা গেছে। বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে নির্বাচন ইস্যু ও অতি সম্প্রতি মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড কেন্দ্র করে নানা ইস্যুতে যে মনোমালিন্য, পারস্পরিক দোষারোপ এবং প্রকাশ্যে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়াতে দেখা গেছে; এতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠী, যাদের পতনের জন্যই মানুষ রক্ত দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ভালো করেই জানে- অভ্যুত্থানের পক্ষের ঐক্য ভাঙলেই তাদের ফিরে আসার পথ সহজ হবে। গোপালগঞ্জের হামলা সেই ফিরতি পদক্ষেপেরই প্রাথমিক মহড়া বলেই মনে করছেন অনেকে।
ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে পারে এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে বিএনপির পক্ষ থেকে শুরু থেকেই আহ্বান জানানো হচ্ছিল। ৫ আগস্টের পর থেকেই দলের অভ্যন্তরে এবং অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং শীর্ষ নেতারা এই আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
গত নভেম্বর মাসে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘আমরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন কতগুলো কাজ করছি, যেগুলোর মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের ফিরে আসার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময় এখন। ’
অন্যদিকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বারবারই দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলছেন, ‘সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জনগণের আস্থা নষ্ট হয় এমন কোন কাজ করা যাবে না। মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে দলের নেতাকর্মীদের এক থাকতে হবে। ’
গোপালগঞ্জের এই ঘটনার পর দেশে ক্রমশ জটিল হয়ে ওঠা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, একের পর এক হত্যাকাণ্ড ও সহিংস ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। রাজধানী থেকে গ্রামাঞ্চল- কোথাও নেই জনগণের নিরাপত্তা। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের সক্ষমতা ও কার্যকারিতা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতীয় নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় সরকারকে কার্যকর ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হয়। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সে সক্ষমতা দেখাতে পারছে না। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, পুলিশের নির্লিপ্ততা এবং রাজনৈতিক সংঘাতের বেড়ে চলা প্রবণতা দেশের জনগণকে উৎকণ্ঠায় রেখেছে।
এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। একদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়ন্ত্রণহীনতা, অন্যদিকে আবারও আওয়ামী লীগের সহিংস উপস্থিতি- সব মিলিয়ে ঘোলা পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা। বিশেষত নির্বাচন সামনে রেখে যদি এ ধরনের সহিংসতা বাড়ে, তাহলে অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
‘রক্তক্ষয়ী ঘটনা যেন নির্বাচন পেছানোর অজুহাত না হয়’
এই আশঙ্কা প্রকাশ করে সাংবাদিক, শিক্ষক ও কলামিস্ট আনিস আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই রক্তক্ষয়ী ঘটনা যেন আগামী নির্বাচনের তারিখ পেছানোর কোনো অজুহাত না হয়ে দাঁড়ায়। জাতি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার দেখতে চায়, সেটি যেই দলেরই হোক না কেন। ’
এনসিপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি ছত্রছায়ায় টেকসই রাজনীতি হয় না। আর রাজনীতি যদি প্রতিশোধের মাধ্যম হয়, তবে শান্তি কখনোই প্রতিষ্ঠিত হবে না, বরং রাজনীতি হতে হবে সহনশীলতার সর্বোচ্চ অনুশীলন। ’
‘রাজনৈতিক কর্মসূচিতে হামলা নিন্দাজনক’
যেকোনো জায়গায় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করার অধিকার সবার আছে জানিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাজনৈতিক কর্মসূচি তো করার অধিকার আছে সবার, যেকোনো জায়গাতেই। সেখানে হামলা করার ঘটনা নিন্দাজনক। আবার চারজন নিহত হয়েছে শুনতে পারছি। এটা নিয়ে এখন রাজনীতি হবে। ’
গত বছর ১৬ জুলাই আবু সাঈদ নিহত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘একই দিনে আবার এমন ঘটনা ঘটলো। আমি সন্দেহ করি, এখানে কোনো তৃতীয় পক্ষের উস্কানি থাকতে পারে। ’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি মনে করছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো এখন আগের মতো কার্যকর না। ’ নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে আরও কত ঘটনা ঘটে আমি শঙ্কিত। ’
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর পারস্পরিক অবিশ্বাস আর বিভেদের রেশ ধরেই আবার আওয়ামী ফ্যাসিবাদ আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। এই বিভেদ যত গভীর হবে, ততই ফিরে আসার পথ প্রশস্ত হবে আওয়ামী লীগের মতো পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির জন্য। কিন্তু একথা ভুলে গেলে চলবে না, যে অগণতান্ত্রিক দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে, যে নিরস্ত্র মানুষের রক্ত গড়িয়ে গণঅভ্যুত্থানের পথ প্রশস্ত হয়েছে, সেই ত্যাগকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।
এই পরিস্থিতিতে সব গণতান্ত্রিক ও অভ্যুত্থানপন্থী শক্তির ঐক্যবদ্ধ অবস্থান প্রয়োজন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের ভাষ্যে, বিভেদ নয়, ঐক্যই হবে উত্তরণের পথ। গোপালগঞ্জের ঘটনাই সতর্কবার্তা হয়ে উঠুক, আবার যেন ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসে, আর কোনো মানুষ নিহত না হোক, আর কোনো রণক্ষেত্র তৈরি না হোক।